পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে টোল প্লাজার সামনে রীতিমতো জনসভার মতো ভিড়। এরা সবাই পদ্মা সেতু এলাকায় সময় কাটাতে এসেছে।
তবে নিরাপত্তার কারণে কাছাকাছি যাওয়া যাচ্ছে না। নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরে টোল প্লাজা থেকে ৩০০ মিটার সামনের দিকে এক্সপ্রেসওয়ে সড়কেই অবস্থান করতে হয় তাদের।
ঈদের লম্বা ছুটিতে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে যাওয়ার তালিকায় বুঝি যোগ হলো দেশের সবচেয়ে বড় সেতু এলাকাটিও।
ঈদের দিন থেকেই সেতুর দুই প্রান্তেই মানুষের উপচে পরা ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। কেউ এসেছে একা, কেউ বন্ধুদের নিয়ে, কেউ স্বজনদের সঙ্গে। গান বাজিয়ে নেচে গেয়ে আনন্দ চলে শুক্রবার সকাল থেকেই।
টোল প্লাজা থেকে ৫০০ মিটার সামনে এগুতেই চোখে পড়ল আতশবাজি আর পটকা ফোটানোর ব্যস্ত কিশোরদের। এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই খাদ্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন স্থানীয় দোকানিরা। এসব দোকানে বিভিন্ন ধরনের শরবত, আখের রস, কোমল পানীয় বিক্রি হয় দেদারসে। এক্সপ্রেসওয়ের পাশেই গড়ে ওঠা বেশ কিছু রেস্টুরেন্টেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
সেতুর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। আগামী জুনে সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার কথা আছে।
দীর্ঘ সেতু নিয়ে আকর্ষণ আছেই, তার সঙ্গে পাশের টোল প্লাজা, সার্ভিস এরিয়া, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, রেল লাইন, এক্সপ্রেসওয়ে, সেনানিবাস, সবুজায়ন করা নগরী, পুনর্বাসন কেন্দ্রও ঘিরেও মানুষদের আগ্রহ দেখা গেছে।
ভিড়ের মধ্যে পাওয়া গেল খুলনা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা নেয়ামত উল্লাহকে। ভোরে রওনা করে বেলা এগারোটার দিকে মাইক্রোবাসে করে সেতুর জাজিরা প্রান্তে পৌঁছেন তারা।
নেয়ামত নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিনোদনের অনেক জায়গা আছে, কিন্তু পদ্মা সেতু দেশে একটাই। তাই এবার ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে স্বপ্নের সেতু দেখতে এসেছি। তবে নিরাপত্তার কারণে সেতুর কাছে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এত কাছে এসেও সেতুতে উঠতে না পারায় কিছুটা খারাপ লাগছে।’
শরীয়তপুরের সখিপুর থেকে বাইকে করে এক্সপ্রেসওয়েতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সম্প্রতি বিয়ে হওয়া সুমন ও তানিয়া দম্পতি। সুমন বলেন, ‘ঈদের ছুটিতে কিছুটা নিরিবিলি সময় কাটাতে এখানে এসেছি। কিন্তু এখানে প্রচুর মানুষের ভিড়।’
তিনি বলেন, ‘সেতুকে ঘিরে তৈরি করা সবুজায়ন নগরীর গাছপালা ঘেরা পরিবেশ সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এখানকার পরিবেশটাও বেশ ঠান্ডা এবং পাশে থাকা পদ্মা নদী ও পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়।’
এক্সপ্রেসওয়ের মাঝের ওয়ালের উপর বসে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গাইছিল কয়েকজন কিশোর। তাদের একজন শুভ দাস। নিউজবাংলাকে সে বলে, ‘এখানকার পরিবেশ অনেক সুন্দর, রাস্তাগুলো বেশ চওড়া। পাশে থাকা গাছপালাপার কারণে পরিবেশটা আরও সুন্দর লাগে। এমন পরিবেশে কার গান গাইতে মন না চাইবে বলেন?’
সেতু এলাকায় দর্শনার্থীদের সহায়তা করছিলেন ‘বিডি ক্লিন টিম’ এর সদস্যরা। যেখানে সেখানে যেন ময়লা না ফেলা হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখছিলেন তারা। দর্শনার্থীদের ফেলা আবর্জনা পরিষ্কারও করছিলেন তারা।
‘বিডি ক্লিন’ এর জাজিরা উপজেলা শাখার সমন্বয়ক পলাশ খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। পরে নির্ধারিত জায়গার সব ময়লা একত্রিত করে পরিষ্কার করে আমাদের সদস্যরা।’
শরীয়তপুর-১ আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জাজিরা প্রান্তকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হবে। এখানে আসা পর্যটকদের সুযোগ সুবিধা দিতে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেয়া হবে। আন্তর্জাতিক মানের হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তোলা হবে।’
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তে ভায়াডাক্ট (উড়াল সড়ক) আরও ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার।
গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ এগিয়েছে ৯৮ শতাংশ আর নদী শাসনের কাজ ৯২ শতাংশ।
এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী জুনে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হতে পারে সেতুটি।
এটি উদ্বোধনের পর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ২১ জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হবে।