ঈদ উৎসবে শিশুদের আনন্দটাই থাকে সবচেয়ে বেশি। আর তাইতো যেকোনো উৎসবে সবার আগে প্রাধান্য দেয়া হয় শিশুদের। শিশুদের ঘিরেই ঈদের আনন্দ। ঈদ মানেই তো শিশুর খুশি। শিশুদের জামাটা তাই কিনতে হয় সবার আগে। সবচেয়ে আদরের ছোট্ট সোনামোনির পোশাক বলে কথা। যেন তেন হলে তো হবে না, আরামদায়ক হতে হবে, রংচঙ্গে, সুন্দর হতে হবে, একটু অন্যরকম, যেন সবার থেকে আলাদা।
এবারের ঈদে দেশীয় ফ্যাশন হাউজ ও অনলাইন বিভিন্ন শপে শিশুদের ঈদ পোশাকে তাই গুরুত্ব পেয়েছে ফেব্রিকস। বাহারি ডিজাইনের সুতি, নেট, হাফ সিল্ক ও লিলেনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে শিশুদের জন্য। নেটের উপর কারুকাজ করা পোশাকের পাশাপাশি অ্যাম্ব্রোয়েডারি করা পোশাকও প্রাধান্য পেয়েছে।
বিগত বছরের ঈদগুলোর তুলনায় এবার পোশাকে বাহার ও বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে অনেক বেশি। দেশীয় ফ্যাশন হাউজগুলো এখন শিশুদের জন্য তৈরি করছে দারুণ স্টাইলিশ সব পোশাক। তাদের শোরুমগুলো সাজানো হয়েছে শিশুদের রঙ বেরঙের পোশাক দিয়ে। দেশি পোশাকের সঙ্গে শিশুদের জন্য রয়েছে ওয়েস্টার্ন ডিজাইনের পোশাক। রয়েছে রঙের বৈচিত্র্যময় ব্যবহার।
-
নবজাতকের জন্য পোশাক
যাদের শিশু আছে তারাই জানেন শিশুদের জন্য পছন্দমতো জামা কিনতে কতটা সময় দিতে হয়, ভাবতে হয় এবং মেলাতে হয়! সাইজ মিলে তো রঙ মিলেনা, রঙ মিল্লে সাইজ মিলেনা। আবার অনেক বয়সের পছন্দের জামা পাওয়া যায়না।
শিশুর জন্মের প্রথম কয়েক মাসে ড্রেসসহ আনুষাঙ্গিক প্রচুর জিনিস কিনতে হয়। এর মধ্যে যদি ঈদ চলে আসে তাহলে আপনাকে এসব জিনিস মেলাতে বাড়তি সময় দিতে হবে। এ জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হচ্ছে- উপযুক্ত শিশুর গিয়ার, খাওয়ানোর সরবরাহ, স্বাস্থ্যকর পণ্য, খেলনা, জামাকাপড় সবই নবজাতকের শপিং চেকলিস্ট তৈরি করে। ঈদে সোনামনির নতুন ড্রেসের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার চেকলিস্ট অনুযায়ী কেনাকাটা শুরু করে দিন।
১. অনেসি এবং রম্পার্স
অনেসি এবং রম্পার্স হ'ল প্রথম জিনিস যা আপনার নবজাতকের জন্য কেনা উচিত। এটি আপনার শিশুর মাথাটি পায়ের আঙুল পর্যন্ত ঢেকে রাখে। নিরাপদে তাকে জড়িয়ে রাখে। বাচ্চার শরীরের সমস্ত উপাদেয় ত্বককে তার ক্ষতি করতে পারে এমন বহিরাগত কারণগুলো (ধুলো, তাপ, ঠান্ডা, বৃষ্টি ইত্যাদি) থেকে রক্ষা করতে অনেসি এবং রম্পার্স রাখতে পারেন আপনার চেকলিস্টে। ঈদ সামনে রেখে বাজারে আসছে নতুন ডিজাইনের বিভিন্ন অনেসি এবং রম্পার্স।
২. সেটস ও স্যুট
বাচ্চাকে ড্রেস করার সবচেয়ে বড় আনন্দ হ'ল সবকিছু কীভাবে রঙিন সমন্বিত হতে পারে বা আমরা যেমন বলতে চাই, "ম্যাচিং-ম্যাচিং"! সুতরাং নিশ্চিত করুন যে আপনি আপনার শিশুর জন্য সুন্দর সেট এবং স্যুট বেছে নিয়েছেন।
নবজাতকের জন্য কাপড় কেনার জন্য কয়েকটি সাধারণ পরামর্শ:
ত্বক-বান্ধব কাপড়: আপনার শিশুর ত্বকের ক্ষতি করতে পারে এমন সিন্থেটিক এবং মোটা ফাইবারের পরিবর্তে প্রাকৃতিক ফাইবার (সুতি, সিল্ক ইত্যাদি) দিয়ে তৈরি পোশাক বেছে নেয়া ভাল।
