দাম্পত্য জীবনের বেশ কিছুটা সময় কেটে গেলে নারী-পুরুষের সম্পর্কে তৈরি হয় টানাপড়েন। অনেকের ক্ষেত্রে শারীরিক মিলন ঘটে কালেভদ্রে।
তবে গবেষণা বলছে দাম্পত্য জীবন মজবুত রাখতে সঙ্গমের বিকল্প নেই। শুধু তা-ই নয়, দুজনের চরম যৌনাকাঙ্ক্ষা সম্পর্ককে সব সময় গভীর ও উষ্ণ রাখায় সহায়তা করে। জার্নাল অফ সেক্স অ্যান্ড ম্যারিটাল থেরাপিতে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় এ দাবি করা হয়েছে।
গবেষণাটি পশ্চিমা কোনো দেশে নয়, রক্ষণশীল সৌদি আরবে পরিচালিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, যৌন ইচ্ছা প্রবল থাকা সৌদি দম্পতিদের সম্পর্ক অনেক বেশি মজবুত, সঙ্গমে তারা বেশি আনন্দও উপভোগ করেন। কালেভদ্রে সঙ্গমে জড়ানো দম্পতির তুলনায় তারা অনেকে বেশি উচ্ছল জীবনের অধিকারী।
নারী-পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বেশির ভাগ গবেষণায় ব্যক্তির ভূমিকাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে, দম্পতির যৌথ আকাঙ্ক্ষা খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুজনের যৌন চাহিদার হেরফের (এসডিডি) হরহামেশাই দেখা যায়।
সম্পর্কের চাপ ও অতৃপ্তি থেকেই যে বিষয়টি ঘটে তা কিন্তু নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিষমকামীদের ক্ষেত্রে সম্পর্কের কোনো এক পর্যায়ে নারী ও পুরুষ দুজনেরই যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যেতে পারে। গবেষণা বলছে, সমাজে লৈঙ্গিকভাবে সাধারণত পুরুষ এগিয়ে। এ কারণে দাম্পত্য জীবনে কখনও পুরুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে গেলে সেটি সম্পর্ককে আরও বেশি চাপের মুখে ফেলে।
নতুন গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যৌন আকাঙ্ক্ষার ওপর এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ গবেষণাই হয়েছে পশ্চিমা দেশে। এসব দেশে সঙ্গমকে বিচার করা হয় নারী-পুরুষের যৌন সমতা এবং যৌথ যৌন ইচ্ছার ভিত্তিতে।
তবে এবারের গবেষণা চলেছে সৌদি আরবের দম্পতিদের ওপর, যেখানে লিঙ্গ এবং সম্পর্কের নিয়মগুলো অনেকটাই আলাদা।
গবেষণাপত্রের লেখক আতিয়া আত্তাকি সৌদি আরবের রিয়াদের মুতমায়েনা মেডিক্যাল সেন্টারে কর্মরত। আতিয়া ও তার সহকর্মীরা লিখেছেন, ‘সৌদি আরবকে একটি পুরুষতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। যেখানে যৌনতায় নানা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আচরণ, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং লিঙ্গ কর্তৃত্বের ভিত্তিতে সৌদিতে যৌনতা নিয়ন্ত্রিত হয়।’
‘এখানে ধরে নেয়া হয়, কেবল পুরুষরা সঙ্গমে সক্রিয় হবে, মানে তারাই এটি শুরু করবে। আর নারীরা বিশ্বাস করেন, তাদের সব সময় পুরুষ সঙ্গীর ইচ্ছা ও যৌন আকাঙ্ক্ষার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেয়া উচিত। এই কঠোর লৈঙ্গিক আচরণ সৌদি দম্পতিদের বিভিন্ন স্তরে যৌন আকাঙ্ক্ষার উপলব্ধি এবং সম্পর্কের ধরনকে নিয়ন্ত্রণ করে।’
গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক শৈশবের অধিকারীদের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় পরিতৃপ্ত দাম্পত্য জীবন লাভের সম্ভাবনা বেশি। উল্টোদিকে, শৈশবের নেতিবাচকতা পরবর্তী সময়ে দাম্পত্য জীবনকেও প্রভাবিত করে।
সম্পর্কে যৌন আকাঙ্ক্ষার প্রভাব বিশ্লেষণে গবেষণায় বিষমকামী ১০০ দম্পতিকে বেছে নেয়া হয়েছিল। তাদের অর্ধেক সৌদির রাজধানী রিয়াদের, যারা যৌন বা বৈবাহিক সমস্যার জন্য মানসিক চিকিৎসা করাতে চাচ্ছিলেন। বাকি অর্ধেক ওই রোগীদের স্বজন এবং গবেষণা দলের ঘনিষ্ঠজন।
প্রতিটি দম্পতি একটি স্বাধীন পরিবেশে গবেষকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যৌন কার্যকলাপ, যৌনতার ইচ্ছা, তৃপ্তি, সম্পর্কের সন্তুষ্টি এবং সঙ্গমের মুহূর্তের অনুভূতি সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন ছিল তাদের প্রতি।
গবেষণায় ১০০ দম্পতির মধ্যে মাত্র ছয় যুগলের ক্ষেত্রে সমান মাত্রায় যৌন আকাঙ্ক্ষা লক্ষ করা গেছে। ২২ দম্পতির ক্ষেত্রে নারীরা জানিয়েছেন অবদমিত আকাঙ্ক্ষার কথা, আর ৭২ জন পুরুষ তাদের স্ত্রীদের তুলনায় বেশি মাত্রায় আকাঙ্ক্ষার তথ্য দিয়েছেন। দেখা গেছে, নারী ও পুরুষ দুজনের ক্ষেত্রেই যৌন সক্রিয়তা, তৃপ্তি এবং সম্পর্ক নিয়ে তুষ্টির সঙ্গে নিজেদের যৌন আকাঙ্ক্ষার গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
আরও বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুরুষ সঙ্গীরা যখন চরম যৌন আকাঙ্ক্ষা নিয়ে সঙ্গম করেন, নারীরা তখন বেশি তৃপ্ত বোধ করেন। তবে নিজের উচ্চ আকাঙ্ক্ষায় নারীর অতটা তৃপ্তি তৈরি হয় না। আরও দেখা গেছে, নিরাপদ সঙ্গমে অভ্যস্ত পুরুষ তার সমান মাত্রার যৌন চাহিদায় ভোগা বা তার চেয়েও বেশি আগ্রহী- দুই ধরনের নারী সঙ্গীর ক্ষেত্রেই চকমপ্রদ যৌন সক্রিয়তা প্রদর্শন করে থাকেন।
গবেষণা বলছে, নারীর ক্ষেত্রেও তার মতোই তুঙ্গে থাকা চাহিদার পুরুষের সঙ্গে সঙ্গম আকর্ষণীয়। তবে এ ক্ষেত্রে পুরুষ সঙ্গীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তাবোধ তৈরি করাও বেশ জরুরি। যেসব নারী সঙ্গম নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তারাও বলছেন, দুজনের যৌন ইচ্ছা প্রবল থাকলে তারা বেশি তৃপ্ত হন।
আতিয়া আত্তাকি বলছেন, ‘সাধারণভাবে আমাদের ফলাফলে দেখা গেছে, যৌন আকাঙ্ক্ষার উচ্চমাত্রা পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে মধুর যৌনতা, আরও উত্তেজনা এবং তৃপ্ত সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত।
অন্যদিকে, শিথিল সম্পর্কের সঙ্গে যৌনতায় অনাগ্রহের বিষয়টি যুক্ত ছিল। পাশাপাশি কারও একজনের উচ্চাকাঙ্ক্ষার বিপরীতে আরেকজনের অনাগ্রহ দাম্পত্য সম্পর্ককেই উদ্বেগজনক পর্যায়ে ঠেলে দেয়।’