‘গোলাপে রয়েছে আঁচ, পতঙ্গের ডানা পুড়ে যায়’- তবুও প্রেয়সীর জন্য গোলাপকেই বেছে নিয়েছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রিয়তমাকে অভিবাদন জানাতে কবি শহীদ কাদরী লিখেছেন, ‘ভয় নেই/ আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী/ গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে/ মার্চপাস্ট করে চলে যাবে এবং স্যালুট করবে/ কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।’
গোলাপ এভাবেই ভালোবাসার প্রতীকে গণ্য বিশ্বব্যাপী। আর সেই ভালোবাসার প্রতীক প্রিয় মানুষের হাতে তুলে দেয়ার দিন আজ। সারা বিশ্বে ৭ ফেব্রুয়ারি উদযাপন হয় রোজ ডে বা গোলাপ দিবস।
সাত দিন পর আসছে যে ভ্যালেন্টাইন বা ভালোবাসা দিবস, এর ক্ষণগণনা শুরুও এ দিন থেকে। প্রগাঢ় ভালোবাসা উদযাপনের অপেক্ষমাণ সময়গুলোকে আরও মধুর করে তুলতেই গোলাপ দিবসের সূচনা।
রানি ভিক্টোরিয়ার আমল অর্থাৎ দেড় শ বছর আগের কথা। তখন নিজের অব্যক্ত ভালোবাসা প্রিয়জনকে জানাতে শুরু হয় গোলাপ বিনিময় প্রথা। ভিক্টোরিয়ান যুগে মানুষ মনে করত, প্রিয় মানুষের হাতে গোলাপ তুলে দেয়া মানে মনের গোপন অনুভূতি জানিয়ে দেয়া।
আজ প্রিয়জনের হাতে কোন রঙের গোলাপ তুলে দেবেন, তা নিয়ে কোনো বিধিনিষেধ নেই। লাল, গোলাপি, হলুদ, কমলা, সাদা, ল্যাভেন্ডার কিংবা নীল- পছন্দের যেকোনো গোলাপ তুলে দিতে পারেন প্রেয়সীর হাতে। চাইলে গোলাপরঙা জামা গায়ে চড়িয়েও উদযাপন করতে পারেন দিনটি। বাড়ির আঙিনা অথবা বারান্দার টবে রোপণ করতে পারেন গোলাপ চারা।
গোলাপের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় রং লাল। এই লাল গোলাপ চাষের গল্পটা পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। জানা যায়, চীনে গোলাপ চাষ শুরু হলেও পরে ইতালির রোম ও গ্রিসেও এই ফুল জনপ্রিয়তা পায়।
গোলাপের চারাকে শৌখিন উদ্ভিদ হিসেবে দেখা হতো একটা সময়। উপহার হিসেবে ধনীদের হাত ধরে চারাটি আসে শিল্পীদের কাছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আশা, শান্তি এবং প্রেমের প্রতীক থেকে যুদ্ধের প্রতীক হয়ে ওঠে গোলাপ। পনেরো শতকের দিকে ইংরেজ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবেও ব্যবহৃত হতো গোলাপ।
গোলাপকে বলা হয় মনের গভীরতম অনুভূতি প্রকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তাই গোলাপ পরিচিতি পেয়েছে ভালোবাসার আন্তর্জাতিক প্রতীক হিসেবে। প্রিয় মানুষটির হাতে গোলাপ তুলে দিচ্ছেন মানেই আপনি ছড়িয়ে দিচ্ছেন ভালোবাসার বার্তা।