বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যানসার নিয়ে যা জানতে হবে

  •    
  • ১০ নভেম্বর, ২০২১ ১৮:৩৫

পুরুষের প্রজননতন্ত্রের অংশ হওয়ার পরেও প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যানসারের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, প্রোস্টেট ক্যানসার ৪০ বছরের বেশি পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে ২০-৩৪ বছর বয়সী পুরুষের মধ্যে টেস্টিকুলার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

পুরুষ জননতন্ত্র সম্পর্কিত প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যানসারকে অনেকেই এক করে ফেলেন। তবে এ দুটি আলাদা রোগের লক্ষণ, ঝুঁকির মাত্রাও আলাদা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মেডিক্যাল ওয়েবসাইট মেডিক্যাল নিউজ টুডেতে রোগ দুটির পার্থক্য ও সচেতনতা সম্পর্কে প্রকাশিত প্রতিবেদন নিউজবাংলার পাঠকদের জন্য অনুবাদ করেছেন রুবাইদ ইফতেখার।

পুরুষের জননতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত অঙ্গ টেস্টিকল (অণ্ডকোষ) ও প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের কাজ ও ভূমিকা আলাদা। তবে দুটিই হরমোন ও সিমেন (বীর্য) উৎপাদনে ভূমিকা রাখে। ফলে, অনেকে এর ক্যানসারকে ‘পুরুষের ক্যানসার’ বলে মনে করেন।

তবে টেস্টিকল ও প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডে ক্যানসারের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য একেবারেই আলাদা।

প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডে জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ক্যানসার সেলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এভাবে প্রোস্টেটে ছড়িয়ে পড়ে ক্যানসার। আমেরিকান পুরুষের মধ্যে ত্বকের ক্যানসারের পর প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। মূত্রথলির ঠিক নিচে কুঁচকির মাঝে প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের অবস্থান। পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরন এই প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে।

প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড থেকে বিশেষ এক ধরনের তরল নিঃসরিত হয়ে শুক্রাণুর সঙ্গে মিশে বীর্য তৈরি করে। এটি প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ) নামের একটি প্রোটিনও তৈরি করে, যা বীর্যকে তরল বানায়। বীর্য উৎপাদন প্রোস্টেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। একইসঙ্গে সঙ্গমের সময় এর পেশীগুলো বীর্যকে মূত্রনালিতে ঠেলে দেয়। এছাড়া প্রোস্টেট টেস্টোটেরনকে জৈবিকভাবে সক্রিয় ডিহাইড্রোটেস্টোটেরনে (ডিএইচটি) রূপান্তরিত করে।

অন্যদিকে টেস্টিকুলার ক্যানসারের ক্ষেত্রে টেস্টিকল বা অণ্ডকোষে ক্যানসার সেল তৈরি হতে শুরু করে। টেস্টিকুলার ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি নয়।

টেস্টিকল বা অণ্ডকোষ পুরুষ জননতন্ত্রের আরেকটি অংশ। পুরুষাঙ্গের নীচে একটি থলেতে থাকা দুটি গোলাকৃতির অঙ্গই হলো অণ্ডকোষ। এগুলো শুক্রাণু ও টেস্টোস্টেরনসহ অন্য পুরুষ হরমোন উৎপাদন করে।

ঝুঁকির মাত্রা

টেস্টিকুলার ক্যানসারের চেয়ে প্রোস্টেট ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব বেশি। দ্য অ্যামেরিকান ক্যানসার সোসাইটির (এসিএস) হিসাবে, প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ আমেরিকান প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত হন। অন্যদিকে টেস্টিকুলার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বছরে সাড়ে নয় হাজারের মতো।

এসিএসের হিসাবে, প্রতিবছর ৩৪ হাজার ১৩০ জন প্রোস্টেট ক্যানসারে মারা যান, আর টেস্টিকুলার ক্যানসারে মারা যান ৪৪০ জন।

সাদৃশ্য

সব ধরনের ক্যানসারই জেনেটিক। এর অর্থ হচ্ছে, জিনগত পরিবর্তনের ফলে স্বাভাবিক কোষগুলো ক্যানসার-কোষ হয়ে ওঠে ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। তবে প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যানসারের প্রাথমিক কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। পরিবারে কারও এই দুই ধরনের ক্যানসারের রেকর্ড থাকলে ঝুঁকির মাত্রা কিছুটা বেশি।

