বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘বিড়ম্বনামুক্ত ঈদযাত্রায় দরকার সুপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ’

  •    
  • ৩১ মে, ২০২২ ০২:০১

ঈদে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৫টি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত নাগরিক পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রতিবেদনে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৫টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে সড়ক খাতে ১২, নৌ খাতে ৭ ও রেলওয়ে খাতে ৬টি সুপারিশ রয়েছে।

ঈদে যাতায়াত নিরাপদ ও বিড়ম্বনামুক্ত করতে হলে সড়ক, নৌ ও রেল- তিনটি গণপরিবহন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার অপরিহার্য। এজন্য শুধু ঈদকেন্দ্রিক পরিকল্পনা নিলে হবে না; বছরব্যাপী সুপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থেকে কারিগরি জ্ঞানহীন কর্মকর্তাদের দিয়ে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করালে কোনোদিনই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না।

রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে সোমবার এক আলোচনা সভায় সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞসহ বিশিষ্টজনেরা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।

ঈদে যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ১৫টি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে গঠিত ২১ সদস্যবিশিষ্ট নাগরিক পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রতিবেদনে গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে ২৫টি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে সড়ক খাতে ১২টি, নৌ খাতে ৭টি ও রেলওয়ে খাতের জন্য ৬টি সুপারিশ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শহীদ মিয়া। আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. রোবায়েত ফেরদৌস, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মীর তারেক আলী, যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোর ভি শিপ্স-এর সাবেক প্রধান নৌ প্রকৌশলী মো. আবদুল হামিদ, নাগরিক পর্যবেক্ষণ কমিটির সদস্য সচিব আমিনুর রসুল বাবুল এবং সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক নিখিল চন্দ্র ভদ্র।

সুপারিশমালাসহ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন নাগরিক পর্যবেক্ষণ কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আশীষ কুমার দে।

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘দেশের কোথাও সুশাসন ও জবাবদিহিতা নেই। সাধারণ নাগরিকদের কল্যাণে রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রযন্ত্র যথাযথ দায়িত্ব পালন করছে না। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতায় যাওয়া ও ক্ষমতায় টিকে থাকার লড়াই চলে।

‘সড়ক দুর্ঘটনায় বছরে ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও তা নিয়ে রাজনীতিবিদদের মাথাব্যথা নেই। এসব কারণে সড়ক, নৌ ও রেল তথা সমগ্র গণপরিবহন খাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা বিরাজমান। শুধু ঈদে নয়, সারাবছরই আমাদের যাতায়াত ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ ও যন্ত্রণাদায়ক থাকে। এর বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজকে সোচ্চার প্রতিবাদী হতে হবে।’

ড. মীর তারেক আলী বলেন, ‘আমাদের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিরাজমান বহুমুখী সমস্যার মধ্যে এবারের ঈদে নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে মোটরসাইকেল। ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনে যাত্রী পরিবহন দুর্ঘটনার আশঙ্কা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। একইভাবে নৌপথে ঝুঁকি বাড়িয়েছে স্পিডবোট।

‘ঈদ-যাতায়াত নিরাপদ ও বিড়ম্বনামুক্ত করতে হলে সড়ক, নৌ ও রেল- তিনটি গণপরিবহন খাতকে ঢেলে সাজাতে হবে। এজন্য শুধু ঈদকেন্দ্রিক পরিকল্পনা নিলে হবে না; বছরব্যাপী সুপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ চালাতে হবে।’

নাগরিক পর্যবেক্ষণ কমিটির সুপারিশমালায় বলা হয়, এমন পদক্ষেপ নেয়া উচিত যাতে প্রতি বছর ঈদের আগে তড়িঘড়ি করে কোনোকিছু করতে না হয়।

সড়কপথের জন্য সুপারিশ

১. সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন ও জনভোগান্তি লাঘবে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বড় শহরগুলোর সঙ্গে সম্ভাব্য সব জেলার বিআরটিসির বাস সার্ভিস চালু ও সেবার মান বৃদ্ধি।

২. সব সড়ক-মহাসড়কের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ ঈদের ১৫ দিন আগেই সম্পন্ন করা।

৩. যেসব মহাসড়কে উন্নয়ন কাজ চলমান তা ঈদের ১৫ দিন আগে স্থগিত করে গাড়ি চলাচলের উপযোগী বিকল্প ব্যবস্থা করা।

৪. দুর্ঘটনা এড়াতে মহাসড়কে লক্কড়-ঝক্কড় বাস, তিন-চাকার যানবাহন ও দূরপাল্লার সড়কে যাত্রীবাহী মোটরবাইক চলাচল বন্ধ এবং মোটরবাইকে একাধিক আরোহী নিষিদ্ধ করা।

৫. নিরবচ্ছিন্ন ও বিড়ম্বনামুক্ত সড়ক যোগাযোগের স্বার্থে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ নৌপথে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরি এবং ঘাট ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ এবং এসব নৌপথে ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল ও অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধ।

