ব্রিটিশ সুপার মডেল নাওমি ক্যাম্পবেল মা হয়েছেন সম্প্রতি। নতুন মা হওয়ার পরও আগের মতোই ব্যস্ত ৫১ বছর বয়সী এ তারকা। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মিলান, লন্ডন, প্যারিসের নামিদামি সব ফ্যাশন শো। কাজ করছেন বিশ্বসেরা ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে। ৯ মাস বয়সী মেয়েকে সামলে নাওমি কীভাবে পেশাগত কাজ সমানতালে করে যাচ্ছেন, সেটি জানতেই তার মুখোমুখি হয়েছিল বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ভোগ। ভোগে নাওমি ক্যাম্পবেলের ব্যস্ত দিনলিপি নিয়ে লিখেছেন সারাহ হ্যারিস। আর সেটি অবলম্বনে নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।নাওমি দেরি করে ফেলেছেন। ৩৪ দিন, ২ ঘণ্টা, ১৫ মিনিট দেরি। ঠিক এতটা সময় আগে তার সঙ্গে আমাদের দেখা হওয়ার কথা ছিল। এখন যখন দেখা হচ্ছে, তখন নাওমি কাতার থেকে লন্ডনগামী এক ফ্লাইটে। আমাদের জন্য তিনি নিজের ব্যস্ত ও কোলাহলপূর্ণ জীবন থেকে এটুকু সময়ই বরাদ্দ করতে পেরেছেন। বিমানের ওয়াই-ফাইয়ের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে আমাদের। এ কারণে তার সঙ্গে ভিডিও কল করাও সম্ভব হয়নি।
তবে আমাদের ফটোগ্রাফার স্টিভেন মেইজেল ভোগের জন্য তার যে ফটোশুট করেছেন, সেসব ছবি দেখার পর নাওমিকে আমার সামনাসামনি না দেখলেও চলবে। ৫১ বছর বয়সেও নাওমি এক দেবীর মতো। নিঁখুত ত্বক, অসাধারণ চুল ও অবিশ্বাস্য চেকনাই ধারালো দেহ।
বিমান থেকে কথা বলার সময় যে বিষয়টি সার্বক্ষণিক বোঝা গেছে তা হলো, ৯ মাসের মেয়েকে নিয়ে কথা বলার সময় তার মাতৃত্ববোধ। নাওমির মেয়ে তার সঙ্গেই ছিল এবং অবাক করার মতো বিষয় হলো, আমাদের কলের সময় সে একদম চুপচাপ ছিল।
নাওমি গর্বভরে বললেন, ‘আমি খুব ভাগ্যবান যে ও আমার সঙ্গে ঘুরতে ভালোবাসে। টেক-অফ বা ল্যান্ডিংয়ের সময় এতটুকু বিরক্ত করে না। খুব ভালো মেয়ে। ঠিকঠাক ঘুমায়। একেবারেই কান্নাকাটি করে না। বয়সের তুলনায় ও খুবই বুদ্ধিমান। কিছুদিন হলো হাত নাড়ানো শিখেছে। খুবই মজার। অনেক হাসে। আর অল্প কয়দিনের মধ্যেই কথা বলা শুরু করবে।
‘আমার মনে হয় হামাগুড়ি দেয়ার আগেই সে হাঁটা শুরু করবে। ওর এরই মধ্যে ছয়টি দাঁত উঠে গেছে। দাঁত নিয়েও একদম কোনো বিরক্ত করে না।’
সত্যিই আদর্শ ও একটা শিশু। এক সুপার মডেলের আদর্শ শিশু।
২০২১ সালের মে মাসে নাওমি তার ও ছোট কন্যাশিশুর ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে মা হওয়ার ঘোষণা দেন। ছবিতে মেয়ের ছোট্ট তুলতুলে পা নিজের হাতে ধরে রেখেছিলেন। মেয়ের জন্মের বিস্তারিত এখনও কাউকে জানাননি তিনি।
এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নিশ্চিত করেন, ‘ও দত্তক নেয়া নয়। ও আমার মেয়ে।’
বাকিটুকু নিজের বইয়ে বিস্তারিত লিখবেন বলে জানান নাওমি। বইয়ের কাজ এখনও শুরু করেননি, মেয়ের নামও কাউকে জানাননি। খুব কম মানুষই জানতেন, নাওমি মাতৃত্বের পরিকল্পনা করছেন।
তিনি বলেন, ‘ওর জন্মের খবর জানতেন এমন মানুষের সংখ্যা একবারে হাতেগোনা। তবে ও আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সেরা বিষয়।’
