ভালোবাসার মানুষের হৃদয় জুড়ে থাকার সুযোগ হারিয়ে ফেলার মতো বেদনা আর কি কিছু আছে? প্রিয় মানুষ তাই চোখের সীমার বাইরে চলে গেলেও হৃদয়ের বন্ধনকে আজীবন যত্নে রাখতে চায় মানুষ। আকাঙ্ক্ষা থাকে, দূরে চলে যাওয়া প্রিয় মানুষটি তার মনের গহীনে সঙ্গোপনে আগলে রাখবে অতীতের সুখস্মৃতি। চলে গেলেও ভুলে যাবে না কোনোদিন।
ভুলে যাওয়ার তীব্র বেদনার রং অনেকেই বলেন ‘নীল’, প্রচণ্ড যন্ত্রণায় শরীরের নীলচে আভা থেকেই হয়ত বেদনার এই রং। পশ্চিমা দেশে পথের ধারে ফুটে থাকা নীল রঙা ছোট্ট ঘাসফুল ‘মায়োসটিস’ তাই বেদনার প্রতীক। মনোযাতনার অনুভূতির সমার্থক হয়ে ওঠা এই নীল ফুলটির আরেক নাম ‘ফরগেট মি নট’ বা ‘ভুলো না আমায়’।
আমেরিকার নাগরিকদের কাছে ১০ নভেম্বর একটি বিশেষ দিন। প্রিয়জন বা কাছের মানুষকে ভুলে না যাওয়ার দিন। তারা দিনটির নাম রেখেছে, ‘ফরগেট মি নট ডে’ বা ‘ভুলে না যাওয়ার দিন’। এদিন হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষকে স্মরণ করা হয় সেই ছোট্ট নীল ফুল দিয়ে।
১৯২১ সালের কথা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া বীর যোদ্ধাদের স্মরণে শুরু হয় দিনটির উদযাপন, যার গোড়াপত্তন হয়েছিল বিচারক রবার্ট এস. মার্কসের হাত ধরে। তিনি নিজেও ছিলেন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একজন বীর যোদ্ধা। যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছেন, হারিয়েছেন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, তাদের স্মরণে এ দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে তখন থেকে শুরু হয় ফর গেট মি নট ডে উদযাপন।
যুদ্ধাহত বীরদের জন্য অর্থ সংগ্রহের কথাটাও ভাবলেন বিচারক রবার্ট এস. মার্কস। সিদ্ধান্ত নিলেন সেই নীল রঙা ঘাসফুল বা ‘ফরগেট মি নট’ ফুল বিক্রি করে অর্থাভাবে থাকা প্রবীণ যোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াবেন। এরই ধারাবাহিকতায়, ১৯৪৯ সালে ফরগেট মি নট ফুলটিকে ‘রাজ্য ফুল’-এর স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা।
দেশ ভেদে দিনটি উদযাপনের তারিখ ও উদ্দেশ্যের ভিন্নতা আছে। নিউজিল্যান্ডে আলঝেইমারে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের স্মরণ করা হয় দিনটিতে। আলঝেইমার নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে ২০০৩ সাল থেকে বছরের ৫ ও ৬ জুনকে ফর গেট মি নট ডে হিসেবে পালন করে দেশটি।
ভুল বোঝাবুঝি থেকে দূরে সরে যাওয়া কিংবা ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক জোড়া দিতেও দিনটিকে বেছে নেন অনেকে। তবে যে ঘটনাকে সামনে রেখেই দিনটি উদযাপন করেন না কেন, নীল রঙা ফুলের কথা কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না! কারণ ওই ঘাসফুলের তোড়া জানিয়ে দেয়, আপনাকে কেউ স্মরণ করছেন, কেউ একজন আছেন, যিনি আপনাকে এখনও ভাবেন। যিনি কোনোদিন চান না, আপনিও তাকে ভুলে যান।