বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নদীতে মাছ নেই, জেলেপাড়ায় নেই ঈদ

  •    
  • ৩ মে, ২০২২ ২০:২১

‘ঈদের দুই দিন আগে রাত ১২টার দিকে আমরা সাতজন জেলে নদীতে ইলিশ শিকারে গিয়েছিলাম। সকাল ৬টা পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরি। তবে বড় সাইজের ইলিশের দেখা না মিলেও ১০-১২টা জাটকা পেয়েছি। ঘাটে বিক্রি করে ১ হাজার ৮০০ টাকা পাই। কিন্তু ট্রলারের তেল ও আমাদের খাবার খরচ বাবদই ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা।’

ঈদে মানুষ যখন প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত, তখন ভোলার জেলেপল্লিতে হাহাকার। ঈদের আনন্দ নেই সেখানকার পরিবারগুলোয়।

মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া ১৯০ কিলোমিটার জলসীমায় নিষেধাজ্ঞার পর নদীতে ইলিশ না থাকায় তাদের ঈদের আনন্দ মাটি। ঈদের দিন ঘরে মিষ্টান্ন, শিশুদের গায়ে নতুন জামা- হয়নি বহু পরিবারে।

দিন-রাত নদীতে জাল ফেলে যে দু-চারটি ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তাতে খরচের টাকাও উঠছে না। তবে এনজিও ও মহাজনের দাদনের টাকা ঠিকই পরিশোধ করতে হচ্ছে।

ভোলার মেঘনাপাড়ের ইলিশা, তুলাতুলি, নাছির মাঝি, ভোলার খালসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ছোট-বড় ঘাটে ঈদের মৌসুমে আগের মতো ছিল না কর্মচাঞ্চল্য। আড়তদারদের মাছের বাক্সগুলো কদিন ধরেই ছিল খাঁ খাঁ।

ইলিশা মাছঘাটের জেলে রফিকুল মাঝি বলেন, ‘ঈদের দুই দিন আগে রাত ১২টার দিকে আমরা সাতজন জেলে নদীতে ইলিশ শিকারে গিয়েছিলাম। সকাল ৬টা পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরি। তবে বড় সাইজের ইলিশের দেখা না মিলেও ১০-১২টা জাটকা পেয়েছি। ঘাটে বিক্রি করে ১ হাজার ৮০০ টাকা পাই। কিন্তু ট্রলারের তেল ও আমাদের খাবার খরচ বাবদই ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৭০০ টাকা।’

তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পর আশা করেছিলাম নদীতে অনেক মাছ ধরতে পারব। কিন্তু জাল ফেলে আশানুরূপ ইলিশ পাইনি।’

তুলাতুলী মাছঘাটের রহিম মাঝি বলেন, ‘অভিযানের সময় আমরা নদীতে যাই নাই, মাছও ধরতে পারি নাই। আশায় আছিলাম অভিযান শেষে নদীতে যাইয়া মাছ ধইরা বিক্রি করে আগের দেনা পরিশোধ করতে পারমু। কিন্তু নদীত এখন মাছের যেই অবস্থা তাতে দেনার দায়ে দেশ ছাইড়া পলাইতে হইব।’

আবু মাঝি বলেন, ‘অভিযান শেষে অনেক আশা লইয়া গাঙ্গে (নদীতে) গেছিলাম কয়ডা মাছ ধরমু, তা বিক্রি কইরা বাড়িত পোলাইনের লইগা নতুন জামা আর সেমাই কিনমু। কিন্তু নদীতে যাইতে ট্রলারের তেলসহ খরচ হইছে ৭০০-৮০০ টাকা। মাছ বিক্রি করেছি ১ হাজার ১০০ টাকার।’

ধনিয়া তুলাতুলী মাছঘাটের আড়তদার মো. নাছিম বলেন, ‘শুধু ইলিশ নয়, অন্য প্রজাতির মাছের দেখাও পায়নি। দুই মাসের নিষেধাজ্ঞার পর তেমন কোনো মাছ ঘাটে আসেনি। এখন দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি মোকামে কী মাছ পাঠাব।’

ভোলা জেলা মৎস্যজীবী সমিতি সভাপতি এরশাদ ফরাজি বলেন, ‘এই অভিযানের সময় আমাদের জেলেদের সরকারের পক্ষে চার মাসে ১৬০ কেজি চাল প্রণোদনা হিসেবে দেয়ার কথা থাকলেও দুই মাসের চাল ৫০ থেকে ৬০ কেজি করে দিছে। কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরও বাকি দুই মাসের চাল জেলেরা এখনও পায়নি। জেলেদের বাকি দুই মাসের চাল যাতে অতি দ্রুত দেয়া হয়, এটাই আমাদের দাবি।’

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম আজহারুল ইসলাম জানান, মার্চ-এপ্রিল দুই মাস ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়ার ১৯০ কিলোমিটারসহ দেশে ছয়টি অভয়াশ্রমের মিঠাপানিতে ইলিশ বিচরণ করে। এ সময়টা ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এ সময় এখানে বিচরণ শেষে মাছগুলো সাগর মোহনায় চলে যায়। এ কারণে সাগর ও সাগর মোহনায় ইলিশের পরিমাণ বেশি রয়েছে। মেঘনা তেঁতুলিয়ায় ইলিশ কম পাওয়া যাচ্ছে। তবে পর্যপ্ত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হলে মেঘনা তেঁতুলিয়ায় আবার ইলিশের দেখা মিলবে।’

মার্চ-এপ্রিল- এই দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকার সময় ভোলায় ৪০০টি অভিযানে ৮৯৭ জন জেলেকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ১১২ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড হয়। বাকিদের ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোলায় প্রায় দুই লাখ জেলে নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত জেলে ১ লাখ ৩৯ হাজার। মৎস্য বিভাগের মতে, দেশের ইলিশের চাহিদার প্রায় ২৫ শতাংশ ভোলা থেকেই উৎপাদন করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর