ফ্যাশন কখনও এক জায়গায় স্থির বা নির্দিষ্ট কোনো বিষয় না। এটা সময়ের সঙ্গে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে চলতে থাকে। তাই এখন যেটা হালফ্যাশন, কিছু দিন পরেই হয়তো সেটা হয়ে যাবে ওল্ড ফ্যাশন। আসলে ফ্যাশন ধারায় সব সময়ই নিরীক্ষা চলতে থাকে। তবে আমাদের দেশে সাধারণত বড় কোনো উৎসবকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয় ফ্যাশন ট্রেন্ড বা ফ্যাশনের চলতি ধারা। আমাদের দেশে বড় উৎসব মানে ঈদ, পূজা, বর্ষবরণ। এখন অবশ্য আরও কিছু দিবসভিত্তিক উৎসবকে কেন্দ্র করে ফ্যাশন ধারার নতুনত্ব দেখা যায়। যেমন বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, নারী দিবস, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, ভাষা দিবস। এসব উৎসব উপলক্ষে ডিজাইনাররা গ্রাহকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন নতুন ফ্যাশন ট্রেন্ডের। পোশাকে ফ্যাশন ধারায় মূলত নিজস্ব সংস্কৃতিকেই তুলে ধরা হয়। আবার শুধু ট্র্যাডিশনাল সোর্স দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ফ্যাশন ধারা তৈরি হয় না। তাই অনেক সময় দেশি ও বিদেশি উপকরণের সংমিশ্রণে আন্তর্জাতিক মানের ট্রেন্ড তৈরি হয়। আবার ফ্যাশন ধারায় অনেক সময় আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অনুসারী যেমন হতে হয়, তেমনি ক্রেতার মনোভাবের ওপরও খানিকটা নির্ভর করতে হয়। তবেই সেই ধারা অনেক বেশি জনপ্রিয়তা পায়।
ঈদের পোশাকে ফ্যাশন ধারা
ঈদুল ফিতর মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব। ডিজাইনাররা বলে থাকেন, সারা বছর আমরা যত কাজ করি তার সিংহভাগ এই ঈদকে কেন্দ্র করেই। কাজেই নতুন ট্রেন্ড ঈদের পোশাকেই অনেক বেশি লক্ষণীয়। ঈদের পোশাকের রঙের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো রং নেই। যেহেতু ধরাবাঁধা কিছু নেই, তাই ডিজাইনাররা ইচ্ছেমতো রং নিয়ে কাজ করতে পারেন। তবু একেক ঈদে দেখা যায় কিছু রং প্রবলভাবে দখল করে আছে ঈদের পোশাকের ক্যানভাস। তবে নিরীক্ষা চলে পোশাকের নকশা, মোটিফ, কাটিং এবং অন্য কিছু ক্ষেত্রে। ঈদে শাড়ি নারীদের পোশাকের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখল করে আছে। হাজারটা শাড়ি থাকলেও ঈদে হাল ফ্যাশনের একটা শাড়ি না হলে যেন চলেই না। শাড়ির ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায় ডিজাইনের নানা পরিবর্তন। ছোট পাড়, বড় পাড়, কখনো কুঁচিতে ডিজাইন, কখনওবা আঁচলে বেশি ডিজাইন। কাজের মাধ্যম হিসেবে কখনো ব্লক প্রিন্ট জনপ্রিয় তো কখনওবা এমব্রয়ডারি, হাতের সেলাই, কারচুপি, হ্যান্ডপেইন্ট ইত্যাদির নিরীক্ষা চলতেই থাকে। ব্লাউজের ডিজাইনেও পরিবর্তন দেখা যায়। হাতায়, গলায়, কাজে। সালোয়ার-কামিজের ক্ষেত্রে কামিজের কাটিং, হাতার ডিজাইন, গলার ডিজাইন, নকশার মোটিফ, কাজের মাধ্যম ইত্যাদির পরিবর্তন দেখা যায়। তবে গত এক দশকে মেয়েদের সালোয়ারের ডিজাইনে অনেক বেশি বৈচিত্র্য দেখা গেছে। কখনো চাপা সালোয়ার তো কখনো ঢিলেঢালা। আবার চুড়িদার, চোস্ত, সারারা, লেগিংস, জেগিংস এবং হালের প্লাজো। ছেলেদের পাঞ্জাবির ডিজাইনেও নানা পরিবর্তন দেখা গেছে। কখনো লম্বায় বেড়েছে আবার কখনোবা হাঁটুর ওপরে উঠেছে। নকশায় পরিবর্তন তো ছিলই। বৈচিত্র্য ছিল রঙেও। একটা সময় ঈদের পাঞ্জাবি মানে সাদা রং ছিল। এখন সব রঙেরই পাঞ্জাবি পাওয়া যায়। এমনকি আগে যে রংগুলো শুধু মেয়েরাই পরত, ছেলেদের পাঞ্জাবিতে এখন সে রংগুলোও দেখা যায়। যেমন লাল, গোলাপি, বেগুনি ইত্যাদি। যার যার বয়স ও রুচি অনুযায়ী বেছে নেন। ডিজাইনে পরিবর্তন দেখা যায় ছোটদের পোশাকেও।
কেমন হচ্ছে এবারের ঈদ পোশাকের ফ্যাশন ধারা? জানতে চাইলে ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিশ্বরঙের স্বত্বধিকারী বিপ্লব সাহা বলেন, আসলে দুইটা বছর তো আমরা পার করেছি করোনার মধ্যে। এখন যেহেতু ঘুরে দাঁড়ানোর একটা ব্যাপার আছে। তাই অনেকগুলো বিষয় মাথায় রেখে আমরা ঈদের কাজ করেছি। এবার আসলে ঈদ আর বৈশাখ পাশাপাশি আসছে। এই বিষয়টি মাথায় নিয়েই পোশাকের ডিজাইন করেছি। আসলে কে যে কোনটা কিনবে এটা তো আমরা জানি না। তাই পোশাকের কালারটোনে ফেস্টিভ লুকটা রাখতে চেষ্টা করেছি। যেন যেকোনো উৎসবেই পোশাকটা পরা যায়। এবার একটা শাড়ি করেছি আমরা। নাম দিয়েছি মৃগয়নী। একদম গর্জিয়াস লুকের শাড়িটা। মাল্টি কালারে সুতায় ট্রাইবাল, শতরঞ্জি, জিওমেট্রিক ইত্যাদি প্যাটার্ন ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে শাড়ি যেহেতু এখন আর মানুষ ঘরোয়াভাবে পরে না, উৎসব- অনুষ্ঠানে পরে, আমরা তাই কাতান, সিল্ক, হাফ সিল্ক, এন্ডি ইত্যাদি মেটেরিয়াল ব্যবহার করেছি। ছেলেদের পাঞ্জাবিতেও এবার গর্জিয়াস লুক করেছি। শার্টেও ভেরিয়েশন আছে। ছোটদের পোশাকেও ফেস্টিভলুক ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তবে এবার পোশাকের রঙে একটা বড় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছি। বিশ্বরঙ সব সময় উজ্জ্বল রং নিয়ে কাজ করে। কিন্তু এবার আমরা তুলকামূলকভাবে হালকা রং বেশি ব্যবহার করেছি। তবে যেখানে যেখানে উজ্জ্বল রং ডিমান্ড করে, সেখানে তো ব্যবহার করা হয়েছেই। কিন্তু রং হালকা হলেও সাইশিলুকটা থাকবে। কারণ উৎসবে তো আর ম্যাটমেটে রং মানায় না। উৎসব মানেই রঙিন।