ফেসবুক খুললেই প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের হতাশা-আক্ষেপে ভারাক্রান্ত হয় মন। তেমনি বাস্তবের দুনিয়াতেও পাশের মানুষটিকে নিয়ে আমাদের অভিযোগের অন্ত নেই। অবস্থা এমনই যে, অনেকে দাবি করেন, তার জীবনে সবই আছে, শুধু মানুষের ওপর বিশ্বাসটি নেই।
কেন এমন হলো, সেই প্রশ্নের উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। তবে একটি বিষয়ে প্রায় সবাই একমত, কাছের মানুষকেও উদারভাবে গ্রহণের ক্ষমতা দিনকে দিন মানুষের কমছে। তাই ঘর-গৃহস্থালি থেকে শুরু করে সমাজ-রাষ্ট্রে এখন সহনশীলতার বড়ই অভাব। উদারতা হারিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষ ভুগছে পারস্পরিক বিশ্বাসহীনতায়।
কবি সুনির্মল বসু লিখেছিলেন, ‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল/ উদার হতে ভাইরে…।’ তবে রুটিনমাফিক জীবন মেনে শুধু ছুটে চলা ব্যস্ত নগরীতে আকাশ দেখারও এখন ফুরসত নেই। ফলে আকাশের মতো সীমাহীন হৃদয়ও এখন মরীচিকা।
তবে একটু সময় করে চোখ রাখতে পারেন দূর আকাশে। যদিও বৃষ্টিভেজা আকাশের নীল রং ঢাকা পড়েছে মেঘের আড়ালে, কুয়াশার মতো বৃষ্টিতে ভিজছে নগর, তবু এ সৌন্দর্য আপনার মনে ছড়িয়ে দিতে পারে উদার হওয়ার মন্ত্র। আকাশ আপনাকে নতুন করে নিজের সীমা ছাড়িয়ে যেতে শেখাবে, কারণ এক দিন আগেই উদযাপন হয়েছে উদারতা দেখানোর দিন।
১৩ নভেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস ডে’ বা ‘বিশ্ব উদারতা দিবস’ উদযাপন হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। মানুষের মাঝে ‘দয়া’, ‘উদারতা’, ‘মহানুভবতা’র মতো মানবিক গুণের অভাব টের পেয়েছিল ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস মুভমেন্ট নামের একটি সংগঠন। এরপর তাদের উদ্যোগেই দিনটি প্রথমবারের মতো উদযাপিত হয় আমেরিকায়।
দিনটির মূল্য উদ্দেশ্য- মানবিক গুণ হিসেবে উদারতাকে সামনে নিয়ে আসা। মানুষের প্রতি মানুষের সদয় হওয়া। উদার মানসিকতা দিয়ে ঘৃণার বিষবাষ্পকে পরাজিত করা।
১৯৯৮ সালে প্রথম ‘ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস ডে’ বা ‘বিশ্ব উদারতা দিবস’ উদযাপন করা সংগঠনটির কলেবর এখন বড় হয়েছে। ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস মুভমেন্ট পরিণত হয়েছে অফিশিয়াল এনজিওতে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে ২০১৯ সালে সুইজারল্যান্ডের আইনি কাঠামো মেনে নিবন্ধন নিয়েছে তারা।
মানবসমাজে ‘উদারতা’ প্রতিষ্ঠিত করার প্রত্যয় নিয়ে পথ চলা সংগঠনটির কার্যক্রম আছে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে।
‘উদার ও আরও সহানুভূতিশীল বিশ্ব’ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে দিনটি এখন পালন হয় আমেরিকা, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, ভারত ও ইতালিতে।
কনসার্ট কিংবা ড্যান্স মব আয়োজন অথবা উদারতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে কার্ড পাঠানো হয় এই দিনে।
অবশ্য উদারতা দিবস পালনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মেলেনি এখনও। এই স্বীকৃতি আদায়ে নিজেদের প্রস্তুত করছে ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস মুভমেন্ট। তাদের আশা, জাতিসংঘের স্বীকৃতি মিললে গোটা বিশ্বে দিনটি উৎসবমুখরতায় পালন হবে। তখন হয়তো এই দিনে আকাশের দিকে চোখ মেলে গুনগুন করে আপনিও গাইবেন-
‘আকাশ আমায় ভরলো আলোয়
আকাশ আমি ভরবো গানে…।‘