পছন্দের পোশাক বানানো হলো, ম্যাচিং করে জুতা, ব্যাগ সবই নেয়া হলো, তবুও ঈদের আনন্দ হাত রাঙানো মেহেদি ছাড়া অপূর্ণ থেকে যায়। তাই আবহমানকাল ধরে ঈদ আনন্দের সঙ্গে মেহেদি লাগানো যেন একাকার হয়ে আছে। চাঁদরাতে হাতে মেহেদি দেয়ার চল বহু আগে থেকে। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে গত কয়েক বছর ধরে এটি ফ্যাশনেও পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মেহেদির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এবং আফ্রিকায় যেসব দেশের ভাষা অ্যারাবিক সেসব দেশেও ব্যবহৃত হয় মেহেদি।
মেহেদির প্রচলন ধর্মীয় দৃষ্টিকোণের জায়গা থেকে শুরু হলেও পরে এই প্রথাটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিচয় পেয়েছে। মানুষ এখন এটাকে সর্বজনীন রূপে গ্রহণ করেছে। তবে একেক দেশে একেক ধরনের কারণ আর উদ্দেশ্যে মেহেদি ব্যবহার হয়।
ঈদে মেহেদি লাগানোর জন্য আপনি নানা ডিজাইন ব্যবহার করতে পারেন। কোনোটা সাদামাটা, আবার কোনোটা গাঢ় ডিজাইন। কেউ এক হাতে, আবার কেউবা হাত ভরে মেহেদি লাগাতে ভালোবাসেন। তবে যে যেভাবেই পড়েন না কেন, সেটাকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারলেই আসল সৌন্দর্য। কেউ যান পারলারে, কেউ আবার ঘরে বসে নিজেই মেহেদিতে হাত রাঙিয়ে ফেলেন। মেহেদি পাতা বেটে হাত রাঙানোর দিন অনেক আগেই শেষ। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পাতা মেহেদির পরিবর্তে বাজারে নানা রকম টিউব মেহেদি এসেছে। এসব মেহেদির সঙ্গে নানা রকম ডিজাইন বইও পাওয়া যায়। আর মেহেদির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এর নকশারও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া অনলাইন, ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের ডিজাইন পাওয়া যায়। তাই বৈচিত্র্যময় নকশায় হাত সাজানো আর কঠিন কোনো ব্যাপার নয়।
মেহেদির ডিজাইনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে, বিভিন্ন ডিজাইনে মেহেদ পরে। তবে আরব দেশগুলোর মেহেদির স্টাইলগুলোই বেশি চলনসই। তাই আপনি মেহেদি লাগানোর সময় সেই ডিজাইনগুলো ফলো করতে পারেন। তবে আজকাল যে সবাই শুধু হাতে মেহেদি পরছে তা নয়, অনেকে পায়েও নজরকাড়া ডিজাইনে মেহেদি পরে।
নকশার বিভিন্ন ধরন রয়েছে। ছোট ছোট ডিজাইন করে নকশা করা যায়, কোনাকুনিভাবে নকশা করা যায়, হাতের এক কোনা থেকে শুরু করে আঙুল পর্যন্ত ফুল দিয়ে ডিজাইন করা হয়। তবে হালকা নকশা সব রকম পোশাকের সঙ্গে খুব ভালো মানায়। ছোটদের জন্য হালকা নকশা খুবই বেমানান। তাদের দুই হাত ভরে মেহেদি পরিয়ে ভালো লাগে আর তারাও অনেক খুশি হয়। হাত ভরে মেহেদি নকশা আবার তিন রকমের হয়ে থাকে। যেমন: ময়ূর, কলকা, ফুলের নকশা। হাতের পাশাপাশি অনেকে পায়েও মেহেদি লাগায়। লতা, ফুল ও বিভিন্ন ডিজাইন করে পা ও মেহেদি রঙে রাঙানো হয়ে থাকে।
বাজারের টিউব মেহেদিগুলো অল্প সময়ে খুব বেশি লাল হয়ে থাকে। আবার অল্প দিনেই মেহেদি ফিকে হয়ে যায়। হাতে মেহেদি বেশি সময় রাখতে কিছু কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। যার জন্য আপনার হাতের মেহেদি অনেক দিন গাঢ় থাকবে।
