ভালোবাসা হৃদয়ের গভীরতম অনুভূতি। ভালোবাসা মানে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভব। এই ভালোবাসার জন্য নগরী ধ্বংস হওয়ার ঘটনা ইতিহাসে আছে। মৃত্যুকে মাথা পেতে নিয়েছেন অনেকেই।
রাজরক্তের বাইরের মানুষকে ভালোবেসে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার নজিরও আছে। প্রিয় মানুষের সঙ্গে জীবন কাটাতে তারা বিসর্জন দিয়েছেন শাসক হওয়ার সুযোগ। ইতিহাসে এমন ১২ রাজপুত্র ও রাজকুমারীর ভালোবাসা জয়ের গল্প প্রচলিত।
রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড
ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জের বড় ছেলে এডওয়ার্ড। ১৯৩৬ সালের জানুয়ারিতে সিংহাসনে বসেন তিনি। কিন্তু ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেতে ওই বছরের ডিসেম্বরে ক্ষমতা ছাড়েন তিনি।
আবেগপ্রবণ এই রাজা ভালোবেসেছিলেন ওয়্যালিস সিম্পসন নামে এক আমেরিকান নারীকে। প্রথা অনুযায়ী রাজরক্তের বাইরে কাউকে বিয়ে করা সম্পূর্ণ নিষেধ। আর তা যদি করতেই হয়, তবে ছাড়তে হবে রাজপরিচয়।
রাজা অষ্টম এডওয়ার্ড শাসক হওয়ার চেয়ে প্রেয়সীকে কাছে পাওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছিলেন। ১৯৭২ সালে এডওয়ার্ডের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই দম্পতি একসঙ্গেই ছিলেন।
এক রেডিও শোতে এডওয়ার্ড বলেছিলেন, “ভালোবাসার মানুষ পাশে না থাকায় রাজ্য সামলানো আমার কাছে বোঝা মনে হয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”
জাপানি চার রাজকন্যা
জাপানের সম্রাট হিরোহিতোর মেয়ে প্রিন্সেস আতসুকোর বয়স তখন ২১। সময়টা ১৯৫২ সালের অক্টোবর। এই রাজকুমারী বিয়ে করেন তার থেকে চার বছরের বড় এক খামারিকে।
রাজপরিবারের অনেকেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও সম্রাট হিরোহিতো সেখানে যাননি। পরে তিনি জানিয়েছিলেন, শারীরিক অসুস্থতা তার অনুপস্থিতির কারণ ছিল।
প্রিন্সেস আতসুকো। ছবি: আসি প্রেস
জাপানের আরেক সম্রাট আকিহিতো ও সম্রাজ্ঞী মিচিকোর একমাত্র মেয়ে প্রিন্সেস সায়াকো একই কাজ করেন ২০০৫ সালে। সে বছর রাজকীয় উপাধি ছেড়ে তিনি গাঁটছড়া বাঁধেন এক নগর পরিকল্পনাবিদের সঙ্গে।
বিয়ের পর সায়াকো বলেছিলেন, “জীবনে অনেক কিছু শিখতে চাই। নতুন জীবনে এগিয়ে যেতে চাই। এ জন্য উপাধির পাশাপাশি সম্পদ থেকেও বঞ্চিত হয়েছি।”
স্বামীর সঙ্গে প্রিন্সেস সায়াকো। ছবি: রয়টার্স
জাপানের রাজপরিবারের আইন অনুযায়ী, রাজপুত্ররা এমন পরিস্থিতিতে কোনো বাধার মুখে পড়েন না। এসব কেবল রাজকুমারীদের ক্ষেত্রেই।
প্রিন্স হিসাকো ও প্রিন্সেস তাকামাদোর মেয়ে প্রিন্সেস আয়াকো ২০১৮ সালের অক্টোবরে বিয়ে করেন একটি শিপিং কোম্পানির কর্মচারীকে। পূর্বসূরিদের মতো, আয়াকোকেও হারাতে হয় তার রাজ উপাধি।
জাপানের রাজপরিবারে সবশেষ এমন ঘটনাটি দুই বছর আগে, ২০২০ সালে। তিনি হলেন প্রিন্সেস মাকো। অতি সাধারণ একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়ে হারান রাজকীয় সব মর্যাদা।
এগিয়ে সুইডেনের রাজপুত্ররা
সুইডেনের প্রিন্স কার্ল ইয়োহান ১৯৪৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রেমে পড়েন সাংবাদিক কার্স্টিন উইকমার্কের। প্রেমে এতটায় মত্ত ছিলেন যে তাকে বিয়ে করতে ঘোষণা দিয়ে রাজকীয় উপাধি ছেড়ে দেন ইয়োহান।
স্ত্রীর সঙ্গে প্রিন্স কার্ল জোহান। ছবি: সংগৃহীত
ইয়োহানের আগে একই কাজ করেছেন তার এক দাদা। ১৮৮৮ সালে প্রেমের টানে কার্ল জোহান ছেড়েছিলেন রাজপরিবার। জোহানের ভাই সিগভার্দ ও ইয়োহানের চাচাতো ভাই লেনার্টও একই কাজ করেন ১৯৩২ সালে। এই পরিবারের আরেক সদস্য বার্টিল ৩০ বছরের প্রেয়সীকে বিয়ে করেন ১৯৭৬ সালে।
প্রিন্স ফ্রিসো
নেদারল্যান্ডসের রানি বিয়াট্রিক্সের ছেলে প্রিন্স ফ্রিসো। মাবেল উইজি স্মিট নামের এক সাধারণ নারীকে ভালোবেসেছিলেন তিনি। তাকে পেতে সবকিছু ত্যাগও করেছিলেন।
স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে প্রিন্স ফ্রিসো। ছবি: উইকিপিডিয়া
এই দম্পতি অরেঞ্জ-নাসাউয়ের সম্মানসূচক প্রিন্স ও প্রিন্সেস খেতাব ধরে রাখতে পারলেও প্রিন্স ফ্রিসো হারান ক্ষমতার উত্তরাধিকার।
প্রিন্সেস উবলরত্না
থাইল্যান্ডের রাজপরিবারের সদস্য প্রিন্সেস উবলরত্না। উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৭২ সালে পাড়ি জমিয়েছিলেন আমেরিকায়। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে (এমআইটি) পড়ার সময় প্রেমে পড়েন এক আমেরিকান তরুণের। তাকে বিয়ে করার পর পরই রাজপরিবার থেকে বের করে দেয়া হয় উবলরত্নাকে।
প্রিন্সেস উবলরত্না। ছবি: উইকিপিডিয়া
দুঃখজনকভাবে বিয়েটা টেকেনি। ১৯৯৮ সালে যখন তাদের বিচ্ছেদ হয়, তখন তাদের ঘরে তিন সন্তান। মায়ের সিদ্ধান্তের কারণে তারাও বঞ্চিত হয় থাই রাজপরিবারের উত্তরাধিকার থেকে।