নাওমি তার জীবনের আনন্দের এ উৎসকে ভোগের প্রচ্ছদে নিয়ে এসেছেন। ক্যামেরার সামনে শিশুটি ছিল একেবারে স্বাভাবিক।
নাওমি বলেন, ‘ও আলো খুব পছন্দ করে। সবার দিকে তাকাচ্ছিল। ও মানুষের চোখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে। সবকিছু বোঝার চেষ্টা করে।’
অবাক করার মতো বিষয় ছিল, স্টিভেন মেইজেল তার অন্যতম কাছের বন্ধু ও সহকর্মী। নাওমি তাকে ১৬ বছর বয়স থেকে চেনেন। তবে এবার তার সঙ্গে ভোগের ফটোশুট করার সময় নাওমি নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘স্টিভেনের সঙ্গে কাজ করতে গেলে আমি সব সময় নার্ভাস হয়ে পড়ি। আমি অনেক বেশি মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি নতুন কিছু একটা ঘটাতে। স্টিভেনের চোখে নতুন কিছু পড়তে এবং তার নির্দেশনা বুঝে শতভাগ দিতে আমি চেষ্টা করি।’
১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে নিউ ইয়র্কে প্রথম দেখা দুজনের। সে স্মৃতি এখনও নাওমির মনে উজ্জ্বল।
তিনি বলেন, ‘আমি অ্যাপলো স্টুডিওতে ঢোকার পরই তাকে দেখি। সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে হয় মানুষটা কী দারুণ! সে সত্যিই ভেতরে ও বাইরে একজন সুন্দর মানুষ। খুব বুদ্ধিমান ও সপ্রতিভ। স্টিভেন আমার কাছে পরিবারের মতো।’
চলতি মৌসুমে নাওমি প্যারিস, মিলান ও লন্ডনে ভারসাচে, আলেক্সান্ডার ম্যাককুইন, বালমেইন ও ল্যানভিনের হয়ে র্যাম্প করেছেন। এখনও ফ্যাশন শোতে অংশ নেয়া উপভোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমি এখনও মজা পাই, কিন্তু খুব নার্ভাস লাগে! আমার বয়স এখন ৫১। আর আমি যে মেয়েগুলোর সঙ্গে র্যাম্পে হাঁটছি তাদের বয়স ১৮।’
অতীত বা বর্তমানে কেউ-ই নাওমির মতো র্যাম্পে হাঁটেননি। পুরোটাই যেন তার নখদর্পণে। আগের দিনের সঙ্গে এখনকার সময়ের তুলনাও করলেন এ সুপার মডেল। নিজের স্বর্ণযুগের বান্ধবী ও প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য তিন সুপার মডেল লিন্ডা এভানজেলিস্তা, সিন্ডি ক্রওফোর্ড ও ক্রিস্টি টার্লিংটনের কথা বললেন নাওমি।
বলেন, “অবশ্যই এখনও ভালো লাগে। বিশেষ করে যখন আমার বান্ধবীদের সঙ্গে অংশ নিচ্ছি। একই সঙ্গে এ বয়সে তরুণদের সঙ্গে অংশ নিতে পারাটা দারুণ। তবে বেশ কয়েকটি শোতে আমার মনে হয়েছে আমি ওদের বলি, ‘আরে মেয়ে! কী করছ! দ্রুত হাঁটো। এত ধীরে হাঁটছ কেন?’ তবে আমার সময়টা আনন্দময় ছিল। আমরা হাসাহাসি করেছি। আমাদের ব্যক্তিত্বের দিকগুলো তুলে ধরতে পেরেছি।”
নাওমি, লিন্ডা, সিন্ডি ও ক্রিস্টি এ চার গ্ল্যামারাস, উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও জেনেটিক্যালি নিখুঁত নারী তাদের সময়ে ফ্যাশনকে পাল্টে দিয়েছিলেন। তাদের অবস্থান ও খ্যাতি এত শক্তিশালী ছিল যে, বিখ্যাত যে সব ব্র্যান্ডের জন্য তারা কাজ করতেন সেগুলোর চেয়ে তাদের নাম অনেক সময় বড় হয়ে উঠত।
