বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বইয়ের অক্ষর নাকি ডিজিটাল টেক্সট, কোনটি ভালো

  •    
  • ১৮ নভেম্বর, ২০২১ ২০:২৩

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ব্যারনের মতে, “ডিজিটালি পড়ার সময়েও মনোযোগ দেয়া সম্ভব, কিন্তু সে জন্য আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। নিজেকে বলতে হবে, ‘আমি শুধু পড়ার জন্য আধা ঘণ্টা সময় ব্যয় করব। কোনো মেসেজ বা ইনস্টাগ্রাম আপডেট চেক করব না।’ পড়ার সময় ফোন বা ট্যাবের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা যেতে পারে। পড়া শেষে সেটি আবার চালু করলেন।”

যেকোনো তথ্য তাৎক্ষণিক পেতে এখন প্রায় সবার ভরসা অনলাইন। ফেসবুক, টুইটার আসার পর জীবন আরও বেশি অনলাইনকেন্দ্রিক।

দিনে আমরা যতটুকু পড়ি, তার সবটাই প্রায় কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে। ফলে ছাপানো বইয়ের কদর এখন অস্তগামী, ছাপা পত্রপত্রিকাও করছে হাঁসফাঁস।

অনলাইনে পড়ার এই যে প্রবণতা তা কি বইয়ের মতো ছাপ ফেলছে আমাদের মগজে? ডিজিটাল মাধ্যম শেখার জন্য সত্যিই কি কাগজে ছাপা অক্ষরের চেয়ে ভালো?

গবেষণা কিন্তু এমনটা বলছে না। দেখা গেছে, কেউ যখন অনলাইনে বা স্ক্রিন থেকে কিছু পড়েন, তারা কী পড়েছেন সেটা ভালোভাবে বুঝতে পারেন না। এর থেকেও বাজে বিষয়টি হলো, ডিজিটাল মাধ্যমের পাঠকরা বুঝতেই পারেন না যে, তারা পঠিত বিষয়টি ঠিকঠাক বুঝতে পারেননি!

বই থেকে পড়া ও স্ক্রিনে পড়ার (ডিজিটাল রিডিং) তুলনা করে ৫৪টি গবেষণা করেছে স্পেন ও ইসরায়েলের গবেষক দল। ২০১৮ সালে তারা ১ লাখ ৭১ হাজারের বেশি পাঠকের ওপর গবেষণা চালায়।

এতে দেখা গেছে, মানুষ ডিজিটাল টেক্সটের চেয়ে যখন ছাপানো বই পড়েছে, তখন সামগ্রিকভাবে তাদের বোঝার ক্ষমতা বেশি ছিল। গবেষণা ফলাফলটি প্রকাশিত হয়েছে এডুকেশনাল রিসার্চ রিভিউয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ ম্যারিল্যান্ডের মনোবিদ প্যাট্রিসিয়া আলেক্সান্ডার মানুষের শিখন পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন। আলেক্সান্ডারের মতে, শিক্ষার্থীরা অনেক সময় ভাবেন, স্ক্রিন থেকে পড়লে সহজে শিখতে পারবেন। কিন্তু পরীক্ষায় দেখা গেছে, তারা বইয়ের তুলনায় স্ক্রিন থেকে কম শিখছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, বই পড়ায় মনোযোগ থাকে বেশি

কারণ কী?

স্ক্রিন বা বই থেকে পড়ার প্রভাব সাধারণভাবে এক মনে হলেও আসলে বিষয়টি মোটেই তেমন নয়। ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার নিউরোসায়েন্টিস্ট ম্যারিয়ান উলফ কাজ করেন মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড নিয়ে। তিনি বলেন, ‘পড়ার বিষয়টি মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য নয়। আমরা মূলত আশপাশের মানুষের কথা শুনে কথা বলা শিখি। বিষয়টি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘটে। কিন্তু পড়তে শেখার জন্য অনেক চেষ্টা করতে হয়।’

