বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সন্তানকে বুকের দুধের গয়না দিলেন মা

  •    
  • ৯ মে, ২০২২ ০০:১৯

বুকের দুধ দিয়ে কেন গয়না বানানো- এমন প্রশ্নে সুমনা জানান, তার ব্রেস্টফিডিং জার্নিটা খুব কঠিন ছিল। সেই সংগ্রামের দিনগুলোর কথা ভেবেই এই আইডিয়া মাথায় আসে।

এক জোড়া কানের দুল ও একটি নেকলেসের নজরকাড়া সেট। ছবি দেখে যে কেউ ভাববেন, সোনার তৈরি অলঙ্কারে বসানো হয়েছে মুক্তা।

তবে ছবির সঙ্গে জুড়ে দেয়া পোস্টটি পড়ে জানা গেল, সোনার গয়নায় বসানো সাদা রংয়ের যে বস্তুটি আসলে জমাট বুকের দুধ!

এক নারীর বুকের দুধ দিয়ে বানানো হয়েছে গয়নাটি। সেটি বানিয়েছে সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি নামের ফেসবুকভিত্তিক একটি গয়নার দোকান।

ভিন্নধর্মী নকশার গয়নার জন্য সাধারণ গ্রাহকের পাশাপাশি তারকাদেরও পছন্দের পেজ এটি।

এবার মা দিবসের সন্ধ্যায় ব্রেস্টমিল্ক দিয়ে তৈরি গয়না হাজির করে সবাইকে চমকে দিয়েছে অনলাইন শপটি।

সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরির উদ্যোক্তা জেরিন তাসনিম খান ও গয়নাটির গ্রাহক সুমনা রশীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে নিউজবাংলা জানতে পারে নবজাতক সন্তানকে নিয়ে মায়ের এক সংগ্রামের গল্পও।

জেরিন জানান, সুমনা রশীদ প্রায় ছয় মাস আগে তার পেজের নক করে নিজের বুকের দুধ দিয়ে মেয়ের জন্য গয়না বানিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন।

জেরিন বলেন, ‘সুমনা আপু প্রায় ৬ মাস আগে আমাদের পেজে নক করে জানান যে তিনি তার মেয়ের জন্য তার ব্রেস্টমিল্ক দিয়ে জুয়েলারি বানাতে চান। আমাদের কাজ তার পছন্দ বলে আমাদের দিয়েই বানাতে চান।

‘তিনি (সুমনা) জানান যে এ রকম বাইরের দেশে হয়, তাই তিনি নিশ্চিত এটা সম্ভব এবং আমরাই পারব। আমার পেজ ম্যানেজাররা বিষয়টি আমাকে জানায়। আমি পরে ওই আপুর সঙ্গে সরাসরি ফোনে যোগাযোগ করি। আমি তাকে জানাই যে আমি ইন্টারেস্টেড, তবে সাকসেসফুল হবো কি না সে নিশ্চয়তা দিতে পারব না।

‘সুমনা আপু বললেন তিনি তার মেয়েকে এই জুয়েলারি দিতে চান; সময় লাগলেও আমরা যেন করে দেই। তিনি জুয়েলারিটা সোনার উপর চান। এইতো। এভাবেই কাজ শুরু করি।’

বুকের দুধ দিয়ে গয়না বানাতে গিয়ে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়েছে বলে তিনি জানান।

জেরিন বলেন, ‘এ রকম তো আগে কখনও করিনি, বিভিন্ন দেশে এমন হয় আমিও শুনেছি। তবে ঠিক কীভাবে করে তা জানতাম না, জানার দরকারও ওভাবে হয়নি। সুমনা আপু বলার পর আমি ইউটিউব ঘেঁটে, বিভিন্ন আর্টিক্যাল পড়ে শিখতে চেষ্টা করি।

‘তবে সেসব কন্টেন্ট বিদেশের। সেখানে যেসব ম্যাটেরিয়াল অ্যাভেইল্যাবল, সেসব দিয়ে বানানো। আমাকে তো দেশে পাওয়া যায় এমন জিনিস দিয়ে বানাতে হবে। তাই দেশি এলিমেন্টও খুঁজতে হয়েছে। প্রথম কাজই ছিল বুকের দুধ প্রিজার্ভ কীভাবে করা যায় সেটা বের করা।

‘আমরা পরীক্ষামূলকভাবে গরুর দুধ দিয়ে জুয়েলারির মূল অংশটা বানাতে ট্রাই করলাম। সেটা হওয়ার পর মেটালে সেট করে সুমনা আপুকে দেখাই। আপুর অ্যাপ্রুভালের পরই তার বুকের দুধ আনিয়ে সোনার উপর মূল কাজ শুরু করি।’

জেরিন জানান, শুরুতে গয়নার কোনো নকশা মাথায় ছিল না। কাজটা সম্ভব কি না সেটা নিয়ে নিরীক্ষা চলছিল। সম্ভব নিশ্চিত হওয়ার পরই নকশা নিয়ে ভাবেন তিনি।

জেরিন বলেন, ‘নকশা কী হবে ভাবতে গিয়ে মাথায় আসে, বুকের দুধের ফোটার মতো নকশা করা যেতে পারে। সুমনা আপুকে দেখালাম স্যাম্পল। তিনি খুবই পছন্দ করলেন। সেভাবেই বানিয়ে দিয়েছি। অনেক সময় লেগেছে, প্রায় ৬ মাস... তারপরও আপু খুব ধৈর্য ধরে সঙ্গে ছিলেন। তিনি খুবই খুশি। এমন ভিন্ন ধরনের কাজ করতে পেরে আমারও বেশ ভালো লেগেছে।’

