বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যৌন জীবনে প্রভাব ফেলছে জলবায়ু

  •    
  • ২ জুন, ২০২২ ২০:২২

জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বেগ জনগণের সম্পর্ক এবং যৌন জীবনকে প্রভাবিত করছে। কেউ কেউ সন্তানধারণের পরিবেশগত খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন; অন্যরা কনডম দিয়ে সমুদ্রকে দূষিত করার জন্য দোষী বোধ করেন।

পৃথিবী যত উত্তপ্ত হচ্ছে, ততই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বিছানা। পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ মানুষের খাদ্য, কেনাকাটা বা ভ্রমণকে যেমন প্রভাবিত করছে, তেমনি তা প্রভাব ফেলছে তার রোমান্টিক এবং যৌন সম্পর্কেও

যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৯ সালে চালানো একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের প্রায় ৩৮ শতাংশ বিশ্বাস করেন, সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া উচিত।

আগের বছর অন্য একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ২০ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারী-পুরুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তাদের কম সন্তান নেয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছেন।

সেক্স থেরাপি অ্যাপ ব্লুহার্টের লরা ভোয়েলস বলছেন, ‘আমার বেশ কিছু ক্লায়েন্ট আছে, যাদের জন্য পরিবেশগত উদ্বেগ একটি সমস্যা। এটি তাদের সম্পর্কের বিভিন্ন দিককে প্রভাবিত করেছে।

‘বিশেষ করে তারা কার সঙ্গে ডেট করবে (সেই ব্যক্তি কি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন?), তারা কোথায় ডেটিং করবে (রেস্তোরাঁটি কি টেকসই উপাদান ব্যবহার করে?), কীভাবে তারা সঙ্গম করে (সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব গর্ভনিরোধক কোনটা?) এবং কীভাবে তাদের সন্তান হবে (তাদের কি দত্তক নেয়া উচিত?) এসব বিষয়ে দারুণ প্রভাব ফেলে পরিবেশ নিয়ে এই উদ্বেগ।’

ফিলিপাইনের ম্যানিলার বাসিন্দা ক্যারি নাকপিলের বয়স ২৬। তিনি সাসটেইনিবিলিটি এবং পরিবেশবিষয়ক একটি পডকাস্ট চালান। এই উদ্বেগগুলো ভীষণভাবে তিনি অনুভব করেন।

নাকপিল সন্তান নিতে চান। পাশাপাশি বিশ্বকে জলবায়ু সংকট থেকে রক্ষা করতেও চান। যদিও তিনি জানেন, এই দুটো একসঙ্গে পাওয়া কঠিন।

একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, উন্নত কোনো দেশে একটি সন্তান নেয়া মানেই বছরে প্রায় ৫৮.৬ টন অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপাদন। পুনরুৎপাদনের চেয়ে পৃথিবীর নবায়নযোগ্য সম্পদের বেশির ভাগই মানুষ ইতোমধ্যে ব্যবহার করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি কেবল এই ব্যয়কে আরও বাড়াবে

লরা ভোয়েলস বলছেন, ‘পরিবেশগত প্রভাবের কারণে বা তাদের সন্তানরা জলবায়ু সংকটের প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে অনেকে সন্তান না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। গর্ভবতী হয়ে পড়ার চিন্তায় দম্পতিরা ভীত থাকেন। আর এ উদ্বেগের কারণে তারা সঙ্গমের মুহূর্তকে পুরোপুরি উপভোগ করতে পারছেন না।’

বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের মাত্রা বাড়ানোর চেয়ে অনেকেই ভিন্ন পন্থার সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। তবে ভোয়েলস বলছেন, কারও কারও জন্য কনট্রাসেপটিভ বা গর্ভনিরোধকগুলো পরিবেশ উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ১০ বিলিয়ন ল্যাটেক্স কনডম উৎপাদন হয়। ব্যবহারের পর যেগুলোর বেশির ভাগই ফেলে দেয়া হয় বিভিন্ন স্থানে। এই কনডম পুনর্ব্যবহার করা যায় না। কিছু প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব কনডম উৎপাদনের দাবি করলেও সেগুলো সচরাচর পাওয়া যায় না।

কনডমের বিকল্প অন্যান্য গর্ভনিরোধক পদ্ধতি যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও ভ্যাসেকটমি রয়েছে। তবে এগুলো সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে না। তাই কেবল ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে’ থাকা দম্পতিদের জন্য এগুলো ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে (বহুগামী) এটা সেরা বিকল্প নাও হতে পারে।

