কাচ্চি-লাচ্ছি আর বাকরখানির দোকানের পাশাপাশি পুরান ঢাকায় চোখ আটকে যায় একটি নিরামিষ খাবারের দোকানে। নাম জগন্নাথ ভোজনালয়। আমিষের কোনো ছিটে-ফোঁটাও নেই। তবু নিরামিষ খাবার যে কত বিচিত্র আর সুস্বাদু হতে পারে, তা সংকীর্ণ এ দোকানে খেলে বোঝা যায়।
পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারের শিবমন্দির থেকে ডান দিকে এগোলেই পড়বে নিরামিষের এই ভোজনালয়টি। গলির পাশের ভবনের দুই তলার সংকীর্ণ সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই ছোট্ট একটি খাবার ঘর।
নিরামিষ ভোজনের এই স্বর্গে চার থেকে পাঁচটি টেবিল। প্রতি টেবিলে চার-পাঁচটি চেয়ার সংযুক্ত। টেবিলে ছোট ছোট অসংখ্য বাটি সাজানো। তাতে হরেক পদের নিরামিষ তরকারি ও ভর্তা। সঙ্গে স্টিলের থালায় ধোঁয়া ওঠা সাদা ভাত। ভাত প্রথম প্লেট ১৫ টাকা, পরবর্তী হাফ প্লেট ৫ টাকা করে। টেবিলে সাজানো বাটি থেকে নিজ ইচ্ছামতো নিয়ে খাওয়া যায়।
নিরামিষ খাবারের দোকান ‘জগন্নাথ ভোজনালয়’-এ খাচ্ছেন অনেকে। ছবি: নিউজবাংলা
জগন্নাথ ভোজনালয়ে আট থেকে ১০ রকমের ভর্তা পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে আছে বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, ধনে পাতা ভর্তা, শিম ভর্তা, সরিষা ভর্তা, কচুরলতি ভর্তা ইত্যাদি। তা ছাড়া হরেক রকমের শাক পাওয়া যায়। ডালেরও অনেক আইটেম: মটর ডাল, মুগ ডাল, বুটের ডাল, মাষকলাই ডাল। তাছাড়া তরকারি, ছানাবড়া, পনিরসহ রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মুখরোচক খাবার।
প্রতি বাটি ভর্তার দাম ১০ টাকা। ছোট বাটি তরকারি অথবা ভাজি ২০ টাকা এবং বড় বাটিতে ফুলকপি ভাজি ৩০ টাকা। বড় বাটি তরকারি ৪০ টাকা।
প্রতিদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায় দোকানে। খাবার পরিবেশনের কাজে নিয়োজিত আট কর্মচারী।
এখানে খেতে আসা ওমর ফারুক বলেন, ‘আমি নিয়মিত এখানে খেতে আসি, এখানকার খাবার গুণে ও মানে ভালো এবং দামও কম। আর এদের খাবার পরিবেশনটাও খুব ভালো লাগে। ১০০ টাকা দিয়ে যে কেউ দুপুরে পেট ভরে খেতে পারবে।’
জগন্নাথ ভোজনালয়ে বন্ধু রোহান রায়কে নিয়ে খেতে আসা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিপা রানী রায় নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখানকার পনির, সয়াবিন আর বড়াটা খুবই সুস্বাদু। আমি প্রায়ই এখানে খেতে আসি। আমার মুখে জগন্নাথ ভোজনালয়ের খাবারের কথা শুনে আমার বন্ধুও অনেক দিন ধরে আমাকে নিয়ে আসতে বলছিল। আজ তাকে নিয়ে এলাম।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে ইসলামপুরে আসা কাপড় ব্যবসায়ী অনিমেষ রায় ঢাকায় পা রাখলেই দুপুরে খেয়ে যান এই নিরামিষ ভোজনালয়ে। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, এখানে যে যে ধরনের নিরামিষ আইটেম পাওয়া যায় তা আশপাশে আর কোথাও পাওয়া যায় না। আর এখানকার খাবারে স্বাদও অনন্য।
ভোজনালয়ের দায়িত্বে থাকা নিতাই পাল বলেন, ‘শীতকালে বেচাকেনা বেশি হয়, এখন বেচাকেনা একটু কম। আমরাও কম দামে ভালো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করি।’
ভোজনালয়ের মালিক অশোক কবিরাজ বলেন, ‘আমাদের এখানে হিন্দু-মুসলমান থেকে শুরু করে সব ধরনের কাস্টমার আসে। স্থানীয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সকাল-দুপুরের খাবার খেতে আসেন। কেউ কেউ রাতের খাবারও খান। কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনও নিরামিষ খেতে ভালোবাসেন। সে জন্য এখন ভিড়টাও একটু বেশি।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে খাবার সাশ্রয়ী। নিরামিষ খাবার স্বাস্থ্যকরও। যে কেউ নিশ্চিন্তে আসতে পারেন, খেতে পারেন। খরচ বেশি পড়ে না। তাই খাবারের বাড়তি দামও রাখার প্রয়োজন হয় না। অনেকেই খেয়ে আবার পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য পার্সেল নিয়ে যান।’
জগন্নাথ ভোজনালয়ের আরেক মালিক শিল্পী রানী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের হোটেলে কোনো ধরনের বাসি খাবার নেই, প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন বিক্রি করা হয়। আমাদের কোনো ফ্রিজ নেই। আমরা ফুড পান্ডা অ্যাপেও খাবারের অর্ডার নেই। হোটেলটি ছোট পরিসরের। আশপাশে বড় জায়গা পেলে সেখানে আমাদের জগন্নাথ ভোজনালয়টি করব।’