নাওমি বলেন, ‘অবিশ্বাস্য একটা সময় ছিল। আমরা অনেক কষ্ট করেছি। যত শো থাকুক, যতবারই পোশাক বদলাতে হোক না কেন, আমরা কখনও বলিনি যে ক্লান্ত লাগছে। আমরা সবাই কাজটিকে ভালোবাসতাম এবং একে অপরকে চাঙা রাখতাম।
‘এমন সময় ছিল যখন একদিনে আমরা আটটি শো করেছি। এরপর সন্ধ্যায় ডিজাইনারের সঙ্গে উদযাপন করেছি। আমি ভাবি, এখনকার মডেলরা আমাদের সঙ্গে পেরে উঠতেন কিনা।’
তিন দশকের বেশি সময় পর তারা এখনও বন্ধু। নাওমি জানালেন, তাদের একটা চ্যাট গ্রুপ আছে। তার মেয়ে যখন মাত্র কয়েক দিনের তখন সিন্ডি ক্রওফোর্ড প্রথম দেখা করেন। ক্রিস্টি টার্লিংটনের সঙ্গে নাওমির মেয়ের দেখা হয় যখন ওর বয়স সপ্তাহ দুয়েক। আর লিন্ডা এভানজেলিস্তা এখনও ওকে দেখেননি।
এই চারজন এখন কাজ করছেন অ্যাপল টিভি প্লাসের ডকুমেন্টারি সিরিজ ‘দ্য সুপারমডেলস’ নিয়ে। এর পরিচালক অস্কারজয়ী পরিচালক বারবারা কোপল। সিরিজে এই চার মডেলের ৯০ দশকের রাজত্ব মনে করিয়ে দেয়া হবে। রন হাওয়ার্ডের সঙ্গে চারজনই সিরিজটির নির্বাহী প্রযোজকের ভূমিকায় আছেন।
সিরিজ নিয়ে নাওমি বলেন, ‘এটা আমাদের চার জনের জীবন, ক্যারিয়ার, নারীত্ব ও মাতৃত্ব নিয়ে। মডেল হিসেবে আমাদের নিজের ইমেজের স্বত্ব আমাদের কাছে থাকে না। যে কারণে আমাদের নিজেদের মতো করে নিজেদের গল্প বলতে পারাটা আনন্দের।’
দক্ষিণ লন্ডনের স্ট্রেদমে নারীবেষ্টিত পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন নাওমি। তার মা ভ্যালেরি মরিস-ক্যাম্পবেল একজন নৃত্যশিল্পী ছিলেন, যিনি বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় পারফরম করতেন।
নাওমি জানান, তার বেড়ে ওঠার সময় পারিবারিক সহায়তা পেয়েছেন। খালারা তাকে মিলান ও প্যারিসে বিভিন্ন কাজের জন্য উৎসাহ দিতেন। পরিবারের প্রধান ছিলেন তার প্রিয় নানি জ্যামাইকান।
তিনি বলেন, ‘নানিই আমাকে রান্না করা ও ঘর পরিষ্কারের কাজ শিখিয়েছেন। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পর আমার জুতা ও নাচের পোশাক পরিষ্কার করতাম। শৃঙ্খলা আমার মতে খুবই জরুরি। আমার বেড়ে ওঠার সময় সেটা ছিল এবং আমিও এ রকমটাই চাইব।’
তিনি ১২ বছর বয়স পর্যন্ত বারবারা স্পিক স্টেজ স্কুলে পড়াশোনা করেন। সেখানে নাচ ও নাটক ছাড়াও বক্তৃতা দেয়ার প্রশিক্ষণ পান। এক কথায়, যে ধরনের শিক্ষা একটি তরুণ মেয়েকে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক শিল্পে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে পারে সেগুলো তিনি পান এ স্কুলে।
নাওমি বলেন, ‘আমি দৃঢ়চেতা নারীদের পরিবার থেকে এসেছি। পরিবার ও আমার স্কুলে শিখেছি, কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয় এবং নিজের অধিকারের জন্য ঘুরে দাঁড়াতে হয়।’
সামাজিক বিভিন্ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিবেদিত থাকা, নিজের ও অন্যদের পক্ষে দ্বিধাহীনভাবে কথা বলা, পরিবর্তনের শক্তি হয়ে ওঠা এবং বৈচিত্র্যহীনতার অভাবে ভুগতে থাকা একটি শিল্পে কৃষ্ণাঙ্গদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষে তার দীর্ঘদিনের ভূমিকার পেছনে কারণও এটি।
