বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

রান্নাঘরের যন্ত্রপাতি

  • এস. এম. আতাউর রহমান   
  • ১ মে, ২০২২ ১৫:০৪

প্রযুক্তি যত এগিয়েছে, ততই যেন আদিকালের যন্ত্রের আবেদন ফুরিয়ে আসছে। বদলে রান্নাঘরে দেখা যাচ্ছে আধুনিক নানা যন্ত্র। ফলে এখন আর সেভাবে শিলপাটা বা পাটাপুতার দরকার হয় না। বৈদ্যুতিক ব্লেন্ডার, হ্যান্ড ব্লেন্ডারেই সহজে করা যাচ্ছে মসলার গুঁড়া থেকে শুরু করে বাটাবাটির কাজ। শুধু তাই নয়, আধুনিক আরও নানা কাজের যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে রান্নাঘরে।

পাটা আর পুতা ছিল একসময় রান্নাঘরের প্রধান যন্ত্র। একটু বনেদি ঘর হলে দেখা যেত হামানদিস্তা। আদিকালের এসব যন্ত্রের আবেদন ফুরিয়েছে অনেক আগেই। এখন নানা রকম আধুনিক যন্ত্রপাতির ঠাঁই হয়েছে হেঁশেলে। সেসবেরই খোঁজ জানাচ্ছেন এস এম আতাউর রহমান

-

হলুদ বাটো মেন্দি বাটো, বাটো ফুলের মৌ, বিয়ের সাজে সাজবে কন্যা নরম নরম বউরে...গানে যে হলুদ ও মেন্দি বাটার কথা বলা হয়েছে, একসময় হলুদ, মেন্দির মতো মরিচ, পেঁয়াজ, হলুদসহ যাবতীয় বাটাবাটি করতে হতো পাটাপুতায়। কোথাও কোথাও শিলপাটা নামেও পরিচিত এই পাথুরে যন্ত্রটি। একসময় গ্রামবাংলা তো বটেই, শহরের বাসাবাড়িতেও রান্নার মসলা তৈরিতে প্রধান যন্ত্র ছিল এটিই। কিন্তু প্রযুক্তি যত এগিয়েছে, ততই যেন এসব আদিকালের যন্ত্রের আবেদন ফুরিয়ে আসছে। বদলে রান্নাঘরে দেখা যাচ্ছে আধুনিক নানা যন্ত্র। ফলে এখন আর সেভাবে শিলপাটা বা পাটাপুতার দরকার হয় না। বৈদ্যুতিক ব্লেন্ডার, হ্যান্ড ব্লেন্ডারেই সহজে করা যাচ্ছে মসলা গুঁড়া থেকে শুরু করে বাটাবাটির কাজ। শুধু তাই নয়, আধুনিক আরও নানা কাজের যন্ত্রপাতি যোগ হয়েছে রান্নাঘরে।

-

ব্লেন্ডার

বাজারে এখন দুই ধরনের ব্লেন্ডার পাওয়া যায়। একটি বিদ্যুচ্চালিত আরেকটি হ্যান্ড ব্লেন্ডার। হ্যান্ড ব্লেন্ডার চালাতে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগের দরকার হয় না। হাত দিয়েই চালানো যায়। বৈদ্যুতিক ব্লেন্ডারের মধ্যে আবার দুই রকম রয়েছে। একটি দিয়ে শুধু মসলা, চাল ইত্যাদি গুঁড়া করা যায়। এটাকে অনেকেই গ্রাইন্ডার বলে থাকে। আরেকটি আছে যেটি দিয়ে মসলা গুঁড়া, বাটা বা পেস্টসহ বিভিন্ন শরবত, জুস বানানো যায়। এ জন্য আলাদা আলাদা অংশ ভাগ করা থাকে ব্লেন্ডারে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ব্লেন্ডার পাওয়া যায়। মানভেদে একেকটার দাম একেক রকম। ওয়ালটন, ভিশন, যমুনার মতো দেশি ব্র্যান্ডের যেমন ব্লেন্ডার পাওয়া যাবে তেমনি সনি, ওসাকা, নিমা, ইলেক্ট্রা, নোভা, প্যানাসনিকের মতো বিদেশি ব্র্যান্ডের ব্লেন্ডার পাওয়া যাবে। দাম পড়বে ৯৯০ থেকে ১৫ হাজার টাকা।