ভোয়েলস তাই জোর গলায় বলেছেন, ‘কনডম ব্যবহারের অপরাধবোধ এড়াতে মানুষের যৌন স্বাস্থ্যের ঝুঁকি নেয়া একেবারেই উচিত নয়।

‘ধরুন আপনি পরিবেশবান্ধব গর্ভনিরোধক পাচ্ছেন না, কিন্তু জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিবেশবিষয়ক সচেতনতা মেনে চলছেন। তাহলে নিশ্চিত থাকুন, আপনি আপনার সাধ্যের সবটুকুই ইতোমধ্যে করেছেন।

‘এটা খারাপ না, কারণ এর বিকল্প হলো একটি সন্তানধারণ, যা পরিবেশের জন্য একটি কনডমের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর।’

অনেকে কোন ধরনের গর্ভনিরোধক ব্যবহার করবেন সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। এই অনুভূতি যৌনতায় আগ্রহ কমিয়ে দেয়ার অন্যতম কারণ।

ভোয়েলস বলেন, ‘আপনি যদি উদ্বিগ্ন থাকেন তবে অন্য কিছুতে মনোযোগ দেয়া খুব কঠিন। আপনার উদ্বেগের শারীরিক লক্ষণগুলো যদি অনুভব করেন, তবে যৌন অভিজ্ঞতা উপভোগ করা বা যৌনতা নিয়ে চিন্তা করার অবস্থায় থাকবেন না আপনি।’

এমন কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে যৌনতা একটি চমৎকার স্ট্রেস রিলিভার এবং উদ্বেগ মোকাবিলার পদ্ধতি। তাদের ক্ষেত্রে ইকো-অ্যাংজাইটি বা পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ যৌনতা বাড়াতে পারে।

ভোয়েলস বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “এ ধারণা ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কে’ থাকাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ‘সত্য’ হতে পারে। তাদের গর্ভবতী হওয়া বা কনডম ব্যবহারের বিষয়ে চিন্তা করতে হয় না।”

তবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্কগুলোও পরিবেশগত উদ্বেগের নাগালের বাইরে নয়। ভোয়েলস বলেন, ‘ইকো-উদ্বেগ আপনার এবং আপনার সঙ্গীর মধ্যে সম্পর্ককেও প্রভাবিত করতে পারে। যদি আপনার মধ্যে একজন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে বেশি মনোযোগী হন আর অন্যজন ততটা নন, তবে তা সম্পর্কের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।’

ফিরে যাই নকপিলের ঘটনায়। তিনি চার বছর ধরে তার ছেলে বন্ধুর সঙ্গে থাকছেন। নকপিল বলেন, ‘দুজন মানুষকে একত্রিত করার বিষয়টি বেশ জটিল। তবে যুগল হিসেবে যখন আপনারা একটি সবুজ ভবিষ্যতের দিকে এগোবেন, তখন বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে।’

এ ধরনের যুগলদের জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন সেক্স থেরাপিস্ট ভোয়েলস। তার পরামর্শ, কোন বিষয়টিকে তারা অগ্রাধিকার দেবে, সে বিষয়ে তাদের খোলামেলা আলোচনা করা উচিত। একে-অপরের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করতে হবে। মতের কিছু অমিল থাকতেই পারে। এগুলোকে মেনে নিতে হবে। তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এ অমিলগুলোকে কীভাবে সহজ করা যায়।

নকপিল জানিয়েছেন, তিনি এবং তার প্রেমিক একটি মধ্যম অবস্থান খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টা এমন না যে আমরা সব সময় সবুজে থাকব। এটা আদর্শবাদী, তবে (আমার বয়ফ্রেন্ড) আমাকে বাস্তববাদী রাখে। এটা চমৎকার যে একটি মধ্যম অবস্থান থেকে চিন্তা করি, যেখান থেকে দুজনের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়ে থাকি।’

নকপিল স্বীকার করেছেন, দৈনন্দিন জীবন এবং সম্পর্কের বাস্তবতার সঙ্গে পরিবেশের যত্নের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হতে পারে, তবে তিনি এটি বজায় রাখতে আগ্রহী।

‘এই মুহূর্তে জানি না কীভাবে (আমার পরিবেশের বিষয়ে চেতনা) বন্ধ করতে হবে বা আমি কি তা সত্যি চাই?’

এ বিভাগের আরো খবর