হাতের কাছে যে-সে মেহেদি পেলেই কম মূল্যে কিনবেন না। এতে মারাত্মক বিপদ হতে পারে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই ঈদের আগে অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কেমিক্যালযুক্ত নকল মেহেদি দেদার বিক্রি করে আসছেন। এসব মেহেদি হাতে দিলে ত্বক পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অ্যালার্জি, র্যাশ বা ফোসকা পরার আশঙ্কা থাকে।
বিগত বছরগুলোতে এমন অনেক ঘটনার খবর মিলেছে। তাই মেহেদি কেনার আগে সতর্ক হওয়া জরুরি। জেনে নিন মেহেদি নকল কি না তা চেনার উপায়-
খাঁটি মেহেদির রং কখনো কালো হয় না। সব ধরনের কালো মেহেদিতেই ভেজাল বা কেমিক্যাল মেশানো থাকে। আসল মেহেদি কখনই ৫ মিনিট বা তার কম সময়ে গাঢ় রং দেয় না। ২৪-৪৮ ঘণ্টা পর আসল মেহেদির রং গাঢ় হতে থাকে।
মেহেদির রং গাঢ় খয়েরি না হলে অনেকেরই মন খারাপ হয়ে যায়। তবে জানেন কি? আসল মেহেদির রং কখনই এতটা গাঢ় হয় না।
-
সতর্কতা
যাদের মেহেদিতে অ্যালার্জি থাকে তারা মেহেদি ব্যবহারের আগে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের হাতে মেহেদি দেয়ার সময় বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা থেকে বাঁচতে হলে ভালো মানের টিউব মেহেদি বাছাই করতে হবে।
মেহেদির কেনার সময় মেয়াদ দেখে কিনুন। বেশি পুরোনো হলে আবার রং না হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
পারলারে মেহেদি লাগাতে গেলে দেখে নিন নতুন মেহেদি দিচ্ছে কি না। প্রয়োজনে নিজেই মেহেদি কিনে নিয়ে যান।
ফ্রিজে রাখা মেহেদি ব্যবহারের আগে কিছুক্ষণ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিন। তারপর হাতে লাগান।
শিশুদের হাতে দেয়ার জন্য পাতা মেহেদি বেটে হাতে লাগাতে হবে। এতে শিশুর কোমল হাত সুরক্ষিত থাকবে।
মিনিটেই গাঢ় লাল রং পেতে এখন অনেকেই বিভিন্ন মেহেদি ব্যবহার করে থাকেন। এগুলো ত্বক এমনকি স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। এগুলোতে প্রচুর কেমিক্যাল থাকে।
মেহেদি দেয়ার পর অনেকে হাত ভিজিয়ে মেহেদি তুলে ফেলেন। আবার অনেকে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলেন। এটা একদমই ঠিক নয়। কারণ সাবান ক্ষারীয় উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি মেহেদির রঙের সঙ্গে বিক্রিয়া করে হাত ফিকে করে তোলে।
মেহেদি শুকানোর জন্য কখনই হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করবেন না। এতে আপনার ডিজাইন নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। প্রাকৃতিকভাবে মেহেদি শুকাতে দিন। প্রয়োজন হলে ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন মেহেদি শুকানোর জন্য।
চিনি ও লেবুর রস মেহেদির রং বেশি লাল করতে সাহায্য করে। কিন্তু এগুলোর ব্যবহার যদি বেশি হয়ে যায় তবে মেহেদির রং গাঢ় খয়েরি কালার হয়ে যায় তা দেখতে ভালো লাগে না।
মেহেদি হাতে পরার আগে খুব বেশি পানিজাতীয় খাবার খেতে হয় না।
হালকা আলোতে মেহেদি পরলে ডিজাইন ভালো হবে না। ভালো ডিজাইন তোলার জন্য পর্যাপ্ত আলোতে বসে মেহেদি লাগাতে হবে।
অনেকে অ্যালার্জির জন্য সরিষার তেল হাতে ব্যবহার করে মেহেদির রং বেশি লাল করে তোলে। কারণ তেল ব্যবহার করলে হাতের শুষ্কভাব অনেক কমে গিয়ে হাত লাল করতে সাহায্য করে থাকে।