রাজধানীতে চলছে শেষ সময়কার ঈদ কেনাকাটা। বেচাকেনা জমে ওঠায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার বিপণিবিতানগুলো। গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে উপচেপড়া মানুষের ভিড়। তবে ক্রেতাদের এমন উপস্থিতিতেও প্রত্যাশার সঙ্গে বাস্তবতা মেলাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদবাজার একেবারেই সীমিত ছিল। এবার স্বাস্থ্যবিধি না থাকায় ঈদবাজার জমবে বলে তারা ভেবেছিলেন। কিন্তু তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি।
মাঝে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষের প্রভাব ঈদ কোনাকাটাতেও পড়েছে বলে জানান তারা।
নিউ মার্কেটে জুতার দোকান আছে কবির হোসেনের। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা তো পূরণ হওয়ার পথে ছিল। মাঝখানে ঢাকা কলেজের সঙ্গে গ্যাঞ্জাম হইছে, তখনই ঝামেলা হইয়া গেছে। প্রাইভেট গাড়িওয়ালা কাস্টমার একেবারেই এবার আসেনি।’
ফুটপাত থেকে এবার পণ্য বেশি কেনাবেচা হয়েছে বলে জানান তিনি।আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘বিগত সপ্তাহে কিছু বেচাকেনা হইছে। তবে করোনার সময়ে যেটুকু হইছে আর এই সময়ে সব খোলা তাও কিছুই হয় নাই। আইজ-কালকে একটা টেনশনের মধ্যে আছি, কারণ পার্টিগো তো টাকা দেয়ার কিছু বিষয় থাকে।’
গত ১৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। দুদিন ধরে চলা দফায় দফায় সংঘর্ষে নিহত হন দুজন। আহত হন অর্ধশতাধিক।
রোববার বিকেলে নিউ মার্কেট এলাকায় গিয়ে দেখা মিলল সবুজ মিয়ার। ফুটপাতে জুতা বিক্রি করেন তিনি। নিউজবাংলাকে বলেন, ‘গত দুই বছর মানুষ তেমন বের হই নাই। এহন মানুষ বের হইতেছে। এই কয়দিন বিক্রি ভালো। তবে আগের মতন না।’
ঈদের আগে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে বেচাকেনা বন্ধ থাকে কয়েকদিন। সেই কথা স্মরণ করে তিনি বললেন, ‘ঈদের বিক্রির শুরুর সময়ই গ্যাঞ্জাম লাগল। ওই সময়ে কয়দিন বিক্রি বন্ধ ছিল। শেষে আইসা আর কুলানো যায় নাই।’
শেষ সময়ে বিক্রি বাড়বে কি না প্রশ্নের উত্তরে এই বিক্রেতা বলেন, ‘না। মানুষ তো এখন গ্রামমুখী। এহন আর তেমন বেচাকেনা হইব না।’
নিউ মার্কেটে ঈদের পোশাক কিনতে এসেছেন রহিম হোসেন। পরিবারের সদস্যদের জন্য মার্কেটে ঘুরে ঘুরে শাড়ি, থ্রি-পিসসহ পাঞ্জাবি কিনেছেন বলে জানালেন।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আসলে ঈদের তো এক-দুদিন বাকি। এই সময়ে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি নেয়। কিন্তু তেমন বেশি মনে হচ্ছে না। স্বাভাবিক আছে।’
ফুটপাতে নারীদের রেডি পোশাক বিক্রি করেন কামরুজ্জামান। ঈদের বিক্রি কেমন জানতে চাইলে বলেন, ‘মানুষের প্রত্যাশার শেষ নাই। তবে শেষ বেলায় যা দিছে আল্লায় ভালোই দিছে৷’
ঢাকার নিউ মার্কেট সমিতির সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বছর ঈদ কেনাকাটায় যে প্রত্যাশা ছিল শেষ পর্যন্ত তার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছোঁয়া যেতে পারে।’
বেশ কয়েক দিন ধরে মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের যে প্রত্যাশা সে অনুযায়ী বিক্রি হয়নি। মানুষ এবার বাড়িতে চলে গেছেন আগেই। সেখানে গিয়ে শপিং করছেন অনেকেই৷ আবার দোকানগুলোয় বিক্রি তেমন হচ্ছে না।’
তবে সামনের এক দিনে তাদের প্রত্যাশার ৬০ শতাংশ পূরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
এদিকে নিউ মার্কেট থেকে বেরিয়ে রাজধানীর ফার্মগেটে এসে দেখা গেল, শপিংমলের চেয়ে ফুটপাতে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি।
তবে গতবারের তুলনায় এবারে বিক্রি ভালো হয়নি বলেই জানালেন ব্যবসায়ীরা।
এলিফ্যান্ট রোডে স্প্যারো শোরুমের ব্যবস্থাপক হাশেম। নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গতবার করোনার মধ্যে যে বেচাকেনা তার চেয়ে কম হইছে এবার। মানুষজন তেমন কেনাকাটা করছে না। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেও তেমন বিক্রি করতে পারছি না।’
আজিজ সুপার মার্কেটে এসেও দেখা গেল ক্রেতাশূন্য অবস্থা।
ফার্মগেটের ফুটপাতে কসমেটিকসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন শাহ পরান। ঈদের বেচাকেনা ভালোই হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তবে আজকে একটু খারাপ। এখনও চাপটা শুরু হয় নাই।’