করোনার কারণে দুই বছর খোলা ময়দানে বন্ধ ছিল ঈদ জামাত। সামাজিক বিধিনিষেধ থাকায় হয়নি কোলাকুলি। এভাবেই কেটে গেছে চারটি ঈদ। তবে এবার সেই চিরচেনা রূপে ফিরেছে ঈদগাহ ময়দানগুলো।
অবশেষে মহামারির শঙ্কা কাটিয়ে মঙ্গলবার খোলা মাঠে ঈদের নামাজে দাঁড়ালেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে সামাজিক দূরত্ব ভুলে হয়েছে কোলাকুলি। দেখা মিলেছে সৌহার্দ্যর।
জিহাদ এবং জিহান দুই ভাই। রাজধানীর ধানমন্ডির ঝিগাতলা থেকে বাবার সঙ্গে হাইকোর্টেরে পাশে জাতীয় ঈদগাহে নামাজ পড়তে এসেছে। সকালে নামাজ শেষে প্রথমেই দুই ভাই কোলাকুলি করল। এরপর আশেপাশের অনেকের সঙ্গেই কোলাকুলিতে অংশ নিল তারা।
এ দুই ভাইয়ের মত পরিচিত-অপরিচিত অনেককেই সব ভেদাভেদ ভুলে বুকে বুক মিলিয়ে কোলাকুলি করতে দেখা গেল জাতীয় ঈদগাহে।
ঈদের নামাজ শেষে ঈদগাহে কোলাকুলি সৌহার্দ্য ও ভালোবাসার বন্ধনে সবাইকে নতুন করে আবদ্ধ করে। ঈদ ছাড়া এমন দৃশ্য সহজে দেখা যায় না।
এদিন সকাল সাড়ে ৮টার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে হাজার হাজার মুসল্লি প্রধান ঈদের জামাতে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধ কামনায় দোয়া করা হয়। দোয়া শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন মুসল্লিরা।
জামায়াতে অংশ নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যরা, জাতীয় সংসদ সদস্য, বিচারপতি, কুটনৈতিকসহ সাধারণ মানুষ।
নামাজের ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের প্রধান খতিব মাওলানা রুহুল আমীন। নামাজ শেষে দেশ, জাতি ও মানুষের কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করা হয়।
জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে রায়ের বাগ থেকে এসেছেন জিয়াউল ইসলাম। সঙ্গে আট বছরের ছেলে সিফাত। সিফাতের বাবা জানান, চার বছর বয়স থেকেই ছেলেকে ঈদগাহে নিয়ে আসেন তিনি।
বাবা-ছেলে এক সঙ্গে বড় জামাতে নামাজ আদায় করে একে অন্যের সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
একই রকম পাঞ্জাবি-টুপি পড়ে মীরপুর থেকে ঈদ জামাতে এসেছে শরিফুল, মেহেদী, সাকিব ও তুষার। নামাজ শেষে চার বন্ধু কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ উদযাপন করেন।
শরিফুল বলেন, ‘ইসলাম ধর্মে ধনী-গরিব, আমির-ফকির, রাজা-প্রজা সবাই সমান। সবাই এক জামাতে নামাজ আদায় করে কোলাকুলি করা ইসলাম ধর্মের রেওয়াজ।
‘প্রতি বছরই আমরা জাতীয় ঈদগাহে নামাজ আদায় করতে আসি। নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করে আমরা বাসায় ফিরি।’
পুরান ঢাকার নাজিরাবাজার থেকে নামাজ পড়তে আসা মিল্টন আনোয়ার বলেন, ‘এখন তো আর ছেলেবেলার সেই কোলাকুলির দৃশ্য দেখা যায় না। এখন তো ঈদের কোলাকুলির দৃশ্য টিভি ও খবরের কাগজে দেখা যায়।’