খ্যাতিমান ব্যক্তিরা সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও তাদের অবয়বে বানানো ভাস্কর্য স্থান পেয়েছে রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকার সেলিব্রিটি গ্যালারিতে। ভাস্কর্যগুলো বানিয়েছেন মৃণাল হক। এ ভাস্করের কাজগুলোকে তুলে ধরা এবং বিশ্বের বিশিষ্ট মানুষদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে জানানোর উদ্দেশ্যে এম আমিনুল হক লাইব্রেরি অ্যান্ড কালচারাল সেন্টারে এই আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনের রাজসিক বিহার ভাস্কর্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ারসহ অনেক ভাস্কর্যের শিল্পী মৃণাল হক। ২০২০ সালের ২২ আগস্ট তিনি মারা যান। তিনি দেশজুড়ে রেখে গেছেন বহু শিল্পকর্ম। এর অনেকগুলোই ছিল তার নিজের সংরক্ষণে।
এসব শিল্প যেন হারিয়ে না যায় সেই লক্ষ্যে তার বোন আভা হক রাজশাহীতে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন শিল্পী মৃণাল হকের সেলিব্রিটি গ্যালারি। দুই তলা ভবনের দুটি তলা জুড়ে রয়েছে জনপ্রিয় সব ব্যক্তিত্বের ভাস্কর্য। আর নিচ তলায় গড়ে তোলা হচ্ছে আভা হকের স্বামীর নামে এম আমিনুল হক লাইব্রেরি। লাইব্রেরির কাজ এখনও চলমান। তবে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে উন্মুক্ত করা হয়েছে সেলিব্রিটি গ্যালারি।
উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলল বিশ্বের জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের ভাস্কর্য।
দ্বিতীয় তলায় উঠতেই মাথার ওপরে দেখা যাবে স্পাইডারম্যান। মনে হতে পারে সেটি মাথার ওপরে লাফিয়ে পড়বে। দ্বিতীয় তলার প্রথম ঘরটিতে ঢুকেই দেখা মিলবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীসহ জাতীয় চার নেতার ভাস্কর্য।
আরেকটু সামনে এগোলে মিলবে ছোট্ট একটি ঘর। আলো আঁধারি এই ঘরের আবহ কিছুটা ভূতুড়ে। এখানকার ভাস্কর্যগুলোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতেই এই ঘরের আলো কিছুটা কম। ঘর জুড়ে নীল রং আর ঘরের ভেতরে আক্রমণের ভঙ্গিতে এলিয়েনের দল।
পাশের ঘরটিতে খ্যাতিমানদের ভিড়। এই ঘরে ঢুকতেই শুরুতে দেখা মেলে ফুটবল তারকা মেসির। তিনি বল পায়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার পাশেই বলিউড কিং শাহরুখ খান। আছে মিস্টার বিন, চার্লি চ্যাপলিন, সাকিরা, মাইকেল জ্যাকসনসহ বেশ কিছু জনপ্রিয় মুখ। এর পরের ঘরে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর টেবিলে বসে লিখছেন। তার ডান পাশে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বাম পাশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই ঘরে আরও সব গুরুত্বপূর্ণ মানুষের দেখা মিলবে। ডোনাল ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদি, মহাত্মা গান্ধী, মাদার তেরেসা, চে গেভারা, প্রিন্সেস ডায়ানা, ক্ষুদিরামের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা যাবে এই ঘরে। মৃণাল হক চেষ্টা করেছেন এসব ব্যক্তিত্বকে জীবন্ত করে তুলতে। এ কারণে এখানকার বেশিরভাগ ভাস্কর্যের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুললে মনে হতে পারে সত্যিই বুঝি গুণী ওই মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে আপনি ছবি তুলেছেন।
সেলিব্রিটি গ্যালারির তত্ত্বাবধায়ক কামরুল হাসান মিলন বলেন, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে দুটি কাজ হবে: প্রথমত শিল্পীর শিল্পকর্মের সঙ্গে মানুষের পরিচয় হবে। এর মাধ্যমে শিল্পীর কর্ম বেঁচে থাকবে। আবার এসব শিল্পকর্ম দেখে দর্শনার্থীরা পৃথিবীর গুণী মানুষদের সম্পর্কে জানবেন। এখানে যেসব ব্যক্তিত্বের ভাস্কর্য আছে, তাদের পরিচয় ও কর্ম সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
‘নিচের লাইবেরির কাজ এখন শেষের পথে। আর এই সেলিব্রিটি গ্যালারিটি গত ঈদের পর উন্মুক্ত করা হয়েছে। এখানে প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে ১০০ টাকা। তবে শিশুদের জন্য এটি ফ্রি। এখনও সেভাবে প্রচার হয়নি, তবে যারা জানছেন, তারা অনেকেই আসছেন এখানে।’