৯০-এর দশক থেকেই অচেনা ডিজাইনার ও ফ্যাশন পত্রিকার সম্পাদকদের বিষয়ে তিনি কোনো বাছবিচার করতেন না। নাওমি বলেন, ‘যারাই ফোন ধরতেন তাদেরই কল দিতাম। কোনো অভিযোগ করার জন্য নয়, মানুষকে সচেতন করে তোলার জন্য।’
তিনি নিজে থেকেই জানান, তার কোম্পানি উইমেন ম্যানেজমেন্টের এজেন্ট আকিম রাসুল একজন কৃষ্ণাঙ্গ। রাসুলের সঙ্গে মিলে নেওমি চান আফ্রিকা, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো নতুন বাজারগুলোর উদীয়মান তরুণ প্রতিভাবাদের সঙ্গে কাজ করতে। তাদের জন্য একটা প্ল্যাটফরম তৈরি করতে চান তিনি।
আডুট আকেচ ও উগবাদ আবদির মতো এখনকার দারুণ সফল কৃষ্ণাঙ্গ মডেলদের কাছে তিনি অনেকটা মাতৃসুলভ এক ব্যক্তিত্ব। আকেচ ও আবদির মতো আফ্রিকান মডেলরা বর্তমানে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। একই সঙ্গে তারা সৌন্দর্যের ধারণাও বদলে দিচ্ছেন।
নাওমির কী ধারণা? তাদের সময়ে এমন পরিবর্তন সম্ভব ছিল?
উত্তরে তিনি বলেন, ‘সবার যাত্রাপথ লেখা থাকে। আমার যাত্রা এটা, এভাবেই এটা লেখা ছিল। তবে হ্যাঁ, অনেকবারই এমন হয়েছে, আমি র্যাম্পে হেঁটেছি কিন্তু আমাকে বিজ্ঞাপনে পরে আর নেয়া হয়নি। তখন কষ্ট পেতাম। অনেক কষ্ট পেতাম। এগুলোকে আমাদের টপকে এগিয়ে যেতে হবে। এখনকার মতো তখন যদি আমি সমর্থন পেতাম তাহলে দারুণ হতো। তবে এখন যা হচ্ছে সেটার জন্য আমি গর্বিত।
‘ভিন্নতা দেখতে পেয়ে আমি গর্বিত। তবে আমি আন্তরিকভাবেই বলছি, আমরা এখন কোনো ট্রেন্ড তৈরির চেষ্টায় নেই। অনেক কোম্পানিই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে, কারণ তারা আলোচনার বাইরে থাকতে চায় না। আমি বলব, এভাবে কাজ করার দরকার নেই। এটা যে সঠিক সেটা বুঝে কাজ করা উচিত। সেটি অর্জনে এখনও দীর্ঘ পথ বাকি।’
আগের মতোই নাওমি কাজের ক্ষেত্রে নিরলস। গত সেপ্টেম্বরে, তিনি দ্য কুইন্স কমনওয়েলথ ট্রাস্টের বৈশ্বিক দূতের দায়িত্ব নেন। তার কাজের মধ্যে রয়েছে দাতব্য সংস্থাটির তহবিল সংগ্রহের চেষ্টাকে সাহায্য করা এবং এর তরুণ অধিকারকর্মীদের প্রচারের আলোয় নিয়ে আসা।
নাওমি এ প্রসঙ্গে বলেন, “ম্যান্ডেলা আমাকে একটি কথা বলেছিলেন, সেটি আমি সবসময় মনে রাখি। তিনি বলেছিলেন, ‘তখনই ঘুমাব যখন আমি চলে যাব। যতক্ষণ বেঁচে আছি ও শক্তি আছে আমি কাজ করে যাব।”
মা হওয়ার পর নাওমি কাজ করার নতুন উদ্যোম ও শক্তি পাচ্ছেন বলে জানালেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের সমর্থক। যে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতি আমার সমর্থন আছে। এ সমস্যাগুলো যতদিন ধরে আছে আমি তার চেয়ে বেশিদিন ধরে এ নিয়ে কথা বলছি। আমার জন্য এটি নতুন কিছু নয়।’
জীবনে সন্তান আসার পর এই পরিবর্তনগুলো ঘটানোর জন্য আরও কারণ খুঁজে পাচ্ছেন নাওমি।
বলেন, ‘আমি জানতাম কোনো একদিন মা হব। আমি ভাবতেও পারিনি বিষয়টি এত আনন্দের। আমি জানি, ওকে পেয়ে আমি কতটা ভাগ্যবান।’
নাওমির উদ্যোম এতটাই যে, তার ও তার মেয়ের মধ্যে যে ৫০ বছরের ব্যবধান সেটি একেবারেই বোঝা যায় না। নাওমি মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়েই তরতাজা থাকতে পারেন ও কর্মশক্তির দিক থেকে হয়ত এখনও ২০ বছর বয়সী যে কাউকে হারিয়ে দিতে পারেন। তিনি এখন তার বয়সী সব বন্ধুদের বলছেন, সন্তান গ্রহণ করতে।