এই গয়নার ছবি ও পোস্ট ফেসবুক পেজে দেয়ার পরপরই বেশ সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানান জেরিন। অনেকেই তার পেজে নক করে ব্রেস্টমিল্ক জুয়েলারি বানিয়ে দিতে বলেছেন। তবে পাশাপাশি কিছু সমালোচনাও এসেছে।

জেরিন বলেন, ‘ব্রেস্টমিল্ক দিয়ে ওই সেটটা বানানোর একটা ভিডিও দিয়েছিলাম পেজে। এরপর বেশ কিছু বাজে ফিডব্যাক পাই। পরে ভিডিওটা ডিলিট করে দেই।

‘আসলে ব্রেস্টফিডিং নিয়ে এখনও নানা ট্যাবু আছে এ দেশের মানুষের মধ্যে। প্রকাশ্যে এসব নিয়ে আলোচনা তো হয় না। সেখানে এমন একটা কাজ করেছি, সেটা অনেকেই হয়ত হজম করতে পারেননি।’

ওই গয়নার ক্রেতা সুমনা রশীদের সঙ্গেও কথা বলেছে নিউজবাংলা।

তিনি জানান, তার মেয়ে মেহভীশ আনিরা মোহসীনের জন্য এই গয়না বানিয়েছেন। মেয়ের বয়স প্রায় দুই বছর।

বুকের দুধ দিয়ে কেন গয়না বানানো- এমন প্রশ্নে সুমনা জানান, তার ব্রেস্টফিডিং জার্নিটা খুব কঠিন ছিল। সেই সংগ্রামের দিনগুলোর কথা ভেবেই এই আইডিয়া মাথায় আসে।

কী ধরনের সংগ্রাম?

সুমনা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমার মেয়ে জন্মের পর থেকে ল্যাচ (স্তন্যগ্রহণ) করছিল না। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতির সময় তার জন্ম। তাই নার্সরাও কাছে ঘেঁষত না। ডাক্তাররাও কিছু বলতে পারে না। আমিও বুঝতে পারছিলাম না কেন মেয়ে দুধ খাচ্ছে না। কারও কোনো গাইডেন্সও পাইনি। উল্টো সবাই আমাকে বলতে থাকে আমারই ব্রেস্টমিল্ক নেই।

‘আমি ফেসবুকে তখন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মম গ্রুপে অ্যাড হই। সেখান থেকে জানতে পারি যে ল্যাচ করে না এমন নিউবর্ন (নবজাতক) আরও আছে। সেসব গ্রুপ আর ইন্টারনেট ঘেঁটে আমি বুঝতে পারি যে আমার মেয়ের লিপ-টাই সমস্যা আছে। এ সমস্যা থাকলে বাচ্চা ঠিকমতো ল্যাচ করতে পারে না। পরে বিষয়টা নিয়ে ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হই আমার মেয়ের এটাই সমস্যা।

‘এরপর নেট ঘেঁটেই বিভিন্ন পদ্ধতি শিখে আমি বাচ্চাকে ট্রেনিং দিতে শুরু করি। জন্মের প্রায় আড়াই মাস পর আমার মেয়েকে ব্রেস্টফিড করাতে পারি। ওই স্ট্রাগলের সময়টা খুব কঠিন ছিল। একে তো মেয়ে দুধ খেতে পারছিল না, সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তা। তার উপর আশপাশের লোকজনের নানা কটূ-তীর্যক কথা ছিলই।’

সুমনা জানান, এই ওয়েবসাইট ঘাঁটতে গিয়েই তিনি জানতে পারেন বাইরের দেশে বুকের দুধ নিয়ে গয়না বা কিপসেক বানানো যায়। অনেকে স্মৃতি ধরে রাখতে এমন বানায়। তখন তিনিও এমন কিছু করার কথা ভাবলেন। সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরির গয়না তার এমনিতেই পছন্দ ছিল। তাই তাদের সঙ্গেই আইডিয়া শেয়ার করেন।

সুমনা বলেন, ‘আমি আমার আইডিয়া বলি, তারাও আগ্রহ দেখায়। আমার তাড়া ছিল না, খুব যে প্রয়োজন তাও না, ভেবেছিলাম বলে দেখি। যদি হয়ে যায় আর কি। তারা জানাল করে দেবে। আমি সে সময়ই ব্রেস্টমিল্ক কালেক্ট করে ফ্রিজে রেখে দেই। এই মাস দুয়েক আগে গয়নাটা হাতে পাই। খুবই ভালো লেগেছে পেয়ে।’

তবে গয়নাটি নিয়ে পরিচিতজনদের কাছ থেকে অপ্রীতিকর মন্তব্য শুনতে হয়েছে বলে জানান সুমনা।

তিনি বলেন, ‘আমি খুব আগ্রহ নিয়ে সবাইকে সেটটা দেখিয়েছি। কেউ কেউ বলেছে এটার কী দরকার ছিল, এটা আর এমন কী, এই গয়নার পেছনে টাকা নষ্ট করার কী আছে, এমন কোনো প্রেশিয়াস স্টোন তো না যে সোনার উপর করতে হলো। এরা আসলে এটার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। এটার পেছনে যে আমার ইমোশন সেটা বোঝেনি।’সুমনা বলেন, ‘আমার মেয়ে এই গয়না দেখে আমার ব্রেস্টফিডিংয়ের স্ট্রাগলটা মনে রাখুক, এটা আমি চাই না। তাকে আমার স্ট্রাগল জানতে হবে না। আমি চাই, এটা দেখে সে জানবে যে আমার মাধ্যমে সে ব্রেস্টমিল্কের রূপে আসলে একটা ব্লেসিং পেয়েছে। আর ব্রেস্টফিডিংয়ের জার্নিটা আমার কাছেই না হয় মেমোরেবল থাকুক।’

এ বিভাগের আরো খবর