বাজারে ঘি কিনতে ১০টি দোকানে ঘুরলে একটি সাধারণ চিত্র হয়তো সবটিতেই পাওয়া যাবে। প্রতিটি ব্র্যান্ডের ঘির পাত্রে লেখা থাকতে পারে, ‘শতভাগ খাঁটি ঘি’, কিন্তু পণ্যের গায়ের সে লেখায় মন গলে না ক্রেতার। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে, ‘এই ঘি কি আসলেই খাঁটি?’
ভেজালের ভিড়ে ক্রেতার এ সন্দেহ অমূলক নয়। সেটি কীভাবে দূর করা যায়, তার পথ খুঁজেছে নিউজবাংলা।
ঘি বিক্রিতে যুক্ত তিনজনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সাধারণ বিষয় পাওয়া গেছে। কিছু কঠিন বিষয়ও সামনে এসেছে।
খাঁটি ঘি কীভাবে চিনব
এ নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা লিংক রোডের এক বিক্রেতার সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। ঘি, মধুসহ নানা ধরনের দুগ্ধজাত পণ্য বিক্রয়কারী এ ব্যক্তি জানান, আসল ঘি হাতের তালুতে নিলে সহজে গলে যাবে। নকল ঘি সহজে গলবে না।
তিনি আরও জানান, আসল ঘির ঘ্রাণ কখনোই কমবে না। এমনকি ৫ বছর সংরক্ষণ করলেও ঘ্রাণে হেরফের হবে না। এ ছাড়া আসল ঘিতে তেল ও দানা আলাদা বোঝা যাবে। অর্থাৎ কোনো পাত্রে ঘি থাকলে এর ওপরের দিকে থাকবে তেলের মতো অংশটা। আর নিচের নিকে থাকবে দানাদার অংশ।
বাড্ডার বিক্রেতার কাছাকাছি বক্তব্য দিয়েছেন সিরাজগঞ্জভিত্তিক অনলাইন শপ দেশির উদ্যোক্তা হাসানুল বান্না।
তিনি বলেন, ‘নকল ঘির বোতল বা বয়াম খোলার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁঝালো ঘ্রাণ খুব দ্রুত নাকে আসবে। পক্ষান্তরে আসল ঘির ক্ষেত্রে সময় নিয়ে আসবে; ধীরে ধীরে আসবে এবং দীর্ঘক্ষণ থাকবে।’
বান্না আরও জানান, আসলে ঘি হাতে নিলে গলতে সময় নেবে না। এ ছাড়া অতীতে নকল ঘি খেয়ে আসলটা খাওয়ার পর পার্থক্যটা নিজেই বুঝতে পারবেন ভোক্তা।
এই উদ্যোক্তার পরামর্শ, ঘির গায়ের রং বা ব্র্যান্ড দেখার আগে বিক্রেতার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা উচিত। ব্যবসায় অসততার ইতিহাস থাকলে কারও কাছে খাঁটি পণ্য আশা করা যায় না।
তিনি বলেন, বর্তমানে অনেকেই এ ধরনের পণ্য বিক্রি করছে। তাই একটু চোখ-কান খোলা রেখে আসল পণ্যটি কেনা কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
প্রতারণার ফাঁদ থেকে বাঁচবে কীভাবে
ঘি কিনে ঠকার ইতিহাস আছে অনেকের। এ থেকে বাঁচার উপায় কী, তা জানতে কথা হয় সিরাজগঞ্জভিত্তিক বাথান ডেইরির কর্ণধার আসাদুজ্জামান পলাশের সঙ্গে।
তার ভাষ্য, ঘির আসল-নকল চেনার আগে কিছু সাধারণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। যেমন: ঘির খাঁটিত্ব অনেকাংশে নির্ভর করে দুধের ভালো-মন্দের ওপর। দুধের ভালো-খারাপ নির্ভর করে গরু কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে ওঠে, প্রাণীটি ঘাস নাকি বাজারে বিক্রি হওয়া গোখাদ্য খায়, তার ওপর।
এর একটি ব্যাখ্যা দিয়ে পলাশ বলেন, ‘উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিরাজগঞ্জের বাথানগুলোর (চরাঞ্চল) কথা। সেখানে গরু যেভাবে ঘাস পায় কিংবা অবাধ পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তাতে দুধের গুণগত মান ভালো হয়। এ থেকে উৎপাদিত ঘিও উন্নত হয়।’
‘এসব বিষয় তো সব ক্রেতা জানবেন না। তাহলে তারা আসলে ঘি চিনবেন কীভাবে?’
নিউজবাংলার উল্লিখিত প্রশ্নের জবাবে পলাশ বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জন্য খাঁটি ঘি চেনা বেশ কঠিন। এ ক্ষেত্রে পরিচিত, বিশ্বস্ত কারও শরণাপন্ন হতে হবে, যিনি এ ব্যবসায় যুক্ত কিংবা সৎ ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচিত।’
ঘিতে কোন কোন প্রক্রিয়ায় ভেজাল হয় তা তুলে ধরে পলাশ বলেন, ‘ঘির মধ্যে তেল, ডালডা বা কেমিক্যাল দিয়ে দুই নম্বরি করা হয়। ধরেন, এক মণ ঘির মধ্যে ৫ লিটার তেল দিলে ল্যাবরেটরিতে নিলেও ঘি আর তেল আলাদা করতে পারবেন না।
‘ঘি তৈরি হয় সর বা ক্রিম থেকে। অনেকে ভুয়া ক্রিম বানায়। সেখান থেকে তৈরি ঘি খাঁটি হবে না।’
‘তাহলে বাঁচার উপায়?’
উত্তরে পলাশ আগের দুই বক্তার বক্তব্যগুলোকে খারিজ না করে কিছু বিষয় যোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যেটা মনে করি, দুই ধরনের ঘি হয়। একটা হালকা জালের ঘি, অন্যটা কড়া জালের ঘি।’
তিনি বলেন, ‘হালকা জালের ঘি দেখতে বেশ চকচকে, কিন্তু এটা বেশি দিন ভালো থাকে না। কড়া জালের ঘি একটু কালচে, ডিপ কালারের। এই ঘিটা বেশি দিন টিকে থাকে। এক বছরেও কিছু হবে না।’
ক্রেতাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন জানতে চাইলে এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘বাজার থেকে নামি ব্র্যান্ডের ঘি কেনার আগে পরিচিত কারও অভিজ্ঞতা শুনে নিন। তাদের অভিজ্ঞতা ভালো না হলে কেনার দরকার নেই। কারণ প্যাকেটজাত পণ্য আপনি ঘ্রাণ নিয়ে কিংবা হাতে নিয়ে দেখার সুযোগ পাবেন না।
‘যারা অনলাইনে বিক্রি করে তারা যদি সৎ হয়, তাহলে অরিজিনাল পণ্য পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে খোঁজখবর নিয়ে পণ্যটি কিনতে হবে। এখন যেহেতু অনেকেই এ ধরনের ব্যবসায় যুক্ত, তাই নির্ভেজাল পণ্য বিক্রেতা পাওয়া অসম্ভব হবে না।’