এবারের ঈদে বাড়তি আনন্দ রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলাবাসীর। ঈদের আগেই তারা পেয়েছেন খেলার মাঠ। থানা ভবন নির্মাণের কাজ বন্ধ হওয়ায় তেঁতুলতলা মাঠে গত ৫০ বছরের মতো এবারও ঈদ জামাতের আয়োজন করা হচ্ছে।
মাঠ পরিষ্কার করে প্যান্ডেল বানানোর কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের তত্ত্বাবধানে মাঠকে ঈদের সাজে সাজানো হয়েছে। টানানো হয়েছে ব্যানার।
ঈদের আগের দিন সোমবার দুপুরে সেখানে দেখা গেছে, কয়েকজন শিশু মাঠে খেলছে। মাঠ জুড়ে সামিয়ানা টানানোর জন্য বাঁশ পুঁতে কাঠামো বানানো হয়েছে। কাঠামোতে কাপড় জড়ানো শুধু বাকি।
মাঠের পাশেই উত্তর ধানমন্ডি জামে মসজিদ। এই মসজিদ কমিটিই ঈদ জামাতের আয়োজন করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদ কমিটির সদস্য এ কে এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘এই মাঠে ঈদের জামাত নতুন নয়। প্রতি বছরই শত শত মানুষ এই মাঠে ঈদের জামাতে অংশ নেন। এবারও সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, শুধু মাঠ নয়, জামাত শুরুর পর মাঠের পাশেও মুসল্লিরা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। ৭-৮শ’ মানুষের জামাত হয় এই মাঠে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় মাঠটিতে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে তেঁতুলতলা মাঠ। ছবি: নিউজবাংলা
পরিত্যক্ত এই মাঠটি বরাদ্দ পেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি সেখানে কাঁটাতারের বেড়া দেয় পুলিশ। কলাবাগান থানার স্থায়ী ভবন নির্মাণ হবে বলে টানানো হয় সাইনবোর্ড। এরপর থেকেই শুরু হয় তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলন।
গত ২৪ এপ্রিল সকালে মাঠ রক্ষার আন্দোলনে থাকা সৈয়দা রত্না ও তার ছেলে ঈসা আব্দুল্লাহকে আটক করে পুলিশ। প্রায় ১৩ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার পর মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পান মা ও ছেলে।
রত্না ও তার ছেলেকে আটক করার পর মাঠ রক্ষার আন্দোলন আরও জোরদার হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি অধিকার কর্মীরা মাঠ রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হন।
দফায় দফায় সভা সমাবেশ, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বসেনও তারা।
সচিবালয়ে ২৭ এপ্রিল অধিকার কর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুনির্দিষ্ট কোনো আশ্বাস না দিলেও বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।
পরদিন ২৮ এপ্রিল দুপুরে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী সেখানে আপাতত থানা করতে নিষেধ করেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা আসার পর আনন্দে মেতে ওঠেন শিশু, কিশোর, স্থানীয় বাসিন্দা ও অধিকার কর্মীরা। ওইদিন রাতেই মাঠ থেকে পুলিশি পাহারা উঠিয়ে নেয়া হয়।
থানা ভবন নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরুর পর মাঠটি নিয়ে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কেটে যায়। সেইদিনই ঘোষণা দেয়া হয়, এবারও এই মাঠে ঈদের জামাত হবে। সেভাবেই জামাতের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তেঁতুলতলা মাঠ।
মাঠে ঈদ জামাতের প্রস্তুতি দেখে উচ্ছসিত মাঠ রক্ষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সৈয়দা রত্না। তিনি বলেন, ‘মাঠে প্রতি বছর ঈদ জামাত হলেও কখনও ব্যানার করা হয়নি। এবার ব্যানার করা হয়েছে। মাঠে জামাতের প্রস্তুতি দেখে আনন্দ লাগছে।’