উলফ তার গবেষণায় দেখেছেন, মানবমস্তিষ্কে পড়ার জন্য আলাদা কোনো কোষ নেই। এ জন্য পড়ার জন্য মস্তিষ্ক অন্য কাজে ব্যবহৃত স্নায়ু নেটওয়ার্ক থেকে কোষ ধার করে। যেমন, মস্তিষ্কের যে অংশটি অন্যের চেহারা চেনা ও মনে রাখার কাজ করে, সেটা ধার করা হয় পড়ার সময় অক্ষর চেনার কাজে।

এটি অনেকটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করার মতো বিষয়। যেমন হ্যাঙ্গার দিয়ে আলমারিতে কোট ঝোলানো হয়, আবার সেটি দিয়ে ফ্রিজের নিচে চলে যাওয়া টেনিস বল বের করাও সম্ভব। পড়ার সময়ই আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক এই কাজটিই করে।

গবেষণা বলছে, মস্তিষ্কের এই নমনীতার কারণে আমরা অনেক নতুন জিনিস করতে ও শিখতে পারি। তবে ভিন্ন ধরনের মাধ্যমে লেখাপড়ার ক্ষেত্রে এই নমনীয়তা সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে। স্ক্রিন থেকে পড়ার সময় আমাদের মগজ বই পড়ার চেয়ে ভিন্ন ধরনের কোষের সংযোগ তৈরি করে। ফলে স্ক্রিনে পড়ার কাজটি হলেও তথ্যগুলো মাথায় গেঁথে যায় ভাসা ভাসা ভাবে।

বিষয়টি অবশ্য শুধু ডিভাইসের ওপর নির্ভরশীল নয়। আপনি যা পড়বেন সে সম্পর্কে কী অনুমান করছেন, তার ওপরও পড়ার গভীরতার বিষয়টি নির্ভর করে। ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী নেওমি ব্যারন এ বিষয়টিকে বলছেন ‘মাইন্ডসেট’।

তিনি বলেন, ‘যে বিষয়টি পড়তে যাচ্ছি, সেটা কতটা সহজ বা কঠিন বলে আগেই আমরা ভেবে নিই তার ওপর নির্ভর করে মাইন্ডসেট। যদি মনে করি এটা সহজ হবে, তাহলে হয়তো খুব বেশি চেষ্টা করা লাগবে না।’

স্ক্রিনে আমরা যা পড়ি, তার অধিকাংশই টেক্সট মেসেজ ও সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট। এগুলো সহজেই বোঝা যায়।

আলেক্সান্ডার বলেন, ‘এ কারণে মানুষ যখন স্ক্রিনে কিছু পড়েন, তারা সেটা দ্রুত পড়েন। তাদের চোখ বই পড়ার চেয়ে দ্রুতগতিতে স্ক্রিনের পৃষ্ঠাগুলোকে স্ক্যান করে।’

তবে দ্রুত পড়ার সময় সবকিছুর ঠিকঠাক ধারণা আমরা না-ও পেতে পারি। তিনি বলেন, ‘স্ক্রিনে পড়ার সময় দ্রুতগতিতে স্কিমিং (ভাসা ভাসা ভাবে পড়া) একটা অভ্যাসে পরিণত হয়। টিকটকের কোনো পোস্ট দেখার সময় মগজের যে অংশটা স্কিমিংয়ে ব্যবহৃত হয়, সেটি তখন সক্রিয় করে দেয় আপনার মস্তিষ্ক। তবে এই একই প্রক্রিয়া কোনো ক্ল্যাসিক বইয়ের ভাব বুঝতে সহায়ক নয়।’

ডিজিটাল পৃষ্ঠা মানেই গোলকধাঁধা

স্ক্রিনে পড়ার সময় দ্রুতগতি ছাড়াও স্ক্রলিংয়ের সমস্যাও আছে। ছাপা কোনো পৃষ্ঠা পড়ার সময় বা পুরো একটি বই পড়ার সময় আপনি জানেন যে, আপনি কোথায় আছেন। শুধু একটা পৃষ্ঠার কোনো নির্দিষ্ট জায়গা নয়, পুরো বইয়ের অসংখ্য পৃষ্ঠার মধ্যে নির্দিষ্ট ঘটনাটিও মনে রাখতে পারেন।

