রাজশাহীর আলোচিত সেই কাঁচা আমের জিলাপিতে আমের পরিমাণ প্রত্যাশার চেয়ে কম পেয়ে জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের একটি দল। যদিও কত শতাংশ আম দেয়া উচিত ছিল- এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে পারেননি জরিমানার আদেশ দেয়া কর্মকর্তা।
ওই কর্মকর্তার দাবি, কাঁচা আমের জিলাপিতে রং ও ফ্লেভার মেশানোয় ‘প্রতারণা’ হয়েছে। যদিও জিলাপি নিয়ে আসা প্রতিষ্ঠান ‘রসগোল্লা’র উদ্যোক্তা বলছেন, তারা প্রথম থেকেই বিষয়টি বলে আসছেন।
বিষয়টি নিয়ে ‘রসগোল্লা’র উদ্যোক্তারা ভীষণ হতাশ। তবে সরকারি আদেশ মেনে তারা জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে বাধ্য হয়েছেন।
শুক্রবার রাজশাহী উপশহরের নিউ মার্কেট এলাকার ‘রসগোল্লা’র একটি বিক্রয়কেন্দ্রে অভিযান চালান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগের সহকারী পরিচালক হাসান আল মারুফ। তিনি দোকানটিকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
গত বছরের শেষ দিকে ‘রসগোল্লা’ নানা স্বাদের মিষ্টি নিয়ে এসে তুমুল আলোচিত হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচার পায় খেজুরের গুড়ের রসগোল্লা। আরও আছে পাকা আমের, কমলার মিষ্টি, কাঁচা মরিচের রসগোল্লা।
এবার রোজায় তারা নিয়ে আসে কাঁচা আমের জিলাপি। আগের সবগুলো পণ্যের মতো এটিও আলোড়ন তোলে। দেশের প্রধান গণমাধ্যমগুলোতেও এটি প্রতিবেদন আকারে উঠে আসে।
স্বভাবতই এই দোকানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের অভিযান এবং প্রতিষ্ঠানটিকে জরিমানা করার বিষয়টি সংবাদমাধ্যম ছাড়াও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়।
জরিমানা কেন?
জরিমানার আদেশ দেয়া হাসান আল মারুফ বলেন, ‘কাঁচা আমের জিলাপির প্রচারণার জায়গায় কিছুটা প্রতারণার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। কাঁচা আমের জিলাপি বলে প্রচার করা হচ্ছে, আসলে এটা কাঁচা আমের না, কাঁচা আমের ফ্লেভারযুক্ত জিলাপি; যা এক ধরনের প্রতারণা।
‘জিলাপির রং কখনও সবুজ হয় না। ফুড গ্রেড কালার ব্যবহার করে কাঁচা আমের জিলাপি বলা হচ্ছে। এই প্রতারণা বন্ধ করার জন্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
তাহলে কি আম একেবারেই পাননি?- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, তা নয়। আম ছিল, তবে তা ৫ শতাংশেরও কম হবে।’
জিলাপিতে আম কত শতাংশ থাকার কথা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘না, শতাংশ ওভাবে না। একেবারেই পরিমাণটা খুবই সামান্য। আবার এখন যে আমটা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা খুবই ছোট। এখনও কোনো স্বাদ হয়নি।
‘তারা যদি বলত, কাঁচা আমের ফ্লেভারের জিলাপি, তাহলে হতো’- বলেন সেই কর্মকর্তা।
কাঁচা আম তো তারা ব্যবহার করেছে- এ বিষয়টি আবার স্মরণ করিয়ে দিলে তিনি আবার বলেন, ‘কিন্তু এটা খুবই নগণ্য।’
তবে জিলাপিতে রং ও আর ফ্লেভার ব্যবহারের কথা আগেই জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তাদের একজন আরাফাত রুবেল এই জিলাপি নিয়ে আসার কয়েক দিন পর নিউজবাংলাকে দেয়া এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল হেলথ অর্গানাইজেশনের সার্টিফিকেট আছে, সেই ধরনের ফুড কালারগুলো ব্যবহার করার চেষ্টা করি, যেটা ক্ষতি নয়। পাশাপাশি আমরা কাঁচা আমকে ব্লেন্ড করে মিশিয়ে দিচ্ছি।’
যে ধারায় জরিমানা
হাসান আল মারুফ জরিমানার আদেশ দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৪৫ ধারা ব্যবহার করে। তার মতে, রসগোল্লা এই ধারায় অপরাধ করেছে।
এই ধারায় বলা আছে, ‘কোন ব্যক্তি প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
যা বলছেন ‘রসগোল্লা’র মালিক
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের জরিমানার আদেশটি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর পরই রাজশাহীতে ব্যাপক প্রচার পায়।
এ বিষয়ে ‘রসগোল্লা’র স্বত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল ফেসবুকে স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট কাঁচা আমের জিলাপি পর্যবেক্ষণ করেন। তারা কাঁচা আমের জিলাপির ফুড গ্রেড কালার ও গুণগত মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও আমের সাইজ ও পরিমাণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গঠনমূলক পরামর্শ দেন।
‘তারা আমাদের কাঁচা আমের জিলাপির বিজ্ঞাপনের ভাষা সঠিকভাবে উপস্থাপন না করায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন।’
নিউজবাংলার সঙ্গেও কথা হয়েছে আরাফাত রুবেলের। তিনি বলেন, ‘আমরা তো প্রথম থেকেই বলে আসছি, এখানে কাঁচা আম ব্লেন্ড করে দেয়া হয়। পাশাপাশি কালার, ফ্লেভার আছে। জনস্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক কোম্পানির সার্টিফিকেট আছে, এমন ফুড কালার ব্যবহার করি।’