ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে চালু হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নতুন প্ল্যাটফরম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’।
ফেসবুক-টুইটারের মতো টেক জায়ান্টদের আধিপত্যে ধস নামানোর লক্ষ্যে নতুন এই প্ল্যাটফরম নিয়ে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প।
অ্যাপল অ্যাপ স্টোরে সোমবার ট্রুথ সোশ্যালের পরীক্ষামূলক অ্যাপটি উন্মুক্ত করা হয়। এর প্রথম কয়েক ঘণ্টায় অ্যাপ স্টোরে বিনামূল্যে ডাউনলোড করা অ্যাপের তালিকায় শীর্ষে ছিল এটি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাপটির জন্য যেসব অ্যাপল ব্যবহারকারী আগে থেকেই অর্ডার দিয়েছিলেন তাদের ডিভাইসে সোমবারই এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডাউনলোড হয়েছে।
তবে অ্যাকাউন্ট তৈরির জন্য নিবন্ধনের সময় জটিলতার মুখে পড়ার কথা জানিয়েছেন অনেক ব্যবহারকারী। ব্যাপক চাহিদার কারণে এমনটি ঘটছে জানিয়ে বার্তাও পেয়েছেন অনেকে।
‘ট্রুথ সোশ্যাল’ অনেকটা টুইটারের অনুকরণে তৈরি। সাবেক আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সবচেয়ে পছন্দের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ছিল টুইটার। তবে সহিংসতাকে উসকে দেয়ার অভিযোগে গত বছর তিনি এই প্ল্যাটফরমে নিষিদ্ধ হন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফেসবুকও একই ব্যবস্থা নেয়।
এরপরেই বিকল্প সামাজিকি যোগাযোগমাধ্যম গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেন ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সোমবার উদযাপন করা হয় প্রেসিডেন্ট ডে। আর এই দিনটিকেই ফেসবুক-টুইটার-ইউটিউবের বিকল্প হিসেবে ট্রুথ সোশ্যাল চালুর জন্য বেছে নেন ডনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ (টিএমটিজি) মনে করছে, নতুন প্ল্যাটফরমটি বিশ্বের জনপ্রিয়তম ও বহুল ব্যবহৃত সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক-টুইটারকে রুখে দেবে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রুথ সোশ্যাল আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। প্রকল্পের নেতৃত্বে থাকা সাবেক কংগ্রেসম্যান ডেভিন নিউনেসের আশা, আগামী মার্চের শেষ নাগাদ এটি পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যবহার করা যাবে।
প্ল্যাটফরমটি পরিচালনার জন্য ডনাল্ড ট্রাম্পের মালিকানাধীন ট্রাম্প মিডিয়া অ্যান্ড টেকনোলজি গ্রুপ (টিএমটিজি) ও একটি বিশেষ অধিগ্রহণ সংস্থা ডিজিটিল ওয়ার্ল্ড অ্যাকুইজিশন করপোরেশন (ডিডব্লিউএসি) একীভূত হয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন করা হচ্ছে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে টিএমটিজি আভাস দিয়েছে, অ্যামাজন ডটকমের এডব্লিউএস ক্লাউড আর গুগল ক্লাউডকে টেক্কা দেয়া লক্ষ্য তাদের।
বিবৃতিতে টিএমটিজি জানায়, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য ডিডব্লিউএসির সঙ্গে একীভূত হবে প্রতিষ্ঠানটি। ডিডব্লিউএসি একটি ‘ব্ল্যাংক চেক কোম্পানি’, অর্থাৎ কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নেই তাদের। বরং অন্য কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়াই লক্ষ্য ডিডব্লিউএসির।
নতুন প্ল্যাটফরম চালুর বিষয়ে গত বুধবার দুটি কোম্পানির পক্ষ থেকে দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি তে ট্রাম্পের একটি বক্তব্যও প্রকাশ করা হয়।
সেখানে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি, যেখানে টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মে তালেবানের মতো কট্টরপন্থিদের বিচরণ দিন দিন বাড়ছে। তাও আপনাদের জনপ্রিয় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট নিশ্চুপ। এটা অগ্রহণযোগ্য।
‘টিএমটিজি সব মানুষকে কথা বলার সুযোগ দেয়ার মহৎ লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল… ট্রুথ সোশ্যালে আমার সত্যটা আমি প্রকাশ করব খুব শিগগিরই। নিজের চিন্তাভাবনা আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেব এবং বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করব।’
গত বছরের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার ঘটনায় টুইটার-ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিকমাধ্যম ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর ২০২৪-এ পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প।