বাহারি পণ্যের স্টল, মুড়ি-মুড়কি-কটকটি-বাতাসার পসরা, রঙিন নাগরদোলা, মাটির খেলনা। বৈশাখী মেলার চিরায়ত রূপ ফুটে উঠেছে এভাবেই।
এই মেলা বসেছে শেরপুর সদরের চান্দের নগরে।
আয়োজকরা জানান, বছরের পর বছর ধরে এই এলাকায় বৈশাখের শুরুতে বসে এক দিনের মেলা। এদিন গ্রামবাসী মেতে উঠে নির্মল আনন্দে। মেলায় কেবল বেচা-কেনাই নয়, খেলাধুলা ও নানা প্রতিযোগিতাও হয়।
চান্দের নগরে দুই বছর বিরতির পর এবার ফের বসেছে মেলা। শুক্রবার দিনভর গ্রামবাসী মেলা উপভোগ করেছে।
মেলার আয়োজক শেরপুর সদর চান্দের নগর মেলা উদযাপন পরিষদ। এবার তারা ঘোড়দৌড়, গাঙ্গি বা কুস্তি খেলা, মোরগ লড়াইয়ের মতো গ্রামীণ বিভিন্ন খেলা ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সন্ধ্যা ৬টায় ভাঙে ঐতিহ্যের মিলনমেলা।
কেবল বৈশাখী মেলাই নয়, এটি হয়ে উঠেছে গ্রামের মানুষের মিলনমেলা। মেলা বসলেই বাড়ির মেয়ের জামাইদের নিমন্ত্রণ করে সেখানকার প্রায় প্রতি পরিবার। এটা সেখানকার রেওয়াজ হয়ে উঠেছে।
নিপা বেগম মেলায় এসেছেন স্বামীকে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘বিয়ের পর তো শ্বশুরবাড়ি থাকি। এখানে আমাগো এলাকার মেয়ে জামাইদের মিলনমেলা হয়। আমরা সবাই জামাই নিয়া বাপের বাড়ি আসি।’
স্থানীয় রাসেল মিয়া বলেন, ‘আমরা এ মেলায় খুব আনন্দ করি। বৈশাখ আইলে এই মেলা হয়, কিন্তু গত দুই বছর মেলা বন্ধ আছিল করোনার কারণে। আমরা আবার এলাকায় মেলা দেখলাম অনেক দিন পর।’
এই মেলাকে ঐতিহ্য আখ্যা দিয়ে স্থানীয় শাহিনুর ইসলাম জানান, আশপাশের জেলা থেকেও অনেকে মেলা দেখতে আসেন।
স্মৃতিচারণা করে করিম মিয়া বলেন, ‘আগে আমার বাপ আমারে কান্দো কইরা মেলায় আইছে। এহন আমি আমার পুরিরে (মেয়েকে) কান্দো নিয়া মেলা দেহাবার নিয়া আইছি। খুব ভালা নাগতছে।’
তবে মেলার পরিসর কমে যাচ্ছে বলে এর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত অনেকে।
স্থানীয় মোশারফ হোসেন বলেন, ‘এই মেলা আগে বড় হইত, এখন আস্তে আস্তে জায়গা কইমা যাইতাছে। আমরা চাই সরকার কিছু অনুদান দিয়ে আমগর এই মেলাডা টিকাই রাহুক।’
ঠিক কবে থেকে এ মেলা হচ্ছে? জানতে চাইলে আয়োজক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান বলেন, ‘এ মেলা যে কত বছর থেকে এখানে হচ্ছে তা আমরাও বলতে পারি না। আমরা প্রতি বছর এ মেলার আয়োজন করার চেষ্টা করি।
‘দুই বছর করোনার কারণে বন্ধ থাকলেও আজ আবার জমে উঠেছে। আমরা প্রতি বছরই আয়োজন করার চেষ্টা করব। মেলা আগে বড় করে আয়োজন হতো, এখন জায়গা কমে যাওয়ায় পরিধি একটু কমেছে। তবে মেলায় আসা মানুষজনের সংখ্যা বেড়েছে।’
মেলার পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক।
তিনি বলেন, ‘এসব দেশের ঐতিহ্য। ঐতিহ্য ধরে রাখতে মেলা আয়োজনে সরকারিভাবেও সহযোগিতা করা হবে। জায়গার অভাবে এ মেলা যাতে হারিয়ে না যায়, আমরা এইটা দেখব।’