তীব্র গরমে নাজেহাল দক্ষিণ এশিয়া। ভারতে এরই মধ্যে মারা গেছেন অন্তত ২৪ জন। প্রচন্ড এই গরম কেবল মানুষের জীবনকেই বিপন্ন করছে না, অন্যান্য প্রাণিকেও ফেলেছে হুমকির মুখে। দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে শতাধিক পাখিকে পাঠাতে হয়েছে হাসপাতালে।
ভারতের গুরগাঁও শহরের একটি হাসপাতাল বলছে, জ্বর, ডিহাইড্রেশন এবং হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রেকর্ড সংখ্যক পাখির চিকিৎসা দিয়েছে তারা। চলতি সপ্তাহে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১১৪.৮ ফারেনহাইট) পর্যন্ত বেড়েছে।
উত্তর ভারতের গুরগাঁওয়ের চ্যারিটেবল বার্ড হাসপাতালের চিকিত্সক রাজকুমার রাজপুত বলেন, ‘দায়ী হলো তাপ। হাসপাতালে গত বছরের তুলনায় অন্তত ৫০ শতাংশ বেশি পালকযুক্ত রোগী ভর্তি হয়েছে।’
ভারতে ১২২ বছরে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস রেকর্ড হয়েছে মার্চে। ৭২ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়-উষ্ণতম এপ্রিল দেখেছে রাজধানী দিল্লি; গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪.৪ ফারেনহাইট)। প্রতিবেশী পাকিস্তানেও অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রার খবর পাওয়া গেছে।
ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এর মুখপাত্র অরিন্দিতা স্যান্ডিল্যা বলেন, ‘আমরা একের পর ফোন পাচ্ছি। অথচ এখন কেবল মে মাস।’
ভারতের প্রাণী উদ্ধারকারী দল জানিয়েছে, মার্চ থেকে তাপজনিত অসুস্থতায় ২৫০টি পাখির চিকিৎসা দিয়েছে তারা।
‘আশঙ্কা করছি গ্রীষ্ম পুরোপুরি শুরু হলে এই সংখ্যা বাড়বে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতীয় উপমহাদেশে এমন গরমের কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এর প্রভাবে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে তাপপ্রবাহ বেড়েছে।
ভারতে গত ৫০ বছরে তাপপ্রবাহে কমপক্ষে ১৭ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও তাপজনিত মৃত্যুগুলোর রেকর্ড রাখার হার খুবই কম।
ভারতের মহারাষ্ট্রে গত দুই মাসে হিটস্ট্রোকে ২৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আরও কয়েকটি রাজ্যও মৃত্যুর খবর দিয়েছে।
পাখি এবং অন্যান্য প্রাণির ওপর তাপপ্রবাহের প্রভাব সম্পর্কে সরকারি কোনো তথ্য নেই। ভারতের একটি রাজ্যে পোল্ট্রি খামারিরা সম্প্রতি হাজার হাজার মুরগির মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন। অন্য একটি রাজ্যে চারটি নেকড়ে শাবক চিড়িয়াখানার ঘেরে গরমে মারা গেছে।
গরমের তীব্রতায় অসুস্থতায় ভুগছে এমন একটি পাখি ভারতে দাতব্য বার্ড হাসপাতালে পৌঁছায়৷ ছবি: রাজকুমার রাজপুত
ভারতীয় উপমহাদেশের বাইরে গত বছর কানাডার পশ্চিমাঞ্চল এবং যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। দাবানলের কারণে ১০০ কোটির বেশি সামুদ্রিক প্রাণি মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়।
গরমের তীব্রতা থেকে রেখাই পাচ্ছে না পাখিরাও। দক্ষিণ ভারতের শহর হায়দ্রাবাদে গত দুই মাসে ১৬৬টি ডিহাইড্রেড পাখি উদ্ধার হয়েছে বলে জানা গেছে।
চ্যারিটেবল বার্ড হাসপাতালের চিকিৎসক রাজপুত বলেন, ‘এপ্রিল থেকে হাসপাতালে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ৮০টি পাখি ভর্তি হয়েছে। বেশিরভাগ পাখি কবুতর। কিছু পোষা প্রাণি আছে, বাকিগুলো বন্য।
রাজপুত বলেন, ‘পাখিরা আমাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল যেমন জঙ্গলের নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাদের ক্ষতি প্রাকৃতিকে প্রভাবিত করবে।’
The heatwave in India isn't just about temperatures. The country is home to more than a billion people—almost a fifth of Earth's population. Many of them are experiencing oppressive heat.Here's a quick map of cities scaled by population, colored by @NASA GEOS-5 air temps. pic.twitter.com/OumtKsuTvv
— Joshua Stevens (@jscarto) April 29, 2022ওয়াইল্ডলাইফ এসওএস-এর প্রধান কার্তিক সত্যনারায়ণ বলছেন, তাদের দল এমন সব পাখিকে উদ্ধার করেছে যেগুলো আকাশের অনেক ওপরের দিকে উড়ে। শিকার বা জলের সন্ধানে নামার সময় তারা মাটিতে পড়ে যায়। তখন এগুলোকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়া হয়।
পশ্চিম গোলার্ধে গত বছর রেকর্ড তাপমাত্রা ছিল। তাপ সহ্য করতে না পেরে সে সময় বাচ্চা বাজপাখিদের তাদের বাসা থেকে লাফিয়ে পড়তে দেখা গেছে। এভাবে পড়ে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। যারা বেঁচে থাকে তারা কোনো না কোনো আঘাত বয়ে বেড়ায়।
ইতিহাস বলছে, পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণে অতীতে অনেক প্রাণি বিলুপ্ত হয়েছে। অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় জীববিজ্ঞানী জন জে. উইয়েনসের ধারণা, বৈশ্বিক উষ্ণতা যদি সামান্য পরিমাণও বাড়ে তবে ২০৭০ সালের মধ্যে পৃথিবীর সব উদ্ভিদ ও প্রাণির প্রজাতির ১৬ শতাংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
Record breaking temperatures this week have lead to record breaking admissions for wildlife intakes. 12-20 raptors coming in each day. Most are young birds that fled the heat by leaving the nest too soon, or have broken bones from the fall. Our ICU has never been so full pic.twitter.com/TXwVPWGJiW
— OWL Orphaned Wildlife Rehabilitation Society (@OWLRehab) July 3, 2021সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, গত দুই শতাব্দীতে একাধিক প্রাণি উষ্ণ আবহাওয়ার টিকে থাকার জন্য তাদের শরীরের আকার পরিবর্তন করতে বিবর্তিত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বেশ কয়েকটি প্রজাতির পাখির ঠোঁটের আকার বৃদ্ধি পেয়েছে; যা তাপ ছড়ানোর জন্য রক্ত প্রবাহকে সরিয়ে দিতে সহায়তা করে।
নয়াদিল্লির ন্যাশনাল কনজারভেশন ফাউন্ডেশনের গবেষক অশ্বিন বিশ্বনাথন বলেন, ‘পাখিদের হুমকির অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম অতিরিক্ত গরম। উষ্ণ জলবায়ু তাদের খাদ্য সরবরাহ, প্রজনন এবং বাসস্থানকে প্রভাবিত করে৷
‘এই প্রভাবের বিষয়ে অনেক কিছু আছে যা আমরা দেখতে পাই না। তবে আমাদের এটিতে মনোযোগ দিতে হবে।’