দেশে আগের চেয়ে বেশি পরিমাণে ফল খাচ্ছে মানুষ। মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ৩০ গ্রাম বেড়েছে। বর্তমানে মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ৮৫ গ্রাম বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
জাতীয় ফল মেলা-২০২২ উপলক্ষে সচিবালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ তথ্য জানান।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘২০০৬ সালে মাথাপিছু ফল খাওয়ার হার ছিল ৫৫ গ্রাম, যা বেড়ে এখন হয়েছে ৮৫ গ্রাম।
‘২০০৮-০৯ সালে দেশে ফলের উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি টন, আর বর্তমানে ফলের উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ২২ লাখ টন। বিগত ১২ বছরে ফলের উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২২ শতাংশ। এর ফলে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু দানাজাতীয় শস্য গ্রহণের পরিমাণ কমেছে এবং মাথাপিছু ফল খাওয়ার পরিমাণ বেড়েছে।’
সার্বিকভাবে দেশের মানুষের মধ্যে ফল খাওয়ার হার বৃদ্ধি পেলেও এখনও তা দৈনন্দিন যে পরিমাণ খাওয়া উচিত তার থেকে কম। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ফলের চাহিদা ২০০ গ্রাম।
এ চাহিদা পূরণ করতে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশসম্মত নিরাপদ ফল উৎপাদনেও গুরুত্বারোপ করেন কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমাদের বিজ্ঞানীরা দেশে চাষ উপযোগী ৩০টি বিভিন্ন প্রজাতির ফলের ৬৫টি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন।
‘দেশীয় ফলের সঙ্গে স্ট্রবেরি, রাম্বুটান, ড্রাগন ফল, অ্যাভোকাডো প্রভৃতি বিদেশি ফলের চাষে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দেশের পাহাড়ি অঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের অনেক জায়গায় কাজুবাদাম ও কফি চাষের সম্প্রসারণ হচ্ছে।’
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ফল উৎপাদনে বিশ্বে সফলতার উদাহরণ হয়ে উঠেছে। এ মুহূর্তে বিশ্বে ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির সর্বোচ্চ হারের রেকর্ড বাংলাদেশের, বছরে সাড়ে ১১ শতাংশ হারে ফল উৎপাদন বাড়ছে। কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, আমে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, পেঁপেতে ১৪তম স্থানে আছে বাংলাদেশ।
‘আর মৌসুমি ফল উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে বাংলাদেশ। নিত্যনতুন ফল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ সফলতা পেয়েছে। ২০ বছর আগে আম আর কাঁঠাল ছিল এই দেশের প্রধান ফল। এখন বাংলাদেশে ৭২ প্রজাতির ফলের চাষ হচ্ছে, যা আগে হতো ৫৬ প্রজাতির।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার এখন সব মানুষের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে ফল ও ফলদ বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ফলের উৎপাদন যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি নিরাপদ ফল চাষে গুরুত্ব দিতে হবে।
‘একই সঙ্গে ফলমূলকে পচনের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সংগ্রহত্তোর ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াজাত সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। এসব বিষয়ে ফলের উৎপাদনকারী বা চাষি, পরিবহনকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, ভোক্তাসহ সবার সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন। এ লক্ষ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয় জাতীয় ফল মেলার আয়োজন করে।’
কৃষিমন্ত্রী জানান, আগামী ১৬ জুন রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে শুরু হচ্ছে জাতীয় ফল মেলা। মেলা চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। মেলার এ বছরের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে- বছরব্যাপী ফল চাষে অর্থ পুষ্টি দুই-ই আসে। মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।