বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভাঙা প্রেমে কেন ভেঙে যায় বুক?

  •    
  • ৩০ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:৪৮

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভেঙে যাওয়া প্রেমকে ভুলে যাওয়া কারও কারও জন্য সত্যিই খুব কঠিন। বিরহ এমন এক আসক্তি জন্ম দিতে পারে, যার মাত্রা কোকেইনে আসক্তির মতোই।  

প্রেমিক বা প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার দুদিনের মাথায় নতুন প্রেমে জড়ানোর উদাহরণ আজকাল অফুরন্ত।

বিচ্ছেদের পর অনেকে খুব সহজে সব ভুলে যেতে পারেন। কেউ কেউ আবার নিয়মিত বিরতিতে সঙ্গী বদলকে গৌরবজনকও মনে করেন।

তবে সবাই তো আর এমন ‘পেশাদার’ প্রেমিক বা প্রেমিকা নন, কেউ কেউ এখনও আছেন ভীষণ আটপৌঢ়ে। তাদের কাছে প্রেম ভেঙে যাওয়া মানে সব কিছু ‘শেষ হয়ে’ যাওয়া।

শুধু পুরোনো দিনের ঢাকাই সিনেমার বিবাগি প্রেমিক নয়, বাস্তব জীবনেও ব্যর্থ প্রেমের হাহাকারের নজির অসংখ্য।

ভালোবাসা হারানোকে সহজে মেনে নিতে পারেন না অনেকেই। বুকে একরাশ ব্যথা নিয়ে বিষাদে কাতর কেউ কেউ বুক পকেটে আগলে রাখেন প্রাক্তনের ছবি। কেউ কেউ নানান উপলক্ষ্য ধরে যোগাযোগের ব্যর্থ চেষ্টা করেন। আবার কারও কাছে একেবারেই তুচ্ছ মনে হয় জীবন।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভেঙে যাওয়া প্রেমকে ভুলে যাওয়া কারও কারও জন্য সত্যিই খুব কঠিন। বিরহ এমন এক আসক্তি জন্ম দিতে পারে, যার মাত্রা কোকেইনে আসক্তির মতোই।

বিচ্ছেদের পরেও প্রাক্তন প্রেমিক/প্রেমিকার প্রতি কেনো মানুষের তীব্র আকর্ষণ- সেটি জানতে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের রুটগার্স ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অফ অ্যানথ্রপলজির অধ্যাপক হেলেন ই. ফিশার ও তার কয়েক সহকর্মী।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারী সবারই ছিল ব্রেক আপের অভিজ্ঞতা। তাদের একটি লিফলেট দেয়া হয়, যেখানে প্রশ্ন ছিল, ‘প্রেমে বিচ্ছেদের পর কি প্রাক্তনকে ভুলতে পারছেন?’

অংশগ্রহণকারীদের প্রায় সবাই জানান, তারা প্রাক্তনের কাছে ফিরে যেতে চান এবং ব্রেক আপের চাপ সামাল দিতে পারছেন না। এদের অনেকেই মানসিক বিষাদের মাত্রা সামলাতে না পেরে মদ্যপান বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, মন খারাপ এবং ডুকরে কান্না ছিল নিয়মিত ঘটনা। অনেকে প্রাক্তনের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন ছলচাতুরির আশ্রয় নিচ্ছিলেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রেমে প্রত্যাখ্যানের ঘটনা কোনো কিছু হারিয়ে ফেলার মতো গভীর আবেগ জন্ম দিতে পারে মনের মাঝে। অনেক ক্ষেত্রে এটি তীব্র মানসিক হতাশার জন্ম দেয়, যেটি হত্যা বা আত্মহত্যার মতো ঘটনাতেও গড়াতে পারে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের তাদের প্রাক্তন প্রেমিক বা প্রেমিকার ছবি দেখানো হয়। পাশাপাশি দেখানো হয়েছে, তাদের পরিচিত কোনো মানুষের ছবি।

দেখা গেছে, দুই ধরনের ছবি দেখার ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারীদের মনোসংযোগের মাত্রা ছিল আলাদা।

অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা প্রেমকে একটি ‘লক্ষ্য অর্জনভিত্তিক আবেগ’ হিসেবে দেখছেন। তাদের বাকি সব আবেগের ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক এতটা নিবিষ্টভাবে কাজ করে না।

ফিশার ও তার সহকর্মীরা দেখেছেন, সাবেক প্রেমিক/প্রেমিকার দিকে তাকিয়ে থাকা এবং কোকেইন সেবনের তীব্র ইচ্ছার মধ্যে একটি স্নায়বিক সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে একটি হাইপোথিসিস হলো, প্রেমে প্রত্যাখ্যানও এক ধরনের প্রবল আসক্তির জন্ম দিয়ে থাকে।

তীব্র আসক্তি কি ‘অসুস্থতা’?

প্রেমের ক্ষত কী করে দূর করা হয়, সে বিষয়ে গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ডাকোটা স্কুল অফ মেডিসিনের ডিপার্টমেন্ট অফ সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড বিহেভিয়রাল সায়েন্সের অধ্যাপক এম. সানচেস। তার সঙ্গে ছিলেন ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস হেলথ সায়েন্স সেন্টারের ডিপার্টমেন্ট অফ সাইকিয়াট্রি অ্যান্ড বিহেভিয়রাল সায়েন্সের অধ্যাপক ভি.পি জন।

‘ট্রিটমেন্ট অফ লাভ অ্যাডিকশন: কারেন্ট স্ট্যাটাস অ্যান্ড পারসপেক্টিভ’ শিরোনামে ২০১৯ সালে প্রকাশিত তাদের গবেষণাপত্রে প্রাক্তনের প্রতি মাত্রাছাড়া আসক্তিকে এক ধরনের ‘মানসিক ব্যাধি’ বলা হয়েছে।

সানচেস ও জন ‘অসুস্থ ভালোবাসা’র ব্যাখ্যা দিয়ে বলছেন, এ ধরনের ক্ষেত্রে মানুষের আচরণের একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্ন থাকে, যেখানে সাবেক প্রেমিক বা প্রেমিকার প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট, মাত্রাছাড়া ও তীব্র আগ্রহ দেখা যায়। এর ফলে মানুষ নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান এবং অন্য আর সব কিছুতে তার আগ্রহ শূন্যে নেমে আসে। আচরণগত বিভিন্ন পরিবর্তনও আসে অতি বিরহীর জীবনে।

এই গবেষকেরা বলছেন, অনেকেই বিচ্ছেদ পরবর্তী জীবন ও মানসিক তীব্র দহনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন না।

বিচ্ছেদ ব্যথা সামলাবেন কী করে

ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করা যখন এত কঠিন তখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগতে পারে, হৃদয়ে ক্ষত সারানোর উপায় কী?

মন গবেষকদের মতে, বিচ্ছেদ যন্ত্রণাদায়ক হলেও এটি হৃদয়কে অন্যান্য সম্পর্ককে বিবেচনায় নেয়ার পথ খুলে দিতে পারে। ফলে বিচ্ছেদ শুধু হতাশাই তৈরি করে না, উন্মোচন করে সম্ভাবনার নতুন অধ্যায়।

তাই প্রাক্তনের পেছনে অযথা ঘুরঘুর না করে নিজেকে সামলাতে শিখুন। এছাড়া অন্য উপায়ের মধ্যে রয়েছে ব্যস্ত থাকা, বন্ধু- পরিবার-পরিজনের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো এবং সারাক্ষণ দুঃখের গান না শুনে মন চনমনে রাখা কাজে নিজেকে জড়িত করা।

সবচেয়ে ভালো ওষুধ হচ্ছে সময়। সময়ের সঙ্গে মানুষের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়, ধারণা বদলায় এবং আবেগের মাত্রা হালকা হতে থাকে। সেই সময়কে আসতে দিন, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবুন এবং নতুন কোনো সম্পর্কের জন্য তৈরি করে নিন।

এ বিভাগের আরো খবর