-

রুটি মেকার

রুটি মেকার

গৃহিণীদের রান্নাঘরে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয় রুটি বেলতে গিয়ে। তার ওপর হাত যদি ভালো না হয় তো রুটি বেলতে গেলে গোল না হয়ে মানচিত্র হয়ে যায়। একেকটি রুটি বেলতেও সময় লাগে। এসবেরই সহজ সমাধান হয়ে এসেছে আধুনিক রুটি মেকার। কয়েক বছর ধরেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় ভালো ভিড় দেখা যায় রুটি মেকারের স্টলগুলোতে। এতে রুটি বানাতে পিঁড়িতে বেলনি দিয়ে বেলার দরকার নেই। এক টুকরা আটার দলা এর ভেতরে রেখে হাত দিয়ে লাঠিতে চাপ দিলে নিমিষেই গোল রুটি তৈরি হয়ে যায়। গৃহসামগ্রীর দোকান ও অনলাইনেই কিনতে পাওয়া যাবে রুটি মেকার। দাম পড়বে ২২০০ থেকে ৪ হাজার ৫ টাকা। এ ছাড়া ইলেকট্রিক রুটি মেকারও কিনতে পাওয়া যায়। এসব রুটি মেকার নিজেই রুটি বানানোর পাশাপাশি গরম গরম ভেজে দেয়। আরও আধুনিক ইলেকট্রিক রুটি মেকার আছে যেটাতে পরিমাণমতো আটা, পানি ও তেল দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রুটি ও পরাটা ভেজে দেয়। এগুলোর দাম পড়বে ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা।

-

এয়ার ফ্রায়ার

রমজান মাসে ভাজাপোড়া ছাড়া কি আর ইফতার চলে। কিন্তু তেলে ভাজা খাবার খালি পেটে তো বটেই, ভরা পেটেও খেতে মানা করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে উপায়! এর জন্য বাজারে পাওয়া যায় আধুনিক এক যন্ত্র এয়ার ফ্রায়ার। যেটি কোনো রকম তেল ছাড়া ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন ফ্রাই, চপ, বড়া, পিঁয়াজু, ছোলা ইত্যাদি যাবতীয় খাবার ভেজে দেবে। এতে আপনি পাবেন তেল ছাড়াই ভাজাপোড়া খাবার খাওয়ার সুযোগ। বিভিন্ন ইলেকট্রিক পণ্যের দোকানেই পাওয়া যাবে এয়ার ফ্রায়ার। দাম ১৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা।

-

এগজস্ট ফ্যান ও কিচেন হুড

এখন এমনিতেই প্রচণ্ড গরম। তার ওপর যদি চুলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তখন কষ্ট আরও বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু রান্নাঘরে তো আর এসি চালানোর সুযোগ নেই। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেবে এগজস্ট ফ্যান বা বাতাস নিষ্কাশন পাখা। এটি রান্নাঘরের গরম ধোয়া বাইরে বের করে দিয়ে ঘর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। আর কিচেন হুড ধুলাবালি, তেল, ধোঁয়াসহ বিভিন্ন অতিসূক্ষ্ম ময়লা টেনে নিয়ে রান্নাঘর ঝকঝকে রাখতে সাহায্য করে।

