সম্প্রতি রাশিয়ান রোবোটিক কোম্পানি প্রোমোবট মানুষের চেহারা ও কণ্ঠ কিনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে একজন মানুষের চেহারা আর কণ্ঠের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ মার্কিন ডলার।
অডিটি সেন্ট্রালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়- মানুষের মতো দেখতে, অতি-বাস্তববাদী রোবট বানানোর জন্য প্রোমোবট একটি নতুন প্রজেক্ট চালু করেছে। যেখানে এমন সব রোবট তৈরি করা হবে, যেগুলো হোটেল, ‘শপিংমলসহ অন্যান্য জনবহুল জায়গায় অনেকটা মানুষের মতোই কাজ করবে।’
এর জন্য কোম্পানিটি ‘কাইন্ড অ্যান্ড ফ্রেন্ডলি’ রোবট বানাতে চাচ্ছে। অর্থাৎ অচিরেই মানুষের বৈশিষ্ট্য আছে এমন রোবটের সেবা নেয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করবে সবাই।
স্মার্ট রোবট বানানোর এ প্রজেক্টটি চালু হওয়ার পর পরই প্রতিষ্ঠানটি এমন ঘোষণা দেয়। ঘোষণায় বলা হয়, কেউ যদি তার চেহারা এবং গলার আওয়াজের স্বত্ব বিক্রি করতে রাজি হয়, তা হলে তাকে এর বিনিময়ে ২ লাখ ডলার দেয়া হবে। এই টাকা নেয়ার পর ওই ব্যক্তি ভবিষ্যতে নিজের চেহারা আর গলার আওয়াজ ব্যবহারের জন্য কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে না।
পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে প্রোমোবট একটি আবেদনপত্র তৈরি করেছে। যেখানে বলা আছে, ২৫ বছর বয়সের ওপর যে কোনো লিঙ্গের মানুষ নিজেদের গলার আওয়াজ আর চেহারা বিক্রির জন্য আবেদন করতে পারবে।
সম্প্রতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে কোম্পানিটির প্রতিনিধিরা বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি বিভিন্ন রোবটিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। এই প্রজেক্টে তৈরি রোবটগুলোর বিভিন্ন অসাধারণ ক্ষমতার মধ্যে অন্যতম হলো- নিজস্ব ক্ষমতায় চলাচল ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারার পাশাপাশি উচ্চ ফেশিয়াল রিকগনিশন এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স।’
সেখানে আরও জানানো হয়- ‘২০১৯ সাল থেকেই আমরা নিয়মিত মানুষের মতো ক্ষমতাসম্পন্ন রোবট বাজারজাত করে আসছি। আমাদের নতুন ক্লায়েন্টরা আরও বড় বড় প্রজেক্ট চাচ্ছে। তবে সে জন্য যাতে কোনো রকম আইনি বিড়ম্বনার মুখোমুখি না পড়তে হয়, সেদিকে তাদের বিশেষ নজর। ফলে ব্যবসায়ের স্বার্থে বর্তমানে আমাদের লিগ্যাল লাইসেন্স দরকার।’
মজার ব্যাপার হলো, প্রোমোবটকে ইতিমধ্যে একবার আইনি বিড়ম্বনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আর সেটি তৈরি করেছিলেন টার্মিনেটরখ্যাত বিখ্যাত হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড শোয়ার্জনেগার। অনুমতি ছাড়াই তার গলার আওয়াজ ব্যবহার করায় তিনি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ১০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের ক্ষতিপূরণ মামলা করেন। তাই তারা মনে করছে, এ রকম ঝামেলায় পড়ার চাইতে এর থেকে অল্প টাকা খরচ করে স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবসা করাই ভালো।
কোনো চেহারা প্রোমোবট এবং এর ক্লায়েন্টদের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার পর তারা ওই ব্যক্তির চেহারার একটি থ্রিডি মডেল তৈরি করে নেয়, যা পরবর্তী সময়ে রোবটের এক্সটার্নাল ফিচারগুলোয় ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে গলার আওয়াজের জন্য প্রতিটি ব্যক্তিকে কমপক্ষে ১০০ ঘণ্টা ব্যয় করতে হয় আওয়াজের বিভিন্ন পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য; যা দিয়ে পরে রোবটের গলায় আওয়াজ দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, অনেকের মতেই আজীবনের জন্য নিজের চেহারা আর গলার আওয়াজের স্বত্ব বিক্রি করে দেয়া একটি ভীতিকর ব্যাপার। তবে এমন অনেকেই আছে, যারা ২ লাখ ডলারের লোভনীয় প্রস্তাবে গলার আওয়াজ ও চেহারার মতো নিজের দুটি স্বতন্ত্র পরিচয় বিক্রি করতে দুবার ভাবেনি। কেননা দেখা গেছে, ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত এত পরিমাণ আবেদন পড়েছে যে, গত সোমবার থেকে প্রোমোবটকে নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
নিজেদের ওয়েবসাইটে কোম্পানিটি জানায়- ‘যারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের গলার আওয়াজ আর চেহারার স্বত্ব বিক্রি করতে চায়, তাদের কাছ থেকে আজ আমরা প্রায় ২০ হাজার আবেদন পেয়েছি। আমাদের অফিশিয়ালরা আপাতত আর আবেদন চাচ্ছেন না। ফলে এ সুযোগটি আপাতত আমাদের বন্ধ করে দিতে হয়েছে।’