করোনা সংক্রমণের স্থবিরতায় টানা দুই বছর ঈদে ঘরবন্দি থেকেছে মানুষ। করোনা পরিস্থিতির উন্নতিতে এবার সুযোগ এসেছে ঘটা করে ঈদের আনন্দ উদযাপনের। স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে শিকড় মুখে ছুটছে মানুষ। ইতোমধ্যে ফাঁকা হয়ে পড়েছে রাজধানী।
ধারণা করা হচ্ছিল, এবার ঈদের ছুটিতে ব্যাপকসংখ্যক মানুষ বাড়িমুখো হবে। আর সে জন্য সড়ক-মহাসড়কে যানজটে পড়তে হবে তাদের। হ্যাঁ, নগর খালি করে বাড়ি অভিমুখে ছুটছে মানুষ। তবে তাদের বড় ধরনের যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না।
কারণ হিসেবে পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার ২৬ রমজানেই শুরু হয়ে গেছে ঈদযাত্রা। শুক্রবার ছিল দ্বিতীয় দিন। ঈদের বাকি এখনও দুই থেকে তিন দিন। দীর্ঘ ছুটির কারণে মানুষ আগেভাগেই গ্রামমুখী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। ফলে সড়ক পরিবহনের সঙ্গে যাত্রীর চাপ পড়েনি।
আবার অতীতে ঈদযাত্রায় যানজটের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের আগেভাগে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফলে রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোয় যাত্রীর উপচেপড়া ভিড় নেই।
শুক্রবার রাজধানীর আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলোর সরেজমিন চিত্র ছিল মোটামুটি স্বস্তিকর। দূরপাল্লার কোনো কোনো বাসে দু-একটি আসন খালি রেখেই যাত্রা করার চিত্র দেখা গেছে।
বাড়তি ভাড়া আদায়
শুক্রবার বেলা ৩টায় সরেজমিন গাবতলীতে গিয়ে দেখা যায়, প্রথম দিনের তুলনায় যাত্রীর ভিড় একটু বেশি। ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে কাউন্টারে অপেক্ষা করছেন ঘরমুখো যাত্রীরা।
ঈদযাত্রার প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন যাত্রীদের অনেকে।
দুই বছর পর ঈদ করতে কুষ্টিয়ায় নিজ বাড়িতে যাচ্ছেন প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে। করোনায় দুই ঈদে বাড়ি যেতে পারিনি। সবার সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেয়ার সুযোগ পেয়ে আলাদা এক ধরনের অনুভূতি হচ্ছে। শুনলাম মহাসড়কেও তেমন যানজট নেই। সময়মতোই বাড়ি পৌঁছতে পারব আশা করছি। তবে বাসে বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’
বগুড়ায় যাওয়ার উদ্দেশে গাবতলী কাউন্টারে এসে ভালো পরিবহনে টিকিট পাননি মেডিক্যাল শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ। অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বগুড়াগামী আরকে নামক লোকাল পরিবহন আগে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা নিত। এখন ভাড়া নিচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এত ভাড়া কেন- এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে তারা বলছে- গেলে যান, না গেলে না যান।’
চুয়াডাঙ্গাগামী ব্যবসায়ী আহসান হাবীব বলেন, ‘এসি বাসের টিকিট নিয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকা। আগে যাতায়াত করতাম ১ হাজার ৩০০ টাকায়।’
তবে পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বরাবরের মতোই যাত্রীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করছেন।
এখানে চট্টগ্রামগামী হানিফ পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মেহেদী পারভেজ কামাল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদে যাত্রীর চাপ যতটা হওয়ার কথা ছিল সে রকম চাপ নেই। সম্ভবত কাল একটু চাপ হবে। ঈদের ছুটিটা তিন-চার দিন আগেই শুরু হয়ে যাওয়ায় মানুষ ধীরে ধীরে যাচ্ছে। গাড়িও শিডিউল অনুযায়ী ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। অনেক গাড়িতে পেছনের দিকে এক-দুই সিট খালিই যাচ্ছে।’
দক্ষিণবঙ্গগামী সাকুরা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মো. সবুজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঈদে যাত্রী যেমন হওয়ার কথা তেমনটা নেই। টার্মিনালে লোকজন অনেক কম। ১৫ দিন আগে যাদের টিকিট নেয়া ওই যাত্রীগুলো চলে যাচ্ছে। রানিং যাত্রী খুবই কম। আগামীকাল কিছু বেশি যাত্রী হতে পারে।’
বাড়তি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নির্ধারণ করা ভাড়ার যে চার্ট আছে সে অনুযায়ী ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’
সোহাগ পরিবহনের বুকিং ক্লার্ক আজাদ হোসেন বলেন, ‘যাত্রী যখন বিপুলসংখ্যক থাকার কথা, তখন টার্মিনাল বলতে গেলে ফাঁকা। ভবিষ্যতে কখন চাপ বাড়বে তা তো বলা যাচ্ছে না। তবে এবার যাত্রী উপচেপড়ার মতো চিত্র দেখা যাবে না।’
ঈদে বহরে বাড়তি গাড়ি যুক্ত করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘না, আরও কমাইছি আমরা। স্বাভাবিক সময়ে যত গাড়ি ছিল, তার চেয়ে কম গাড়ি আছে। অনেক যাত্রী ভেঙে ভেঙে চলে যাচ্ছে। তাই যাত্রী কম।’
চুয়াডাঙ্গাগামী পূর্বাশা পরিবহনের কাউন্টার থেকেও দাবি করা হয়, এবার ঈদযাত্রায় তারা কোনো বাড়তি ভাড়া আদায় করছে না।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী যা বললেন
অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এবারের ঈদযাত্রায় সড়কের অবস্থা অনেক ভালো বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে ঈদযাত্রা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
বাড়তি ভাড়া আদায় প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘বিআরটিএ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। কেউ কোনো ধরনের অতিরিক্ত ভাড়া নিলে সংশ্লিষ্টরা এই আদালতে নালিশ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের শরণাপন্ন হোন।’