বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জন্ডিস নিয়ে কিছু কথা

  • ডা. রোকসানা বেগম   
  • ১৯ মার্চ, ২০২২ ১০:২৫

একিউট হেপাটাইটিস জন্ডিস প্রকাশ পাওয়ার আগেই সাধারণ রোগীর মৃদু জ্বর বা জ্বরজ্বর ভাব, হালকা পেটে ব্যথা, খাদ্যে অরুচি, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দুর্বলতা, শরীর হালকা ব্যথা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়।

জন্ডিস হতে পারে কোনো ভয়াবহ লিভার, রক্তরোগ বা পিত্তনালি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পূর্বাভাস। জন্ডিস এককভাবে কোনো রোগের নাম নয়, বরং রোগের লক্ষণমাত্র। সাধারণভাবে জন্ডিস বলতে আমরা জানি চোখ, হাত-পায়ের তালু এবং ধীরে ধীরে পুরো শরীর হলুদ হয়ে যাওয়া। মেডিক্যাল পরিভাষায় বলতে গেলে, রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা যখন নরমালের চেয়ে বেশি হয়ে যায় (নরমাল মাত্রা-০১ মি.গ্রা/ডেসি.লি) তখন তাকে জন্ডিস বলা হয়। তবে চোখ হলুদভাব বোঝা যায় যখন বিলিরুবিনের মাত্রা ২.৫ মি গ্রা/ডেসি.লি (৪০ মাইক্রো মোল/লি.) এর চেয়ে বেশি হয়।

জন্ডিস কেন হয়

যেহেতু বিলিরুবিন মেটাবলিজমে প্রধান অঙ্গ হিসেবে কাজ করে লিভার, তাই জন্ডিসের প্রধান কারণ লিভারের বিভিন্ন রোগ- যাকে আমরা বলি হেপাটিক বা হেপাটোসেলুলার জন্ডিস। হেপাটোসেলুলার জন্ডিস বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। যেমন- একিউট এবং ক্রনিক হেপাটাইটিস, সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, ড্রাগ ইনজুরি, জেনেটিক প্রভৃতি নানা কারণে। হেপাটোসেলুলার কারণ ছাড়াও প্রিহেপাটিক ও পোস্ট হেপাটিক কারণে জন্ডিস হতে পারে। প্রিহেপাটিক কারণের মাঝে আছে রক্তের কিছু রোগ, যেখানে রক্ত তাড়াতাড়ি ভেঙে গিয়ে বিলিরুবিন বেড়ে যায় এবং কিছু জেনেটিক কারণ। লিভারের ভেতরে বা বাইরে পিত্তনালিতে টিউমার, ক্যানসার প্রভৃতির কারণে পিত্তনালি ব্লক হয়ে যে জন্ডিস হয় সেটাই পোস্ট হেপাটিক জন্ডিস।

একিউট হেপাটাইটিস

সাধারণত রোগীরা জন্ডিস নিয়ে যখন ডাক্তারের কাছে আসে তখন প্রথমেই চিন্তা করা হয় একিউট হেপাটাইটিস। একিউট হেপাটাইটিসের প্রধান কারণগুলো হলো– ভাইরাল, ড্রাগস এবং টক্সিন, অ্যালকোহল, অটোইমিউন, সেপটিসেমিয়া ইত্যাদি। এর মাঝে আমাদের দেশে খুব বেশি পাওয়া যায় একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস। প্রধানত হেপাটাইটিস এ, বি এবং ই দিয়ে একিউট ভাইরাল হেপাটাইটিস হয়ে থাকে। এর মধ্যে হেপাটাইটিস এ এবং ই ছড়ায় খাবার ও পানির মাধ্যমে এবং হেপাটাইটিস বি ও সি ছড়ায় রক্ত, সেক্সুয়াল কন্টাক্ট বা মা হতে শিশুতে।

একিউট হেপাটাইটিসের লক্ষণগুলো

একিউট হেপাটাইটিস জন্ডিস প্রকাশ পাওয়ার আগেই সাধারণ রোগীর মৃদু জ্বর বা জ্বর জ্বর ভাব, হালকা পেটে ব্যথা, খাদ্যে অরুচি, বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, দুর্বলতা, শরীরে হালকা ব্যথা প্রভৃতি লক্ষণ দেখা যায়। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রস্রাবের রং চোখ, হাত ও পায়ের তালু, শরীর হলুদ হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে জন্ডিসের পরিমাণ বাড়ে, অরুচি বাড়ে, বমি হয়। সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহ বা ক্ষেত্রবিশেষে এক মাস পর্যন্ত এ রকম অবস্থা থাকে। এরপর খাওয়ার রুচি ফেরত আসাসহ রোগী ভালো বোধ করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে জন্ডিস কমে যায়।

একিউট হেপাটাইটিসের চিকিৎসা

একিউট হেপাটাইটিসের প্রধান চিকিৎসা বিশ্রাম এবং স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করা। বিশেষ কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। তবে লক্ষণ অনুসারে বমি কমানো, পেট জ্বালা কমানো, পায়খানা নিয়মিত হওয়া ইত্যাদির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ওষুধ গ্রহণ করা যেতে পারে। যদি অতিরিক্ত বমি হওয়া, একদম খেতে না পারা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, বিলিরুবিনের মাত্রা ১৫ মি গ্রা/ডেসি. লি-এর বেশি হওয়া, গর্ভবতী থাকা ইত্যাদি থাকে তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

মনে রাখতে হবে, জন্ডিসের চিকিৎসায় কোনোভাবেই হারবাল, কবিরাজি কিছু গ্রহণ করা উচিত নয়। বারবার পানি, আখের রস, গুড়ের শরবত, ডাবের পানি, বারবার গোসল করা, হলুদ ছাড়া তরকারি খাওয়া- এসবের কোনো ভূমিকা নেই। পরিপূর্ণ বিশ্রাম এবং স্বাভাবিক খাবার একিউট হেপাটাইটিস চিকিৎসার জন্য যথেষ্ট। সচেতনতাই পারে আমাদের লিভারকে ভালো রাখতে।

লেখক: চিকিৎসক-সহকারী অধ্যাপক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ

এ বিভাগের আরো খবর