জ্বালামুক্ত হিমেলাইনস: কখনও কখনও এটি ফ্যাব্রিক হয় না, তবে সেলাই এবং / বা হিমেলিনগুলি ত্বককে জ্বালাতন করতে পারে। বিশেষত আপনার শিশুর ব্যক্তিগত অংশের কাছে এবং বাহুগুলির নীচে। নরম হিমেলিনের জন্য কাপড়টি পরীক্ষা করুন।
কম রক্ষণাবেক্ষণের পোশাক: আপনি শিশুর জন্য এক হাজার এবং একটি জিনিস করতে ব্যস্ত হতে চলেছেন, এবং শেষ জিনিসটি আপনি চান এমন পোশাক যা উচ্চ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। সহজে ধোয়া যেতে পারে এমন কাপড়ের সন্ধান করুন এবং যত্ন নেওয়ার পরে ন্যূনতম প্রয়োজন (আয়রণ, শুকনো-পরিস্কারের ক্ষেত্রে)।
ইলাস্টিকের জন্য নজর রাখুন: ইলাস্টিক্সের সাথে কাপড় কেনা (কোনও ধরনের বোতল, প্যান্টি ইত্যাদি) খুব জটিলও হতে পারে। সুতরাং, নিশ্চিত হয়ে নিন যে আপনি স্থিতিস্থাপকের শক্তি পরীক্ষা করেছেন - এটি আপনার শিশুর গায়ে হালকাভাবে বসে থাকা উচিত, এবং তার ত্বকটি খনন করা বা কোনও উপায়ে চিমটি না ফেলে। সংকীর্ণ ইলাস্টিকের বিপরীতে বিস্তৃত ইলাস্টিকগুলিও সন্ধান করুন - সংকীর্ণগুলো ত্বকের ঘষা লাগতে পারে।
-
কন্যাশিশুদের ড্রেস
ঈদ পোশাকের তালিকায় কন্যাশিশুদের নানা কাটের গাউন, টপ ও শর্ট স্কার্টও দেখা যাচ্ছে। ব্লক ও অ্যাম্ব্রোয়েডারি করা সালোয়ার কামিজ ও লং স্কার্টও কিনতে পারেন। সুতি ও নেটের পোশাকের উপর সুতা, পুঁতি বা সিকুইন কাজের বাহারি ডিজাইনের পোশাক মিলছে। পোশাকের মোটিফে থাকছে ফুলেল নকশা ও কার্টুনের প্রাধান্য।
কাপড়ে থাকছে ভয়েল, সুতি, সিল্ক, জর্জেট, লিনেন, টু টোন কটন ইত্যাদি। ক্রিট, কলমকারি, এথনিক, জ্যামিতিক, ফ্লোরাল, টেক্সটাইল টেক্সচার মোটিফের ছোঁয়া রয়েছে ছোটদের ঈদের পোশাকে।
ঈদের শপিংয়ে যত ফ্যাশন সব কিছুই যেন মেয়েদের ঘিরে। ছোট্ট মেয়ে শিশুদের জন্যও এবার ঈদে বাজারে এসেছে নানা রঙ বেরঙের আর ডিজাইনের পোশাক। সুতি, সিল্ক, জর্জেট আর নিটের এই পোশাকগুলোর আবার আলাদা আলাদা কিছু নামও রয়েছে। তাছাড়া দেশীয় বুটিক হাউজগুলোতে আনা হয়েছে নানা ডিজাইনের ছোট ছোট থ্রিপিচ।
ঈদ সামনে কন্যাশিশুদের জন্য সবচে’ বেশি চলছে ফ্রিল দেয়া পার্টি ফ্রক, হাতের জমকালো কাজ করা সালোয়ার-কামিজ, ঘাঘরা চোলি।
সালোয়ার ও প্যান্টের কাজে নকশা এবং কাটে দেখা গেছে বৈচিত্র্য। সালোয়ার-কামিজ পরতে চাইলে কাতান, টিস্যু, মসলিন ও সার্টিনের ব্যবহার ভালো লাগবে পার্টি পোশাকে। এছাড়া সুতির কাপড় তো রয়েছেই। আর এ লাইন কাটের চল থাকছে এবার। নকশায় প্রাধান্য পাচ্ছে কারচুপি, অ্যামব্রয়ডারিসহ হাতের কাজ। আর শিশুদের জন্য বরাবরের মতো বেছে নেয়া হয়েছে উজ্জ্বল রঙ।
-
ছেলেশিশুদের ড্রেস
এবারের ঈদে ছেলেশিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে ফতুয়া, হাফ শার্ট, টি-শার্ট এবং কাজ করা পাঞ্জাবির সঙ্গে নকশা করা কটি কিনতে পারেন। ছেলে শিশুর জন্য রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের শার্ট প্যান্টের সেট। অতিরিক্ত গরমের কারণে এবারে ক্রেতারা সুতি পোশাকের উপরেই বেশি জোর দিচ্ছেন। স্ক্রিণ প্রিন্ট, বিভিন্ন কার্টুনের আঁকা ডিজাইনের হাফহাতা শার্ট বা টি শার্টে ভরে গেছে দোকানগুলো। পাশাপাশি প্যান্টের মধ্যে চলছে হাফ, ফুল এবং থ্রি কোয়ার্টারের জিন্স এবং গ্যাবার্ডিন প্যান্টগুলো। এ ছাড়াও শিশুদের একরঙা শার্টের সঙ্গে ছোট্ট বো-টাইও পাবেন।
এবারের ঈদ ফ্যাশনে ছেলেশিশুদের পাঞ্জাবিতে কাপড় হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্ডি, সিল্ক, মসলিন ও খাদি। উৎসবের আমেজ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন রকম হাতের কাজ দিয়ে। প্রায় সমস্ত ফ্যাশন হাউজেই শিশুদের পোশাকের কাটিংয়ে নান্দনিক নকশা করা হয়েছে।
এবার ঈদ যেহেতু গরমে হতে যাচ্ছে, তাই গরমে শিশুর পোশাক কেনার সময় রঙের বিষয়েও প্রাধান্য দিতে হবে। হালকা যেকোনো রং আপনি বেছে নিতে পারেন। কারণ হালকা রংগুলো পরলে গরমে শরীর ঠান্ডা থাকে, বেশি ঘামে না। বড়-ছোট কারও জন্যই গরমে গাঢ় পোশাক পরা উচিত নয়। পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলোও এসব বিষয় মাথায় রেখে ঈদে আনছে শিশুদের নতুন ড্রেস।
-
শিশুদের পোশাক কেনার সময় যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন-
- সব শিশুরই স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্বা রয়েছে। তারা পোশাকেও অলংকরন পছন্দ করে। পোশাকের বোতাম, লেস, নকশা, ছবি, ফিতা অথবা ফুল এ সবই শিশুকে প্রলভিত করে। তাই শিশুকে তার পছন্দের রঙ বা নকশার পোশাক কিনে দিন।
- শিশুরা তাদের বন্ধু অথবা সহপাঠীদের মত পোশাক পছন্দ করে। ঠিক এক রকম না হলেও একই নকশা বা ধরনের পোশাক ও তাদের জন্য ভারী আনন্দের।
- শিশুদের পোশাক হতে হবে আবহাওয়া উপযোগী। যেহেতু শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাই বয়স্কদের তুলনায় তারা বেশি রোগে আক্রান্ত হয়। তাই তাদের পোশাক তাপ অনুযায়ী হওয়া বাঞ্চনীয়।
- শিশুদের পোশাক অবশ্যই সৌন্দর্য বর্ধক হতে হবে। বেশি আঁটসাট অথবা বেশি ঢিলা পোশাক শিশুদের চলা ফেরায় বিঘ্ন ঘটায়। জুতা মোজা বেশি টাইট হলে শিশুদের হাঁটতে অসুবিধা হয়। বেশি টাইট জামা শিশুকে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে ফেলে। তাই সঠিক মাপের পোশাক কেনার চেষ্টা করুন।
- নতুন পোশাক সবারই পছন্দ। শিশুদের ক্ষেত্রে সেটি বেশি প্রযোজ্য। তারা প্রতি মুহূর্তেই নতুন চায়। তাই তাকে নতুন ধরনের, ভিন্ন বর্ণের পোশাক কিনে দিন, যাতে অভিনবত্বটা বজায় থাকে। নতুন পোশাকের নব নব পরিচিতি তাদের উৎফুল্লকরে।
- শিশুরা হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পছন্দ করে। পরিমিত ওজনের পোশাকে তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। যে পোশাক খুলতে বা পরতে অধিক সময় লাগে তা না কেনাই ভালো। এতে শিশু যেমন বিরক্ত বোধ করে, আপনি-ও বিব্রত হন। পোশাক শিশুর নিজে পরার উপযোগী হলে বেশি ভাল হয়।
- শিশুকে আরাম আর নিরাপত্তা দেয়ার জন্যই পোশাকের প্রয়োজন। আপনার শিশুর শখ ও চাহিদা মনে রেখে কিনে ফেলুন সোনামনির জন্য তার নতুন জামা। তার ঈদকে করে তুলুন রঙ্গিন আর ঝলমলে।