যেমন আপনি মনে রাখতে পারেন গল্পে একটি কুকুর মারা যাওয়ার কথা লেখা আছে বাম পৃষ্ঠার ওপরের দিকে। কিন্তু যখন ডিজিটাল স্ক্রিনে আপনার সামনে থাকে বিরাট একটি পৃষ্ঠা, এটি স্ক্রল করার সময় কোথায় কী আছে মনে রাখা কঠিন।

গবেষণায় দেখা গেছে, আমরা যখন কিছু শিখি তখন মনে মনে সেটির একটি মানচিত্র তৈরি করে ফেলি। কোনো বইয়ের পৃষ্ঠার এ ধরনের মানচিত্রের কোন অংশে কী তথ্য আছে, সেটি মনে রাখতে আমাদের সুবিধা হয়।

পাশাপাশি একটি স্থির পৃষ্ঠা পড়তে যতটুকু মানসিক পরিশ্রম হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি পরিশ্রম যায় একটি পৃষ্ঠাকে স্ক্রল করতে। আমাদের চোখ তখন নির্দিষ্ট কিছুর ওপর ফোকাস করে না। স্ক্রল করার সময় শব্দগুলোর ওপর নজর রাখতে চোখকে ওপর-নিচ করতে হয়।

ডিজিটাল স্ক্রিনে পড়ায় বেশি পরিশ্রান্ত হয় মস্তিষ্ক

ইউনিভার্সিটি অফ সাদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার নিউরোসায়েন্টিস্ট ম্যারি হেলেন ইমোরদিনো-ওয়াং কাজ করেন কীভাবে আমরা পড়ি সেটা নিয়ে।তিনি বলেন, ‘কোনো পৃষ্ঠা যখন স্ক্রল করছেন, তখন আপনার মস্তিষ্ককেও এর সঙ্গে ছুটতে হয়। তখন কী পড়ছেন, সেটা বুঝতে আপনার মস্তিষ্ক খুব বেশি রিসোর্স পায় না। বিশেষ করে আপনি যা পড়ছেন, সেটা যদি দীর্ঘ ও জটিল হয়।

‘স্ক্রল ডাউন করার সময় আপনার দৃষ্টিসীমায় শব্দগুলোকে রাখার জন্য মস্তিষ্ককে চেষ্টা করে যেতে হয়। যে কারণে আপনার পক্ষে একই সঙ্গে শব্দগুলো যে ধারণা দিচ্ছে তা বোঝা কঠিন হয়ে যেতে পারে।’

আলেক্সান্ডার দেখেছেন যে যা পড়ছেন তার দৈর্ঘ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনুচ্ছেদ ছোট থাকলে মানুষ বই বা স্ক্রিনে পড়ার পর সমান মাত্রায় বুঝতে বা শিখতে পারে। তবে অনুচ্ছেদগুলো ৫০০ শব্দের বেশি হয়ে গেলে স্ক্রিনের চেয়ে ছাপা বই থেকে বেশি শিখতে পারে।

যা পড়ছেন সেটার ধরনও (genre) গুরুত্বপূর্ণ। ধরন বলতে কী জাতীয় বই বা আর্টিকল পড়ছেন সেটা। গবেষণায় অংশ নেয়া অধিকাংশ মানুষ বলেছেন, তারা যখন ছাপার অক্ষরে নন-ফিকশন পড়েন, সেটা বুঝতে সুবিধা হয়। ফিকশনের তারা কতটুকু অনুধাবন করতে পারেন, সেটি অবশ্য গবেষণায় পরিষ্কার নয়।

ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জেনি কন কাজ করেন শিক্ষায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে। ডিজিটাল রিডিং নিয়ে তার লেখা বই ‘স্কিম, ডাইভ, সারফেইস’ প্রকাশিত হয় গত জুনে।

তার মতে, স্ক্রিনের শব্দগুলো মূল সমস্যা নয়, বরং অন্যান্য যা কিছু পড়ার ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটায় সেটি সমস্যাজনক। কয়েক মিনিট পরপর কোনো কিছুর বাধা এলে পড়ায় মনোযোগ দেয়া কঠিন। ই-মেইল, মেসেজ, পপ-আপ অ্যাড বা টিকটকের আপডেটগুলোকে বাধা হিসেবে দেখছেন জেনি।

কোনো লেখার সঙ্গে যুক্ত থাকা লিংক বা বক্সও শেখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এদের উদ্দেশ্য পড়ায় সহায়তা করা হলেও কিছু ক্ষেত্রে এগুলো মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নেয়।

পুরোটাই খারাপ নয়

ল্যাপটপ বা ট্যাব বন্ধ করে হাতে বই তুলে নিলেই যে স্কুলে ভালো করা যাবে, বিষয়টি এত সহজও নয়। স্ক্রিনে পড়ার পেছনে অনেক ভালো যুক্তিও আছে।

মহামারি আমাদের শিখিয়েছে, অনেক সময় আমাদের হাতে আর কোনো বিকল্প থাকে না। লাইব্রেরি, বইয়ের দোকান বন্ধ থাকলে বা সেখানে যাওয়া অনিরাপদ হলে ত্রাতা হয়ে উঠতে পারে ডিজিটাল বই।

খরচেরও একটি বিষয় আছে। ছাপা বইয়ের চেয়ে ডিজিটাল বইয়ের দাম সাধারণত কম। আর ডিজিটাল বইয়ের পরিবেশবান্ধব দিকটিতেও তাকানো দরকার। ডিজিটাল বইয়ের জন্য গাছ কাটতে হয় না।

ডিজিটাল বই পড়ার অন্যান্য সুবিধাও আছে। অন-স্ক্রিনে লেখার আকার, ব্যাকগ্রাউন্ডের রং ও টাইপফেইস বদলে নেয়া যায়। যারা চোখে ভালো দেখেন না, তাদের জন্য এটি বিরাট এক সুবিধা। যাদের প্রতিবন্ধকতা আছে তাদের ক্ষেত্রেও সহায়ক ডিজিটাল বই।

যাদের ডিসলেক্সিয়া আছে তাদের জন্য ‘ওপেন ডিসলেক্সিক’ নামের একটি টাইপফেইসে লেখা বই পড়া সুবিধাজনক। কম্পিউটার, ট্যাবলেট বা কিন্ডলের মতো ডিজিটাল রিডিং ডিভাইসে এ সুবিধা পাওয়া যায়। অনেক ই-রিডার অ্যাপ ট্যাবলেটেও ব্যবহার করা যায়।

অনলাইনে এডিটররা হাইপারলিংক বসাতে পারেন। এটি একজন পাঠককে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় বুঝতে, এমনকি নতুন ও বিভ্রান্তিকর শব্দের সংজ্ঞা শিখতে বা মূল বিষয়ের আরও গভীরে যেতে সাহায্য করে।

কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিউ ক্যানান শহরের স্কুলের লাইব্রেরিয়ান মিশেল লুটালা ডিজিটাল কন্টেন্টের সর্বোচ্চ ব্যবহারে সাহায্য করেন। লুটালা ডিজিটাল রিডিং নিয়ে চিন্তিত নন। তার মতে, স্ক্রিনে পড়ার অনেক উপায় আছে।

তিনি বলেন, ‘স্কুলে পড়ানো হয় এমন অনেক ই-টেক্সটবুকে এমন সব টুল থাকে, যা পড়াশোনাকে অনেক সহজ করে তোলে। অনেক ই-বুকে অনুচ্ছেদ হাইলাইট করার ব্যবস্থা আছে, যা কম্পিউটার জোরে পড়ে শোনাবে। কয়েকটি টুল আছে যা আপনি যে অনুচ্ছেদটি পড়ছেন সেটির নোট রেখে দেয় এবং ই-বুকটি ফিরিয়ে দেয়ার পরও নোটটি আপনার জন্য রেখে দেয়। অধিকাংশ বইয়ে পপআপ সংযুক্ত থাকে। কোনোটিতে মানচিত্র, গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও কুইজ যোগ করা থাকে।

লুটালার মতে, এসব টুল ডিজিটাল রিডিংকে অনেক কাজের করে তুলেছে।

ডিজিটাল রিডিংকে আরও কার্যকর করা সম্ভব

বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত, ডিজিটাল রিডিং থেকে পিছিয়ে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই এ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা নেয়ার উপায় খোঁজা উচিত।

এর একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে- যে অংশটুকু সাবধানে পড়তে হবে সেটি প্রিন্ট করিয়ে নেয়া।

আমেরিকান ইউনিভার্সিটির ব্যারনের মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ধীরেসুস্থে পড়া। এটি মানসিকতা বা মাইন্ডসেটের বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু পড়ার ক্ষেত্রে ধীরে ও মনোযোগ দিয়ে পড়া উচিত।

তিনি বলেন, “ডিজিটালি পড়ার সময়েও মনোযোগ দেয়া সম্ভব, কিন্তু সে জন্য আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে। নিজেকে বলতে হবে, ‘আমি শুধু পড়ার জন্য আধা ঘণ্টা সময় ব্যয় করব। কোনো মেসেজ বা ইনস্টাগ্রাম আপডেট চেক করব না।’ পড়ার সময় ফোন বা ট্যাবের নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা যেতে পারে। পড়া শেষে সেটা আবার চালু করলেন।”

ব্যারনের মতে, বই পড়াটি খেলাধুলা বা বাদ্যযন্ত্র বাজানোর মতো। তিনি বলেন, ‘একজন পিয়ানিস্ট বা অ্যাথলিট দৌড়ানোর আগে বা কনসার্টের আগে নিজেদের প্রস্তুত করে নেন। পড়ার ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। কোনো কিছু পড়ায় মনোযোগ দিতে চাইলে আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হবে। কী পড়তে যাচ্ছেন এবং সেটা থেকে কী পেতে চান সে কথা ভাবুন।’

ব্যারনের পরামর্শ, কী পড়ছেন সেটা কাজে লাগানোর জন্য পৃষ্ঠার শব্দগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করুন। এর অন্যতম কৌশল হচ্ছে নোট নেয়া। আপনি যা পড়েছেন তার সারসংক্ষেপ লিখতে পারেন। মূল শব্দগুলোর তালিকা তৈরি করতে পারেন। যা পড়ছেন তার সঙ্গে যুক্ত থাকার সবচেয়ে দরকারী উপায়ের একটি হল প্রশ্ন করা। লেখকের সঙ্গে তর্ক করুন। যদি কিছু অর্থপূর্ণ না হয়, আপনার প্রশ্ন লিখুন। যদি একমত না হন, তবে কেনো সেটা লিখুন। আপনার দৃষ্টিভঙ্গির জন্য যুক্তি তৈরি করুন।

ছাপানো বই পড়লেও কাগজে নোট নিতে পারেন। বইটি আপনার নিজের হলে সরাসরি পৃষ্ঠায় লিখতে পারেন। যখন আপনার ফোন বা ট্যাবলেটে পড়ছেন, তখনও এমনটি করতে পারেন। পড়ার সময় কাছে কাগজের প্যাড রাখুন।

লুটালা বলেন, ‘অনেক অ্যাপ আপনাকে একটি ডিজিটাল ডকুমেন্টে সরাসরি ভার্চুয়াল নোট তৈরির অনুমতি দেয়। কিছু আপনাকে ভার্চুয়াল স্টিকি নোট যোগ করার অনুমতি দেয়। কোনো কোনো অ্যাপে আপনি মার্জিনে লিখতে পারেন ও ভার্চুয়ালি পৃষ্ঠার কোনা ভাঁজ করে রাখতে পারেন।’

স্ক্রিনে পড়ে কী পাচ্ছেন, সেটা নির্ভর করে আপনি কতটুকু মনে রাখার চেষ্টা করছেন তার ওপর।

আলেকজান্ডারের মতে, ছাপার বই বা ডিজিটাল স্ক্রিনের দুটি আলাদা জায়গা আছে। মনে রাখতে হবে, ভালোভাবে শিখতে তাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের ধরনটি ভিন্ন হতে পারে।

এ বিভাগের আরো খবর