তারা আপনার রক্ত চুষে নেয়, কানের পাশে বিরক্তিকর গুঞ্জন করে। তাদের কামড় আপনার বারবিকিউ পার্টিকে করে তুলতে পারে দুর্বিষহ কিংবা জঙ্গলে হাঁটাচলায় ঘটাতে পারে বিঘ্ন। সবচেয়ে বড় কথা তাদের কামড়ে নানা রোগ ছড়ায়, এগুলোর কিছু প্রাণঘাতী।
যাদের কথা বলা হচ্ছে তাদের সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী এই পতঙ্গের নাম মশা। বিশ্বের সব জায়গায় দাপিয়ে বেড়ায় এরা, কেবল একটি অঞ্চল ছাড়া। সেই জায়গাটি হলো নর্ডিক অঞ্চলের দেশ আইসল্যান্ড।
কিন্তু কেন এই অঞ্চলে মশার তাণ্ডব নেই। এর উত্তর, দেশটির আবহাওয়া। আইসল্যান্ডের আবহাওয়া এত বেশি প্রতিকূল যে মশার টিকে থাকার কোনো সম্ভাবনা নেই সেখানে।
মশার বংশ বিস্তারের জন্য উষ্ণতার দরকার। যেসব অঞ্চলের আবহাওয়ায় উষ্ণতা যত বেশি, সেসব অঞ্চলে মশাদের উৎপাতও তত বেশি।
পৃথিবীর উষ্ণতম মহাদেশগুলোর একটি আফ্রিকা। আর তাই এ মহাদেশে মশার বিস্তার খুব বেশি। মশাবাহিত নানা রোগের প্রকোপও এই অঞ্চলে বেশি।
অন্যদিকে আইসল্যান্ডে বছরে তিনবার ভয়াবহ শীত নামে। এই শীতল আবহাওয়া মশার বংশবিস্তারের বিরুদ্ধে। এ কারণে মশারা এই অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে না।
এ ছাড়া মশার বংশবিস্তারের জন্য প্রয়োজন জলাশয়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, আইসল্যান্ডের জলাশয়ে রাসায়নিকের যে অনুপাত আছে, তা মশার বংশবৃদ্ধিকে দারুণ চ্যালেঞ্জে ফেলে।
মশার ডিম থেকে লার্ভা, লার্ভা থেকে মূককীট, মূককীট থেকে পরিণত বাচ্চা– এই চক্রের জন্য সময় ও নির্দিষ্ট তাপমাত্রার পাশাপাশি প্রয়োজন বদ্ধ জলাশয়। আইসল্যান্ডে স্রোতহীন বদ্ধ জলাশয় নেই বললেই চলে। এ ছাড়া ভয়াবহ শীতে জলাশয়ের পানি বরফে পরিণত হয়। এতে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার প্রক্রিয়াটি চরমভাবে ব্যাহত হয়।
শীতের তীব্রতায় আইসল্যান্ডে মশার বংশবৃদ্ধি করতে না পারলেও, ইউরোপের অনেক শীতপ্রধান দেশে মশারা সাবলীল।
আইসল্যান্ডের পাশের দেশ গ্রিনল্যান্ডে যখন শীত শুরু হয়, তখন শীতনিদ্রায় থাকে মশারা। শীত শেষে বরফ গলা শুরু হলে, তারা ডিম পাড়তে শুরু করে। আইসল্যান্ডের মতো এখানে শীত শেষ হওয়ার পর আবার হঠাৎ করে শীত চলে আসে না। তাই গ্রিনল্যান্ডে বাচ্চা ফোটানোর চক্র পূর্ণ করতে পারে মশা।
আইসল্যান্ডের তীব্র ঠান্ডা মশার বংশবিস্তারের প্রধান বাধা। ছবি: সংগৃহীত
এ জন্য পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসেবে আইসল্যান্ডে মশার বংশবিস্তার না ঘটলেও, ইউরোপ ও অন্যান্য শীতপ্রধান দেশে মশার বংশবৃদ্ধি ঠিকই চলে।
তবে এই অবস্থা হয়তো বেশি দিন থাকবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া। গত ২০ বছরে আইসল্যান্ডের গড় তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বেড়েছে। আর এই সময়ে দেশটিতে প্রায় ২০০ প্রজাতির নতুন কীটপতঙ্গ আবাস গেড়েছে।
আইসল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী গিসলি মার গিসলাসন বলেন, ‘বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বন্ধ না করা গেলে অচিরেই আইসল্যান্ডে বসতি গড়বে মশারা। বাকি বিশ্বের মতো তারা সবার জন্য একটি উপদ্রব হয়ে দাঁড়াবে।
আইসল্যান্ডে যে একেবারে মশা নেই তা ঠিক না। আইসল্যান্ডিক ইনস্টিটিউট অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রিতে গেলে দেখা মিলবে মশার। ১৯৮০ সাল থেকে অ্যালকোহলের বোতলে সংরক্ষিত আছে মশাটি। গ্রীনল্যান্ড থেকে ফেরা একটি বিমান থেকে এটিকে আটক করেছিলেন গিসলাসন।