এই ক্যানসার দুটির চিকিৎসা পদ্ধতিও কিছু মিল রয়েছে। যেমন, দুই ক্ষেত্রেই চিকিৎসক সতর্কভাবে অপেক্ষা বা সক্রিয় নজরদারির পরামর্শ দিতে পারেন। সন্দেহজনক পরিস্থিতিতে নিয়মিত চেক-আপের মধ্যে থাকা জরুরি।

টেস্টিকুলার ক্যানসারের প্রধান চিকিৎসা হলো, সার্জারির মাধ্যমে অণ্ডকোষ ফেলে দেয়া। টিউমার ছড়িয়ে না গেলে ও রোগীর স্বাস্থ্য ভালো থাকলে প্রোস্টেট ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রেও সার্জারি একটি ভালো উপায় হতে পারে।

অন্য চিকিৎসা পদ্ধতির মধ্যে আছে কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি। যে সব ক্যানসার তাদের উৎপত্তিস্থল থেকে ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে এ থেরাপিগুলো সফল ভাবে কাজ করতে পারে।

পার্থক্য

পুরুষের প্রজননতন্ত্রের অংশ হওয়ার পরেও প্রোস্টেট ও টেস্টিকুলার ক্যানসারের মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। যেমন, প্রোস্টেট ক্যানসার ৪০ বছরের বেশি পুরুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। তবে ২০-৩৪ বছর বয়সী পুরুষের মধ্যে টেস্টিকুলার ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি।

ঝুঁকি

ঝুলতে না থাকা অণ্ডকোষ টেস্টিকুলার ক্যানসারের জন্য অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত। এ কারণে এক বা উভয় অণ্ডকোষ থলেতে যেতে ব্যর্থ হয়।টেস্টিকুলার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এইচআইভি সংক্রামণ, রোগী দীর্ঘদেহী হওয়া, অণ্ডকোষের উৎসে কারসিনোমা থাকা

বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু জিন মিউটেশন শনাক্ত করেছেন যা বংশ থেকে আসে ও প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন: BRCA1 বা BRCA2 জিনের মিউটেশন।

লক্ষণ

টেস্টিকুলার ক্যানসারের প্রধান উপসর্গ হল অণ্ডকোষে ব্যথাহীন পিণ্ড বা গুটি।অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে আছে- অণ্ডকোষ ফুলে যাওয়া, অণ্ডকোষের থলেতে ভারী অনুভূতি, অণ্ডকোষ বা অণ্ডকোষের থলে বা কুঁচকিতে ব্যথা এবং স্তন টিস্যুর কোমলভাব।

প্রোস্টেট ক্যানসার মূলত প্রস্রাবের অভ্যাসকে প্রভাবিত করে। এ কারণে যে লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে তা হলো, প্রস্রাবে দুর্বল ধারা, ঘন ঘস প্রস্রাব হওয়া, প্রসাবের চাপে রাতে কয়েকবার ঘুম ভাঙা, মূত্রনালী খালি করতে সমস্যা, প্রস্রাব বা স্খলনের সময় ব্যথা কিংবা জ্বলুনি, প্রস্রাব বা বীর্য রক্ত আসা, ফ্যাকাশে গায়ের রঙের মতো রক্তস্বল্পতার উপসর্গ দেখা দেয়া, পিঠ, নিতম্ব বা শ্রোণি অঞ্চল ব্যথা করা।

ডায়াগনোসিস

চিকিৎসক উভয় ক্ষেত্রে শারীরিক পরীক্ষা করতে পারেন, তবে টেস্টিকুলার ক্যানসার নিজে নিজে পরীক্ষা করে শনাক্ত করা সহজ। ক্যানসারের ফলে শনাক্তযোগ্য পিণ্ড বা গুটি তৈরি হয়, এ কারণে নিজে থেকে অণ্ডকোষ পরীক্ষা করা তুলনামূলক সহজ।

