জীবনে প্রেম নেই বলে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন অনেকেই। ভালোবাসা দিবসে রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাবেশ দেখা গেছে তাদের। এর মধ্যে প্রেমে পুঁজিবাদ খুঁজে পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের একদল প্রেমহীন যুবক।
তাই যারা প্রেম করছেন তাদের ওপর ক্ষোভও ঝেড়েছেন এই দ্রোহীরা। গলা উঁচিয়ে স্লোগান দিয়েছেন- ‘একটা একটা ডাবল ধর, ধইরা ধইরা সিঙ্গেল কর’ কিংবা ‘প্রেমের সুষম বণ্টন চাই’ ‘পুঁজিবাদী প্রেম চলবে না, চলবে না’।
কিশোরগঞ্জ শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ, নরসুন্দা তীরের মুক্তমঞ্চ আর ওয়াচ-টাওয়ারের আশপাশেই ছিল প্রেমহীনদের মিলনমেলা। ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল সংগ্রাম পরিষদ, কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ব্যানারে এমন আয়োজন করা হয়।
‘দুঃখজনক’ বিষয় হলো মিছিলটি যখন কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ এলাকা থেকে নরসুন্দা তীরের দিকে যাচ্ছিল তখন তাদের ব্যানার দেখে হাসি-ঠাট্টা করছিলেন পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া প্রেমিক যুগলরা। এ ছাড়া আরও অনেকেই মিছিলটি দেখে মজা নিয়েছেন বলে জানান স্থানীয় রাইসুল ইসলাম। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছিলেন তিনি নিজেও!
রাইসুল বলেন, ‘দিনশেষে তাদের এই কার্যক্রম দেখে বেশির ভাগ মানুষ হাসিখুশিতেই মেতে ছিল। অনেককে বিকেলে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখা গেলেও প্রেমহীনদের মিছিলটি তাদের বিনোদন দিয়েছে। আমি নিজেও তাদের মিছিল সমাবেশ দেখে হেসেছি। তা ছাড়া যে পরিমাণ লোক তাদের মিছিল সমাবেশে জড়ো হয়েছে, তার চেয়ে বহুগুণ লোক জড়ো হয়েছিল তাদের মিছিলটি উপভোগ করার জন্য।’
বাংলাদেশ সিঙ্গেল ঐক্য পরিষদ, কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল আহাদ রানা বলেন, ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আমরা বঞ্চিত। অনেকে চার-পাঁচটা প্রেম করে একেক সময়ে একেকটা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আমরা একটাও পাচ্ছি না। আমরা প্রেমের এমন বণ্টন চাই না, সুষমও বণ্টন চাই।
বিক্ষোভ মিছিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিঙ্গেল ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের প্রতিষ্ঠাতা মো. রাকিবুল হাসান, বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিঙ্গেল ঐক্য পরিষদ কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহাম্মেদ। এ ছাড়া ছিলেন জেলা শাখার সদস্যরা।
এদিকে ভালোবাসা দিবসে বরিশালে হলো চিরকুমার সভা। এ সভার আয়োজক ছিল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিখিল বাংলা চির কুমার সংঘ’।
সোমবার দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সংঘের সভাপতি রাকিব হোসাইনের সভাপতিত্বে র্যালি ও আলোচনাসভা করা হয়। সভায় প্রেমহীন যুবকরা ভ্যালেনটাইনস ডেকে একটা নষ্ট দিন আখ্যায়িত করেছেন এবং এই দিবসটিকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
প্রেম রোগে আসক্তদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বক্তারা বলেন, প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এসব ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড প্রতিহত করতে হবে।
প্রেম, ভালোবাসার নামে চুলকানি ও সুড়সুড়ি থেকে বিরত থেকে সবাইকে চির কুমার সংঘের ছায়াতলে আসার আহ্বানও জানান বক্তারা।
চির কুমার সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আসিফুর রহমান আসিফসহ মো. মাসুম, লিয়াকত মোর্সেদ ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।
‘দেহ দিয়ে প্রেম নয়, মন দিয়ে প্রেম হয়’- প্রেমবঞ্চিতদের এমন স্লোগান শোনা গেছে জয়পুরহাটে। ‘প্রেমবঞ্চিত সংঘ’ নামে স্থানীয় একটি সংগঠনের সদস্যরা জয়পুরহাট সরকারি কলেজে এই কর্মসূচি পালন করেন।
এ সময় তারা আরও স্লোগান দেন- ‘তুমি কে, আমি কে- বঞ্চিত, বঞ্চিত’ ‘কেউ পাবে তো কেউ পাবে না, তা হবে না তা হবে না’।
প্রেমবঞ্চিত সংঘের জেলা শাখার সভাপতি হামিদুর রহমান স্মরণ বলেন, ‘আমরা প্রেমের বিরোধী নই। তবে ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেমের নামে যে ভণ্ডামি চলে তার প্রতিবাদ করছি। একজনের একটাই প্রেম থাকবে, একের অধিক আমরা মেনে নেব না।’
সংঘের জেলা শাখার প্রচার সম্পাদক রনি হাসান বলেন, ‘আমরা চাই, প্রেম হোক সর্বজনীন।’
সভায় সভাপতি হামিদুর রহমান স্মরণ, সহসভাপতি আলমগীর কবির, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়ামিন আলী, প্রচার সম্পাদক রনি হাসান, দপ্তর সম্পাদক রিফাতসহ অনেকেই বক্তব্য দেন।
এদিকে প্রেমহীনদের বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভালোবাসা দিবসে শাড়ি ও লুঙ্গি সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেমবঞ্চিত শিক্ষার্থীদের রম্য সংঠন সিঙ্গেল ঐক্য পরিষদ।
শাড়ি ও লুঙ্গি পরে ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট স্মরণ চত্বরে সংগঠনের সদস্যরা সমাবেত হন। মিছিল নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের জারুলতলার উদ্দেশে রওনা হলেও শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে গিয়েই তা শেষ হয়ে যায়।
মিছিলে তারা স্লোগান দেন- ‘তোমরা কে, আমরা কে- সিঙ্গেল, সিঙ্গেল’/এসেছি একা, যাব একা/ নিঃসঙ্গে স্বর্গবাস, মিংগেল হলেই সর্বনাশ’।
প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবেই তারা শাড়ি আর লুঙ্গি পরেছেন বলে জানান সংগঠনের সহসভাপতি রবি হোসাইন।