বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

পুরুষ তেলাপোকার কষ্ট ঘোচাবে কে?

  •    
  • ২৮ মে, ২০২২ ২০:০৮

প্রাণ হারানোর মতো বিপদ এড়াতে অনেক প্রজাতির তেলাপোকার চিনিজাতীয় খাবারের প্রতি নিরাসক্তি জন্ম নিয়েছে। এতে বিপদ বেড়েছে পুরুষের। দেহ নিঃসৃত মিষ্টি স্বাদের শর্করায় বেশিক্ষণ আর আকৃষ্ট হচ্ছে না সঙ্গিনীরা।

‘মানুষের উপদ্রবে’ চোখে রীতিমতো অন্ধকার দেখছে কয়েক প্রজাতির পুরুষ তেলাপোকা। যৌন মিলনের জন্য বের করতে হয়েছে নতুন উপায়। যৌনজীবনে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।

তেলাপোকা নিধনে যুগের পর যুগ মিষ্টি স্বাদের কীটনাশক ব্যবহার করছে মানুষ। এ কারণে তেলাপোকার অনেক প্রজাতি মিষ্টি খাওয়াই ছেড়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন মিষ্টি খাবারের প্রতি মুখ ঘুরিয়ে নেয়া তেলাপোকাদের যৌনজীবনেও ঘটেছে ব্যাপক পরিবর্তন।

সাধারণত সঙ্গমে ইচ্ছুক পুরুষ তেলাপোকা সঙ্গিনীকে আকর্ষণের জন্য নিজের পশ্চাদ্‌দেশ এগিয়ে দেয়, ডানা মেলে ধরে এবং তারপর নিজের দেহনিঃসৃত খাবার গ্রহণের আমন্ত্রণ জানায়।

এই খাবারটি তৈরি হয় পুরুষ তেলাপোকার টেরগাল গ্রন্থির শর্করা ও চর্বির মাধ্যমে, যার স্বাদ মিষ্টি। খাবার গ্রহণে মত্ত সঙ্গিনীকে পুরুষ তেলাপোকাটি একটি যৌনাঙ্গের মাধ্যমে শরীরের সঙ্গে আটকে রাখে, আর অন্য যৌনাঙ্গের মাধ্যমে শুক্রাণু প্রবেশ করায়।

সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সঙ্গমের সময়কাল ৯০ মিনিট পর্যন্ত হতে পারে। তবে এই আনন্দপূর্ণ মিলন গোলমেলে করে দিচ্ছে কীটনাশক। প্রাণ হারানোর মতো বিপদ এড়াতে অনেক প্রজাতির তেলাপোকার চিনিজাতীয় খাবারের প্রতি নিরাসক্তি জন্ম নিয়েছে। এতে বিপদ বেড়েছে পুরুষের। দেহনিঃসৃত মিষ্টি স্বাদের শর্করায় বেশিক্ষণ আর আকৃষ্ট হচ্ছে না সঙ্গিনীরা।

যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা ১৯৯৩ সালে জার্মান তেলাপোকার একটি বৈশিষ্ট্য আবিষ্কার করেন। এ ধরনের তেলাপোকার অস্তিত্ব একমাত্র অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া বাকি সব মহাদেশেই কমবেশি আছে। তারা অবাক হয়ে দেখতে পান এসব তেলাপোকার গ্লুকোজজাতীয় মিষ্টি খাবারের প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই বললেই চলে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এসব তেলাপোকার চিনিবিমুখতার কারণ মোটেই স্বাস্থ্য সচেতনতা থেকে নয়। বরং এরা বংশগতভাবে ধীরে ধীরে মিষ্টিজাতীয় কীটনাশকের বিপদ সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। মৃত্যুর ফাঁদ এড়াতে মিষ্টি খাবার এড়ানোয় সাফল্য অর্জন করেছে এরা।

নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটির কীটতত্ত্ববিদ আয়াকো ওয়াদা-কাতসুমাতা বলছেন, ‘আমরা বিবর্তনের কথা চিন্তা করার সময় সাধারণত বন্য প্রাণীদের বিষয়টিতে বেশি জোর দিই। অথচ আমাদের রান্নাঘরে বসবাসকারী ছোট প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এটি ঘটছে।’

ড. ওয়াদা-কাতসুমাতা ও তার সহকর্মীরা তেলাপোকার এই রূপান্তর নিয়ে আরও বিস্তর গবেষণা করেছেন। এই গবেষণার ফল চলতি মাসে কমিউনিকেশনস বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনের বিবর্তন স্ত্রী তেলাপোকাকে মিষ্টি স্বাদের বিষের টোপ এড়াতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে এই বৈশিষ্ট্য পুরুষ তেলাপোকার সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ মিলনের সম্ভাবনাও কমিয়ে দেয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিবর্তিত তেলাপোকার লালা দ্রুত জটিল শর্করাকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম। সাধারণ মিষ্টি খাবারের পাশাপাশি পুরুষ তেলাপোকার দেহনিঃসৃত চিনি বা গ্লুকোজে স্ত্রী তেলাপোকা কামড় বসানোমাত্র তার মুখ তেতো হয়ে যায়। ঘটনাটি এতটাই দ্রুত ঘটে যে পুরুষ তেলাপোকা তার দ্বিতীয় যৌনাঙ্গ ঠিকঠাক প্রবেশ করানোর আগেই চম্পট দেয় ‘বিরক্ত’ সঙ্গিনী।

স্ত্রী তেলাপোকার এভাবে দ্রুত সটকে পড়ায় মানুষের স্বস্তি পাওয়ার কিছু অবশ্য নেই। কারণ এর ফলে তেলাপোকার জন্মহারে তেমন কোনো হেরফের হয়নি।

ওয়াদা-কাতসুমাতা বলছেন, ‘ব্যাপারটি এতটা সরল নয়। কারণ, পুরুষ তেলাপোকা দীর্ঘ সঙ্গমের আনন্দ বঞ্চিত হলেও দ্রুততম সময়ে শুক্রাণু প্রবেশ করার বিকল্প উপায় ঠিকই বের করে নিয়েছে।‘

গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাধারণ তেলাপোকার তুলনায় মিষ্টিজাতীয় খাবারে আকর্ষণ হারানো প্রজাতির স্ত্রী তেলাপোকা আচরণগত দিক থেকে বেশি ছটফটে। এ কারণে এসব প্রজাতির পুরুষ তেলাপোকা দেহনিঃসৃত খাবার উপহার দেয়ার পরপরই দ্রুত সঙ্গমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আর এই সঙ্গম চলে খুব সামান্য সময় ধরে।

নর্থ ক্যারোলিনার কীটতত্ত্ববিদ ও গবেষণাপত্রের লেখক কোবি শ্যাল বলেছেন, ‘মিষ্টি খাবারে অনাগ্রহী স্ত্রী তেলাপোকাকে উপহারের খাবার খাওয়াতে পুরুষ তেলাপোকা সর্বোচ্চ তিন সেকেন্ড সময় ব্যয় করতে পারে। এ সময়ের মধ্যেই পুরুষ তেলাপোকাকে সঙ্গম শুরু করতে হয়। অন্য প্রজাতিতে এই সময়কাল অনেক দীর্ঘ।‘

ফলে দেখা যাচ্ছে মিষ্টি কীটনাশক বেশ কিছু প্রজাতির পুরুষ তেলাপোকার যৌনজীবনকে বিষিয়ে তুললেও এতে প্রজনন হারে কোনো ভাটা পড়েনি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মিষ্টি খাবারের প্রতি তেলাপোকার অনাগ্রহ উল্টোদিকে প্রচলিত কীটনাশকের কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য কীটনাশকে কার্যকর নতুন উপাদান যোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।

এ বিভাগের আরো খবর