৬. মহাসড়কে অনিবন্ধিত, ত্রুটিপূর্ণ ও বিপজ্জনক সব ধরনের যানবাহন নিষিদ্ধ এবং সড়ক সংলগ্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ।

৭. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতামতের ভিত্তিতে সড়ক, মহাসড়ক ও বিভিন্ন মহানগরীর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করা।

৮. বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বিআরটিএকে শক্তিশালী এবং দুটি সংস্থার ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি।

৯. পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মধ্যে যাত্রী ও যানবাহন চলাচল অনেক বেড়ে যাবে। তাই ঢাকা-মাওয়া-খুলনা মহাসড়কের ওপর বাড়তি নজরদারি আবশ্যক।

১০. বর্ষায় অতিগুরুত্বপূর্ণ ও জনবহুল টঙ্গী-জয়দেবপুর ১৩ কিলোমিটার সড়কের জলাবদ্ধতা নিরসনে জরুরিভাবে সেখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার।

১১. ঈদের এক সপ্তাহ আগে মহাসড়কে ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্য ও পচনশীল দ্রব্যবাহী গাড়ি ছাড়া সাধারণ পণ্যবাহী সব ধরনের গাড়ি চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।

১২. সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে পুলিশ ও র‍্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য নিয়োগ এবং প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ।

নৌপথের জন্য সুপারিশ

১. ঢাকা থেকে বিভিন্ন উপকূলীয় জনপদ এবং সন্দ্বীপের কুমিরা-গুপ্তছড়াসহ সাগর মোহনায় বিভিন্ন নৌপথে বিআইডব্লিউটিসির যাত্রীবাহী আধুনিক জলযান চালু।

২. ঈদ মৌসুমে রঙ লাগিয়ে লক্কড়-ঝক্কড় লঞ্চ চলাচল বন্ধে ঈদ-পূর্ববর্তী ১৫ দিনের মধ্যে বার্ষিক সার্ভের (ফিটনেস পরীক্ষা) আবেদন করলে শিপ সার্ভেয়াররা যাতে দায়সারা সার্ভে করতে না পারেন সেজন্য ঈদের আগে ওই লঞ্চের ফিটনেস সনদ প্রদান বন্ধ রাখা।

৩. যাত্রীবাহী লঞ্চ, ওয়াটারবাস ও ট্রলারসহ সব ধরনের নৌযানের ফিটনেস যথাযথভাবে পরীক্ষার জন্য শিপ সার্ভেয়ারের শূন্য পদগুলোসহ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সব শূন্যপদে অবিলম্বে অনুমোদিত জনবল নিয়োগ করা।

৪. ছাদে যাত্রী বহন ও ডেকে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ ঠেকাতে লঞ্চমালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে ঈদের অন্তত ১৫ দিন আগে সদরঘাট থেকে বিভিন্ন নৌপথে লঞ্চের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে ঈদের এক সপ্তাহ আগে অন্য নৌপথের কোনো লঞ্চকে চলাচলের সুযোগ দেয়া যাবে না।

৫. নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের তৎপরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌপথে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি ও কার্যক্রম জোরদারকরণ।

৬. সব নৌপথে অনিবন্ধিত ও ফিটনেসবিহীন স্পিডবোট চলাচল এবং ঝুঁকিপূর্ণ এই বাহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন বন্ধ করা।

৭. সব লঞ্চ টার্মিনাল, ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটের ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও যাত্রীনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

রেলপথের জন্য সুপারিশ

১. ঢাকার কমলাপুর ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে টিকিট বিক্রির কাউন্টার সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ঢাকায় পাঁচটির অধিক স্থানে টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা।

২. কাউন্টারে সরাসরি টিকিটপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে জনভোগান্তি লাঘব করা।

৩. রেলওয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিটপ্রাপ্তির জটিলতা নিরসন।

৪. গত ঈদে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে টিকিট কিনতে হয়েছে। একই এনআইডি দিয়ে একই ব্যক্তির বিভিন্ন স্থান থেকে একাধিকবার টিকিট কেনার সুযোগ আছে কি-না রেল কর্তৃপক্ষকে তা স্পষ্ট করতে হবে। যদি থাকে তাহলে টিকিট কালোবাজারি রোধে অবশ্যই তা বন্ধ করতে হবে।

৫. যাত্রীর চাপ বেশি- এমন রেলপথে ট্রেনের কোচ (বগি) এবং প্রয়োজনে ট্রেন সংখ্যা বাড়ানো; যাতে যাত্রীরা ছাদে চড়তে বাধ্য না হন।

৬. জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও জনভোগান্তি লাঘবে কমলাপুরসহ জনবহুল রেল স্টেশনগুলোতে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম জোরদার করা।

এ বিভাগের আরো খবর