ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় করতে চুমুর বিকল্প নেই। শিল্প, চলচ্চিত্র বা সাহিত্যে তাই বারবারই এসেছে চুমুর জয়গান।
বিভিন্ন গবেষণাতেও এসেছে, সুখী জুটির পেছনে চুমুর সঙ্গোপন ভূমিকা। বলা হয়ে থাকে, দাম্পত্য সম্পর্ক ফিকে হয়ে যাওয়া ঠেকাতে চাইলে নিয়মিত চুমু খাওয়া ভুলে গেলে চলবে না।
এটা তো গেল সম্পর্কের আকর্ষণ ধরে রাখতে চুমুর টোটকা; বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বাস্থ্যকর জীবনের জন্যও দীর্ঘ ও নিয়মিত চুমু খাওয়া প্রয়োজন। এটি সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা বজায় রাখার পাশাপাশি আপনাকে সুস্থ রাখতেও সাহায্য করে।
বিষয়টি ঘেঁটে দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোন স্টেট ইউনিভার্সিটির কমিউনিকেশনসের অধ্যাপক কোরি ফ্লয়েড ও তার সহকর্মীরা একটি গবেষণা চালিয়েছেন। ৫২ জোড়া বিবাহিত ও অবিবাহিত জুটিকে বেছে নিয়ে তারা যাচাই করেছেন চুমু খাওয়ার দৃশ্যমান বা পরিমাপযোগ্য কোনো সুবিধা আছে কিনা।
ফ্লয়েডের দল আগে থেকেই জানতেন, ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ক্ষেত্রে চুমুর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। ফলে তারা সম্পর্ক জোরদারে চুমুর প্রয়োজনীতা নিয়ে মাথা ঘামাননি; গবেষণায় দেখা হয়েছে, সুস্বাস্থ্যের উন্নতিতে চুমুর অবদান কী।
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, চুমুর সময়ে লালা বা থুতু বিনিময়ে মনোনিউক্লিওসিস (কিসিং ডিজিজ) ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে। তবে ফ্লয়েড ও তার সহকর্মীরা চুম্বনের এই ঝুঁকির বাইরে উপকারিতাই বেশি খুঁজে পেয়েছেন।
তারা দেখেছেন, নিয়মিত চুমু খাওয়ার অভ্যাস অ্যালার্জির বিরুদ্ধে দেহের ইমিউন সিস্টেমকে তাতিয়ে তোলে। তার চেয়েও বড় কথা, মানসিক চাপ এক নিমিষে কমিয়ে দেয় গভীর ও দীর্ঘ চুমু।
স্নায়ুতন্ত্রের প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেমকেও চাঙা করে তোলে চুম্বন। সহজ কথায় প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম হলো স্নায়ুতন্ত্রের এমন কার্যকলাপ, যা আরামদায়ী বা নিশ্চিন্ত থাকার সময়ে দেহের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ফলে প্যারাসিম্প্যাথেটিক সিস্টেম সক্রিয় থাকা মানেই হলো বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর বাড়তি চাপ কমে যাওয়া।
গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকে বিদ্যমান সিবাম নামের বিশেষ একটি পদার্থ চুমু খাওয়ার সময় সঙ্গীর দেহে পরিবাহিত হতে পারে। আর এই সিবাম মস্তিষ্ককে বন্ধন ও ভালোবাসার সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষ রাসায়নিক সিগন্যাল দেয়।
চুমুর আরেকটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বেরিয়ে এসেছে গবেষণায়। দেখা গেছে, ভালো মানের চুমু মানুষের দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়। কোনো যুগল ডিনারে প্রচুর পরিমাণে হাই-কোলেস্টেরল খাবার খেলেও উদ্বেগের খুব একটি কারণ নেই। ডিনার শেষে একান্তে দীর্ঘক্ষণ পরস্পরকে চুম্বনে আবদ্ধ রাখলে সেই হাই-কোলেস্টেরল হৃদযন্ত্রের বারোটা নাও বাজাতে পারে।
গবেষণার সময় চুমু খাওয়ার অনুমতি পাওয়া যুগলেরা জানিয়েছেন তারা কম চাপ অনুভব করছেন ও নিজেদের শরীরও বেশ ঝরঝরে লাগছে। এমনকি পরিমাপ করে দেখা গেছে তাদের দেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রাও কমেছে।চুমু খেতে পারা গ্রুপের যুগলেরা গবেষণা চলার সময়ে বেশি ব্যায়াম করেছেন, কম ঝগড়া করেছেন, তর্ক করে সময় অপচয়ের আগ্রহও ছিল কম। একে অপরকে আরও ভালো বুঝতে পেরেছেন এই যুগলেরা।
আর বলাই বাহুল্য, চুমুবঞ্চিত যুগলদের ক্ষেত্রে ফলাফল ছিল একদম উল্টো।