প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকা ছেড়েছেন বিপুলসংখ্যক মানুষ। তাদের বেশির ভাগেরই কর্মস্থল ঢাকা, তাই ফিরেছেন গ্রামের বাড়িতে। তবে এমন অনেকেই আছেন, যাদের স্থায়ী বাড়ি ঢাকায় কিন্তু কর্মস্থল দেশের অন্য জেলায়। সেসব মানুষ ঈদ করতে কর্মস্থল থেকে ঢাকায় ফিরছেন।
তারা বলছেন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মানুষ যতটা খুশি হন, তারাও ঠিক ততটাই আনন্দিত হন ঢাকায় ফিরে। এই শহরেই তাদের স্থায়ী বাস, বেড়ে ওঠা। তাই আনন্দ কোনো অংশেই কম নয় তাদের।
এ ছাড়া ঈদের মধ্যে সবাই ঢাকা ছেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য যাত্রাটা কিছুটা সহজ ও আরামদায়ক বলে জানান তারা।
রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) কর্মকর্তা হোসাইন আকবর (ছদ্মনাম)। উত্তরাঞ্চলের একটি শাখার ম্যানেজার তিনি। চাকরি সূত্রে উত্তরের একটি জেলায় থাকতে হয়, তবে স্থায়ী বাড়ি রাজধানীর বকশীবাজারে। স্ত্রী ঢাকার একটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। সন্তানদের লেখাপড়া ঢাকাতেই।
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা বনলতা এক্সপ্রেসে কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছান হোসাইন আকবর। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ছুটিতে আসলাম পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে। প্রতি বছরই আমাকে আসতে হয়, কারণ স্ত্রী-সন্তানরা ঢাকায় থাকে। আমি চাকরির সুবাদে বাইরে থাকি।’
হোসাইন আকবর বলেন, ‘ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে গিয়ে মানুষ যেমন তৃপ্তি পায়, আনন্দিত হয়, আমরাও ঠিক ততটাই আনন্দিত হই। কারণ এটি আমার শহর, আমার বাড়ি এখানেই, পরিবারের সবাই এখানে থাকে।’
তিনি বলেন, ‘এই সময় ঢাকা বেশ ফাঁকা হয়ে যায়। প্রাণভরে মুক্ত হাওয়ায় একটু শ্বাস নিতে পারি। আমরা চলেফিরে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আত্মীয়স্বজনের বাসায় গিয়ে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করি।’
যাত্রাপথেও সুবিধা পাওয়া যায় উল্লেখ করে হোসাইন আকবর বলেন, ‘ঈদ মৌসুমে ঢাকা থেকে অন্য জেলায় যাওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের চাপ থাকে, অনেক ভিড় হয়, ভোগান্তি সহ্য করতে হয়। কিন্তু ঢাকায় ফেরার চাপ থাকে না। যার কারণে ঈদযাত্রা আমাদের জন্য খুবই সুন্দর, সহজ ও উপভোগ্য।
‘ফেরার পথেও একই রকম সুবিধা পাওয়া যায়। কারণ সবাই যখন ঢাকায় ফেরেন, আমরা তখন ঢাকা ছাড়ি। তখনও মানুষ কম থাকে, আরামে যাত্রা করতে পারি।’
টাঙ্গাইল থেকে সকালের দিকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান আনোয়ারা রহমান। বেসরকারি এই চাকরিজীবী জানান, ছেলেকে নিয়ে ঈদ করতে ফিরছেন, কেরানীগঞ্জে শ্বশুরবাড়িতে যাবেন।
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে সবারই ভালো লাগে। আমিও এর ব্যতিক্রম নয়।’
যাত্রাপথের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসার সময় যাত্রী কমই ছিল। কারণ এখন ঢাকা থেকে সবাই বাড়ি যাচ্ছে, এ জন্য ঢাকায় আসার মানুষ কম।’
ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন সোহেল মাহবুব। সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
সোহেল জানান, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে রয়েছে তার পরিবার। কর্মক্ষেত্র জামালপুর। তিনি একাই সেখানে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করব, এটাই আনন্দের বিষয়। তা ছাড়া করোনা সংক্রমণের ভয়ে, বিশেষ করে বাড়ির বৃদ্ধ ও শিশুরা যাতে আক্রান্ত না হন তার জন্য গত বছর ঈদের মধ্যে বাড়িতে আসিনি। এবার ঈদে আসলাম। পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্যই ফিরেছি।’
ঢাকায় ফিরে কেমন লাগছে- উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবার যেমন ভালো লাগার অনুভূতি, আমারও তেমন, এটা বলে বোঝানো যাবে না।’
সিল্কসিটি এক্সপ্রেসে দুপুরের দিকে রাজশাহী থেকে ঢাকা ফেরেন ব্যবসায়ী মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘ব্যবসার কাজে বছরের বেশির ভাগ সময় ঢাকার বাইরে থাকি। ঈদের মধ্যে তো আর বাইরে থাকা যায় না। পরিবারের মানুষজন অপেক্ষায় থাকে।’
ঈদের ছুটির মধ্যে ঢাকা শহর অনেক সুন্দর থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই কয়েকটা দিন ঢাকা শহর শান্ত থাকবে। ঢাকার রাস্তায় বেরিয়ে শান্তিমতো ঘোরা যাবে। ছুটি শেষ হলেও আবারও সেই শোরগোল, হইচই, কোলাহল।’