'জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে'- লিখেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। আসলেই তাই। পৃথিবীতে কেউ চিরদিন বেঁচে থাকবে না। তাই বলে মৃত্যুকে সময়ের আগেই ডেকে আনা কোনো কাজের কথা নয়।
তবুও প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতিদিন বাংলাদেশে আত্মহত্যা করেন প্রায় ৩০ জন।
সামাজিক ও অবস্থানগত কারণের ওপর নির্ভর করে আত্মহত্যার প্রবণতা। একাকিত্ব, আর্থিক সমস্যা ও সমাজের নানাবিধ চাপে অবসাদে ভোগেন এ রকম মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। পড়াশোনা করা সত্ত্বেও যোগ্য ব্যক্তি তাঁর উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যক্তিগত জীবনে অশান্তির জের, কর্মক্ষেত্রে হেনস্তা ইত্যাদি নানা কারণ থেকে মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। ইদানীং বয়স্কদের মধ্যেও একাকিত্ব থেকে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এমনও বহু মানুষ আছেন যাঁদের পরিবারে আত্মহত্যার প্রবণতা এক ধরনের অসুখ। সেখান থেকেও কারণে অকারণে লোকজন আত্মহননের দিকে এগোয়।
পরিসংখ্যান বলছে, তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। প্রধান কারণ হিসেবে হতাশার কথা বলা হচ্ছে। তবে মুহূর্তের ভুলে আত্মহত্যা এই বয়সীদের মধ্যে দেখা যায়।
তারপরও আপনার মনের মধ্যে যদি আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে তাহলে মনে রাখবেন, জীবনটা অনেক বড়। অনেক কিছু করার থাকে এখানে। অনেক কিছু জানার থাকে। সোশ্যাল নেটওয়ার্কের বাইরেও একটা জগত থাকে।
আপনার পাশের জনের সঙ্গে কথা বলুন। অনেক বেশি করে মিশতে হবে সবার সঙ্গে। ভার্চুয়াল বন্ধুদের সঙ্গে আপনি চ্যাট করতে পারবেন। হয়তো মেন্টাল সাপোর্ট পাবেন। তবে আপনার পাশের জন যেভাবে আপনার সঙ্গে থাকবে সেভাবে নয়।
পছন্দের কাজ করুন। তার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিন। এক প্রকার জোর করেই তা করতে হবে। নিজেকে বলতে হবে, আমি ভালো থাকব। আপনার চারপাশে এ রকম অনেক মানুষ পাবেন যারা সত্যিই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। অনেক বেশি খারাপ রয়েছেন। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিন।
পছন্দের মানুষজনের সঙ্গে মিশুন। যোগাযোগ রাখুন। পারিবারিক অনুষ্ঠানে থাকার চেষ্টা করুন। নিজের মতো করে মানিয়ে নেয়ার অভ্যাস করুন।
সাফল্য-ব্যর্থতা, ভালো থাকা-মন্দ থাকা এগুলো জীবনের অঙ্গ। ঘুরে ফিরে সবই আসে। সময়ের ওপর ধৈর্য রাখুন। আজ না হলে কাল সাফল্য আসবেই। ভালো কিছু হতে কখনও হয়তো সময় লাগে। কারোর ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি, কারো দেরিতে আসে। কিন্তু আসে।
মনের কথা খুলে বলুন। সে বাবা-মা, বন্ধুস্থানীয়, আত্মীয় যে কেউ হতে পারে। একান্ত না পারলে মনোবিদের কাছে যান। তাঁকে আপনার সমস্যার কথা খুলে বললে তিনি আপনাকে সমাধানের পথ দেখাতে পারবেন।
মানসিক সহায়তা সংস্থা ‘কান পেতে রই‘ আপনার কথা শোনার জন্য তৈরি আছে। কাউকে না পেলে তাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারেন।
আমি ভালো থাকতে পারি, আমার ভালো থাকা কেউ আটকাতে পারবে না- এই কথাটি মন্ত্রের মতো জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিন।
কাউন্সেলিং চিকিৎসার একটা অংশ। আপনাকে কাউন্সেলরের কাছে যাওয়ার পরামর্শ কেউ দিলে তাকে ভুল বুঝবেন না। ‘আমি তো মানসিক রোগী নই.. কেন যাব?’ এ ধরনের প্রশ্ন মনে আনবেন না। হয়তো সেখান থেকেই আপনার সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন।