সম্পর্ক নানা রকমের হয়। এর মধ্যে কিছুটা জটিল হলো লং ডিস্ট্যান্স সম্পর্ক। এ ধরনের সম্পর্কগুলোতে প্রেমিক-প্রেমিকা কাছাকাছি থাকার পরিবর্তে দূরে থাকে। মূলত এ কারণেই জটিলতা বাড়ে। অনেকের মতে আবার এমন সম্পর্কগুলো শেষমেশ টেকে না। কারণ স্বাভাবিকভাবে একটা সম্পর্ক যেভাবে চলা দরকার, দূরত্বের কারণে এ সম্পর্কগুলো ঠিক সেভাবে চলতে পারে না।
লাইফ হ্যাক ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে এমন সম্পর্ক সুন্দরভাবে চালানোর কিছু উপায় দেয়া হয়েছে। যেগুলো অনুসরণ করলে সব ধরনের জটিলতা এড়িয়ে প্রতিটা সম্পর্কই ঠিক রাখা যায়। চলুন জেনে নেয়া যাক:
সন্দেহপ্রবণতা ত্যাগ করুন
লং ডিস্ট্যান্স সম্পর্কগুলোর সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো সন্দেহ। দুজন মানুষ কাছাকাছি না থাকার ফলে ঠিকমতো যোগাযোগ হয় না। ফলে স্বভাবতই সন্দেহ বাড়ে। নানা কিছু নিয়ে মনের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়। যেমন সে কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কীভাবে চলাফেরা করছে ইত্যাদি। এসব সন্দেহ সম্পর্ককে মসৃণ তো করেই না, বরং সবকিছু বন্ধুর করে তোলে। তাই ভেতরে সন্দেহপ্রবণতা থাকলে তা চিরতরে বিদায় করুন।
দূরত্বকে দুর্বলতা ভাববেন না
কোনো এক মনীষী বলেছিলেন, ‘একসঙ্গে বাঁচতে চাইলে আগে আলাদা বাঁচতে শিখুন।’ কথাটি ভুল নয়। দূরত্ব নিয়ে কখনও হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। মনে করুন এটি আপনাদের দুই পক্ষের জন্যই জীবনের একটি শিক্ষা। দূরত্ব এবং সচরাচর দেখা না হওয়াটিকে কার্যকর করে তুলুন। এতে যেন প্রিয়জনের প্রতি আবেগ বৃদ্ধি পায়। লং ডিস্ট্যান্স রিলেশন আপনাদের আলাদা নয় বরং আরও কাছাকাছি নিয়ে আসছে, এভাবে ভাবুন।
নিজেদের চাহিদা সম্পর্কে নিশ্চিত থাকুন
পার্টনারের কাছে কখনও অন্যায় আবদার করবেন না। নিজেরা একে অপরের কাছে কী চান, সে বিষয়গুলো আগে থেকেই খোলাসা করে রাখুন। কেননা পরে দেখা যাবে, এমন কিছু আশা করছেন যা আপনার পার্টনার পূরণ করতে পারছে না। এতে সম্পর্ক খারাপ হবে এবং একে অপরের প্রতি বিতৃষ্ণার জন্ম নেবে। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকার চেষ্টা করুন।
যোগাযোগ ঠিক রাখুন
লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপের মানেই হলো নিয়মিত দেখা হবে না, ঘুরতে যাওয়া হবে না, একসঙ্গে সময় কাটানো হবে না। এমনও হতে পারে আপনারা নিজেদের জীবন এবং ক্যারিয়ার নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাকবেন। কিন্তু এসব অজুহাতে কখনও ভার্চুয়াল যোগাযোগ যেন কমে না যায়। যখনই সময় পাবেন একে অপরের খোঁজ নিন। কথা বলুন। মেসেজ আদান-প্রদান করুন। এতে সম্পর্ক সুস্থ থাকে।
পার্টনারের আরও ঘনিষ্ঠ হোন
একটি সুস্থ সম্পর্কের মূলমন্ত্র হলো ঘনিষ্ঠ থাকা। যে সম্পর্কে দুজন মানুষ বেশি ঘনিষ্ঠ, সে সম্পর্ক তত বেশি সুস্থ। ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে একে অপরের সঙ্গে কথা বলুন। দুজন দুজনের প্রতি কী অনুভব করছেন, তা নিয়ে আলাপ করুন। যদি সম্ভব হয়, নিজেদের গোপনীয়তা শেয়ার করুন।
বিপজ্জনক পরিস্থিতি এড়িয়ে চলুন
কিছু ব্যাপার থাকে যা করার ফলে সঙ্গী মনঃক্ষুণ্ণ হতে পারে। সে ব্যাপারগুলো কী তা জানার চেষ্টা করুন। আপনার সঙ্গী কষ্ট পাবে বা বিরক্ত হবে এমন কিছু করবেন না। কথায় আছে, শুধু হৃদয় নয়, মনের কথাও শুনতে হবে।
একসঙ্গে পছন্দের কাজ করুন
নিজেদের পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে খোঁজ নিন। জিজ্ঞেস করুন কার কী ভালো লাগে। তারপর সুযোগ পেলেই একসঙ্গে সেগুলো করার চেষ্টা করুন। উভয়ই পছন্দ করেন এমন অনলাইন গেম খেলা, সিনেমা দেখা, বই পড়ার মতো কাজগুলো করতে পারেন। একে অপরের জন্য উপহার কিনুন। উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকে।
দেখা করা
লং ডিস্ট্যান্স রিলেশনশিপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দেখা করা। সুযোগ পেলেই প্রিয় মানুষটির কাছে চলে যান। তাকে সারপ্রাইজ দিন। একসঙ্গে মুখোমুখি সময় কাটানোর কোনো সুযোগ মিস করবেন না।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
দূরে থাকার সময় শেষ হয়ে গেলে দুজন কীভাবে একসঙ্গে থাকবেন, কোথায় থাকবেন, কী কী করবেন, সেসব পরিকল্পনা একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করুন। এতে নির্ভরতা বাড়ে। সঙ্গীটির মনে বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়। তাকে বুঝতে দিন, সম্পর্ক নিয়ে আপনি সিরিয়াস এবং সারা জীবন তার সঙ্গে থাকতে চান।
সৎ থাকুন
যেকোনো সম্পর্ক বা কাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সততা। কোনোভাবেই এমন কিছু করবেন না যাতে আপনার সঙ্গীর মনে আঘাত লাগে বা তার বিশ্বাস ভেঙে যায়। সব সময় একে অপরের বিশ্বাস অটুট রাখতে চেষ্টা করুন। যেকোনো সমস্যা বুঝিয়ে বলুন।