ঈদ আনন্দে মাতোয়ারা গোটা দেশ। তবে স্বজনদের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ হয় না সবার। অন্যের ঈদ আনন্দঘন করতে পেশাগত দায়িত্বে সময় কাটাতে হয় তাদের।
ঈদ উৎসবে বেশ কিছু পেশার মানুষের জীবনে থাকে না অবসর। মেলে না ছুটি। দায়িত্ব পালনের মধ্যেই তারা খুঁজে পান ঈদের আনন্দ।
শেরপুরের বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের দিনও অন্যান্য দিনের মতোই ছিলেন কাজে ব্যস্ত।
এই যেমন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী, অ্যাম্বুলেন্সচালক, কারাগারের কর্মী, পরিবহনকর্মী, নিরাপত্তাকর্মী, গণমাধ্যমকর্মীরা সকাল থেকেই যার যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
পুলিশ সার্জেন্ট আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব পালন করতেছি। পরিবার-েপরিজন বাড়িতে ঈদ করতে যাচ্ছে। এতেই আমরা আনন্দিত। তারা যেন সুস্থমতো বাড়িতে যাইতে পারে। রাস্তাঘাটে যাতে যানজট না থাকে। এর জন্য আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।‘
তিনি বলেন, ‘মানুষ যাতে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে পারে- এমনটাই আশা আমাদের। আমরা ছুটি পাই বা না পাই, এইটা আমাদের দায়িত্ব, এইটাই আমাদের আনন্দ। মানুষের সেবা করাই আমাদের ঈদ।
জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ইমার্জেন্সিতে কাজ করি। ইমার্জেন্সিতে আসলে ২৪ ঘণ্টা ডাক্তার থাকেন। ঈদে ওইভাবে ছুটি পাই না। আমাদের আসলে মাঝেমধ্যে হিন্দু সহকর্মীরা সাহায্য করে থাকেন ছুটি কাটাতে। তবে তাতেও সবাই সব ঈদে ছুটি পাই না।’
জেলা সদর হাসপাতালেন নার্স মিনা বেগম বলেন, ‘ঈদে আমাদের এই ছুটি না থাকার জন্য পরিবারের লোকজন মন খারাপ করে। কিন্তু কিছু করার নেই। আমরা সেবা দিয়ে আনন্দ মানুষের মাঝে খুঁজে নিই।’
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বাড়িত ঈদ কাটাবার গেলে মানুষের ঈদ অবো কেমনে? রাতবিরাতে কারেন্টের অসুবিধা হয়। আমরা কাজ করে দিই দ্রুত। আমরা মানুষের সেবাযত্ন করলাম, বাড়িত গেলাম না। এতে আমাদের দুঃখ নাই। পরিবারের লোকজন আমাদের জন্য অপেক্ষা করে, তবু কিছু করার নাই।’
বছরের পর বছর ধরেই এভাবে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা কাজ করে আসছেন। তবে কয়েক বছর ধরে বিষয়টি সাধারণ মানুষের আলোচনায় আসছে।
ঈদের ছুটিতেও দায়িত্বে বিরতি নেই চিকিৎসকদের। ছবি: নিউজবাংলা
শেরপুর পৌর শহরের উত্তর গৌরীপুর মহল্লার আক্রাম মিয়া বলেন, ‘প্রশাসনের লোকেরা আমাদের সেবা দেয়ার জন্য তারা নিজেরা ছুটি না নিয়ে কাজ করে যান। আমরা তাদের মাধ্যমে নিরাপত্তা পাই। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা জানি, আমাদের মতো তাদের মনও চায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে।’
শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোমিনুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে জনসেবাই প্রশাসন। আমরা যারা সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত আছি, মানুষের সেবার জন্যই আছি। বিভিন্ন ঈদ, পূজায় উৎসব পালনের জন্য ছুটি থাকলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে যারা আছে তারা ছুটিটা নিজের পরিবারের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পাই না।’
তিনি বলেন, ‘মানুষকে কষ্টের মধ্যে ফেলে ঈদ আনন্দ করাই আমাদের জন্য কষ্টকর হবে। তাই আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষের সেবা দিয়ে থাকি। মানুষের সেবার মাঝেই আমরা ঈদ আনন্দ খুঁজে পাই।’