তিনি বলেন, ‘আমি তাদের সবাইকে বলেছি, সন্তান নিয়ে নাও। এত চিন্তা করো না।’
নাওমির মেয়ে তার সঙ্গে সব জায়গায় যায়। বড়দিন তারা উদযাপন করেছেন পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণ ফ্রান্সে। নিউ ইয়ার্স ইভে তারা দুজন গেছেন কাতারে, তারপর কয়েক দিনের জন্য লসএঞ্জেলেসে যাওয়ার আগে কয়েক ঘণ্টার জন্য লন্ডন ও প্যারিস গেছেন।
নাওমি প্যারিসে অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন, তবে সেখানে লুই ভুইতনের হয়ে ছেলেদের জন্য করা ভার্জিল আবলোর শেষ শোতে র্যাম্পে অংশ নেন। নাওমি ও তার মেয়ে আসলে কোথায় বাস করেন জানতে চাইলে তার তড়িৎ উত্তর, ‘আমরা বিশ্ব নাগরিক!’
তিনি এখন এই মুহূর্তগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইছেন। নাওমি জানেন, তার মেয়ে স্কুলে পড়া শুরু করলে এই স্বতঃস্ফূর্ততা ও স্বাধীনতা শেষ হয়ে যাবে।
নাওমি ‘এক অসাধারণ ন্যানি’ পেয়েছেন, যিনি তার মেয়ের জন্মের দিন থেকে তার সঙ্গে আছেন। মেয়ের সেই ন্যানি দুজনের এই পুরো বিশ্বে ইয়ো-ইয়োর মতো ঘুরে বেড়ানোকে সহজ করে তুলেছেন। এই ন্যানিকে খুঁজে পেতে নাওমিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করতে হয়নি। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সুপারিশে তিনি তাকে নিয়োগ দেন।
নাওমি তার মেয়ের চোখ দিয়ে নিজের জীবনকে উপভোগ করছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আবার একটা বাচ্চার মতো হয়ে গেছি। নার্সারি রাইমস পড়ছি আবার, কত ধরনের নতুন খেলনা আছে সেগুলো শিখছি এবং সেগুলো দিয়ে খেলছি! কত ধরনের যে পুতুল আছে! এত কিছু আছে যা আমি আগে কখনও ভাবিনি।’
তিনি জানান, তার মেয়ে মিউজিক বক্স পছন্দ করে। ও বিভিন্ন রঙ, আকার এবং নকশা নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। এছাড়া বাচ্চাদের জামা-কাপড় তো আছেই! শিগগির তার মেয়ে জামার সংখ্যার দিক দিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
নাওমি বলেন, ‘ওর ক্লজেটে খুব সুন্দর সুন্দর কিছু জামা আছে। আমার বন্ধু ও ডিজাইনাররা ওকে সেগুলো উপহার হিসেবে পাঠিয়েছে। অবাক করার মতো ব্যাপার, শিশুরা কত তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে! তাই না?’
নাওমির নিজের কাছেও রয়েছে আলাইয়া, শ্যানেল, ভারসাচের মতো ব্র্যান্ড। এগুলো নিয়ে তিনি নতুন একটি প্রজেক্ট শুরু করতে যাচ্ছেন। আপাতত এটুকুই শুধু জানালেন।
নাওমি ফোন কেটে দেয়ার আগে আগে তাকে জিজ্ঞাসা করি, মা হওয়ার পর সবচেয়ে বড় চমক কী ছিল?
বিনাদ্বিধায় তিনি উত্তর দেন, ‘সবার আগে আমার মেয়ে। আমি এখন যা করি, তার জন্যই করি- এটাই। এটা সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ, তাই না?’ আমি জিজ্ঞাসা করি, ‘ও কি আরও চায়?’
নাওমি হাসিতে দমকে উঠে উত্তর দেন, ‘অবশ্যই। কেন চাইবে না?’