-

মাইক্রোওয়েভ ওভেন

খাবার তাৎক্ষণিক গরম করতে এই যন্ত্রটির জুড়ি নেই। ভাবুন তো, সকালে রেঁধে রাখা খাবার দুপুরে খেতে বসলেন কিন্তু ঠান্ডা খাবারে মনই বসছে না। আবার চুলোমুখী হতেও মন সায় দিচ্ছে না। এর চটজলদি সমাধান দেবে মাইক্রোওয়েভ ওভেন। এক মিনিটের মধ্যে খাবার গরম করতে পারে এটি। শুধু তাই নয় এখন বেকিং থেকে শুরু করে ভাত, মাছ, মাংসের মতো খাবারও রান্না করা যায় মাইক্রোওয়েভ ওভেনে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাইক্রোওয়েভ ওভেনের দাম পড়বে ৮ হাজার ৫০০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

-

রাইস কুকার

ভাত রান্নার জন্য এখন আর পাতিলে পানি ও চাল দিয়ে চুলায় বসিয়ে বসে থাকার দরকার নেই। দরকার নেই বাড়তি মাড় সময়মতো তুলে নেয়ার বা ফেলে দেয়ার ঝামেলাও। রাইস কুকারে পরিমাণমতো চাল ও পানি ঢেলে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে নিশ্চিতে ঘুমিয়ে যান। ভাত হয়ে গেলে এমনিতেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে মেশিনটি। সময় বাঁচাতে ও ঝামেলা কমাতে যন্ত্রটির জুড়ি নেই।

-

কাটাকুটির মেশিন

মরিচ কাটতে গেলে হাত জ্বলে? পেঁয়াজ বঁটি বা ছুরি দিয়ে কুচিকুচি করতে পারেন না। সালাদ বানাতে গিয়ে গলদঘর্ম হয়ে পড়েন? তাহলে কিনে নিন ঝটপট কিচেন কাটিং সেট বা চপিং বোর্ড। একসঙ্গে প্যাকেজ পাওয়া যায়, আবার আলাদা আলাদা করেও এসব যন্ত্রপাতি কিনতে পারেন। মরিচ কাটা, পেঁয়াজ কাটা, শসা, গাজর, আলু, পেঁপেসহ যাবতীয় সবজি নির্দিষ্ট মাপ ও আকারে কেটে দিতে সক্ষম এসব যন্ত্রপাতি। দাম পড়বে ৫ থেকে ১৫০০ টাকা।

-

ডিশওয়াশার

এঁটো থালাবাসন ধোয়ার চেয়ে বড় ঝামেলা খুব কমই। এটা করতে আলস্যও লাগে অনেক বেশি। আবার পরের দিনের জন্য রেখে দিলেও তাতে আরও দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। এ জন্য আধুনিক ডিশওয়াশার মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে বিভিন্ন মডেলের ডিশওয়াশার পাওয়া যায়। প্যানগুলোর শক্ত স্ক্রাবিং থেকে শুরু করে কাচের পাত্রের জন্য মৃদু পরিষ্কার করতে পারে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এটি আপনার থালাবাসন ধুয়ে দিতে সক্ষম। রান্নাঘরের জায়গা এবং প্রয়োজন অনুসারে একটি পূর্ণ-আকারের ডিশওয়াশার থেকে একটি স্লিম-লাইন মডেল বেছে নিন। রান্নাঘরের কাউন্টারের নিচে যেখানে পানির লাইন সেখানে ডিশওয়াশার স্থাপন করুন।

-

এসব যন্ত্রপাতির পাশাপাশি জুসার, কফি মেকার, ওয়াটার হিটার, ফ্রিজ, টোস্টার, স্যান্ডউইচ মেকার, দই মেকার, কারি কুকারের মতো যন্ত্রগুলোও হরদম ব্যবহার হচ্ছে রান্নাঘরে। আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজিয়ে তুলুন রান্নাঘর। সময় সাশ্রয়ের পাশাপাশি অনেক ঝামেলাও কমে যাবে।

এ বিভাগের আরো খবর