উভয় ধরনের ক্যানসারের ক্ষেত্রে রক্ত পরীক্ষায় ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর উপস্থিতি দেখা হয়। টেস্টিকুলার ক্যানসারের ক্ষেত্রে দেখা হয় আলফা-ফেটোপ্রোটিন (এএফপি) ও বেটা-হিউম্যান কোরিওনিক গোনাডোপ্রোটিনে (β-এইচসিজি) উপস্থিতি। অন্যদিকে, প্রোস্টেট ক্যানসারের পরীক্ষায় পিএসএর উপস্থিতি দেখা হয়।

জটিলতা

চিকিৎসা ছাড়া দুই ধরনের ক্যানসারই প্রাণঘাতী। তবে টেস্টিকুলার ক্যানসার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসাযোগ্য ও এতে মৃত্যু হার কম। এসিএসের হিসাবে টেস্টিকুলার ক্যানসারে প্রতি পাঁচ হাজারে এক জন মারা যান।

প্রোস্টেট ক্যানসার আমেরিকান পুরুষের ক্যানসারে মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। ৪১ জনের মধ্যে প্রায় এক জন পুরুষ এতে মারা যাযন। টেস্টিকুলার ক্যানসারের চেয়ে অনেক বেশি পুরুষ প্রোস্টেট ক্যানসারে মারা যাযন, কারণ অনেক বেশি এতে আক্রান্ত হন। তবে প্রোস্টেট ক্যানসারও নিরাময়যোগ্য।

পরীক্ষা পদ্ধতি

পুরুষ নিজেই পরীক্ষা করে টেস্টিকুলার ক্যানসার আছে কিনা সেটি নির্ণয় করতে পারেন। গোসলের পর টেস্টিকুলার ক্যানসার নির্ণয় পরীক্ষা করা উচিত।

এই পরীক্ষায় প্রতিটি অণ্ডকোষে বৃদ্ধাঙুল ও অন্য আঙুল দিয়ে চাপ দিয়ে সাবধানে কোনো পিণ্ড বা গুটি আছে কিনা দেখতে হবে। টিউবের মতো গঠনগুলো খুঁজে বের করে অস্বাভাবিক কিছু আছে কি না সেটি লক্ষ্য করতে হবে। ব্যথা না থাকলেও পিণ্ড বা ফুলে যাওয়া অংশ খুঁজে বের করতে হবে। অণ্ডকোষে অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

নিজে নিজে পরীক্ষার মাধ্যমে প্রোস্টেট ক্যানসার শনাক্ত করা বেশ কঠিন। কারণ এর ফলে ঘটা শারীরিক পরিবর্তন চিকিৎসক ছাড়া বের করা দুঃসাধ্য।

প্রোস্টেট ক্যানসার নির্ণয়ের জন্য কোনো সাধারণ পরীক্ষা পদ্ধতি নেই। তবে কেউ যদি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো লক্ষ্য করেন ও প্রস্রাব করার সময় ব্যথা বা অসুবিধা অনুভব করেন তাহলে চিকিৎসক নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন। এগুলো হলো- ডিজিটাল রেকটাল পরীক্ষা, যেখানে চিকিৎসক মলনালীতে আঙুল প্রবেশ করিয়ে পিণ্ড বা গুটি আছে কিনা পরীক্ষা করেন, পিএসএ টেস্ট যাতে করে রক্তে পিএসএর মাত্রা নির্ণয় করা যায়, নির্দিষ্ট কিছু জিন খুঁজে বের করার জন্য জেনেটিক পরীক্ষা, তবে এটি এখনও ট্রায়াল পর্যায়ে আছে।

প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ

প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে এসিএস কিছু পরামর্শ দিয়েছে। এগুলো হলো, শরীরের ওজন যথাযথ রাখা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, সুষম খাবার খাওয়া, ধূমপান না করা, ফাইভ-আলফা রিডাকটেজ ইনহিবিটর জাতীয় ওষুধ সেবন করা, অ্যাসপিরিন সেবন করা।

চিকিৎসকেরা টেস্টিকুলার ক্যানসার প্রতিরোধের উপায় সম্পর্কে খুব বেশি এখনও জানেন না। এসিএসের মতে, টেস্টিকুলার ক্যানসার প্রতিরোধ করা এখনও সম্ভব নয়।

এ বিভাগের আরো খবর