যানজট আর পরিবহন-সংকটের ঢাকা শহরে সঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে, হাতে বেশ খানিকটা সময় নিয়েই ঘর ছাড়তে হয়। বিষয়টি নিয়মিত মেনে চলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জামাল হোসেন।
পরিপাটি পোশাকে বুধবার সকালেও রাস্তার ধারে তার অপেক্ষাটি ছিল বাসের জন্য। এমন সময় পাশ দিয়ে হন হন করে হেঁটে যাওয়া এক পথচারী সজোরে গলা খাঁকারি দিয়ে ফুটপাতে ফেললেন একদলা থুথু। পথচারীর এই কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে বিরক্তি ঘিরে ধরে কেতাদুরস্ত জামালকে।
রাজধানীর ফুটপাতে টং দোকানের অভাব নেই। হরহামেশাই দেখা যায়, দোকানের নানা উচ্ছিষ্ট যখন-তখন ছুড়ে ফেলা হচ্ছে রাস্তায়। পথচারীর গায়ে পড়লেও ভ্রূক্ষেপ নেই কারও।
ঢাকায় মোটরবাইকার তো আরও একধাপ এগিয়ে। যানজট এড়াতে যখন-তখন ফুটপাতে নির্বিকার চালিয়ে যান মোটরসাইকেল।
এমন ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে আমাদের চারপাশে। যারা এসব ঘটান, এক কথায় বলা যায়, তাদের ‘কমন সেন্স’ বা ‘কাণ্ডজ্ঞান’ বলে কিছু নেই।
এসব মানুষ অন্তত আজকের দিনটিতে নিজের কিছুটা বদলানোর চেষ্টা করতে পারেন। কারণ, আজ ‘ইউজ ইওর কমন সেন্স ডে’ বা ‘কাণ্ডজ্ঞান খাটানোর দিন’।
কমন সেন্স বা কাণ্ডজ্ঞান আসলে কী? এর ব্যাখ্যায় ন্যাশনাল টুডে ডটকম বলছে, সাধারণ এবং সংবেদনশীল বিষয়ে ব্যবহারিক জ্ঞানই প্রকৃত কাণ্ডজ্ঞান। উদাহরণ হিসেবে তারা বলছে, মাইক্রোওয়েভ ওভেনে ধাতব কিছু দেয়া কিংবা পানির নিচে কী আছে সেটা না জেনেই ঝাঁপ দেয়া হচ্ছে কাণ্ডজ্ঞানের অভাব।
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এসে মানুষের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। এ নিয়ে নানা পোস্ট চোখে পড়ে হরহামেশা। অনেকেই মনে করেন, আজকাল কাণ্ডজ্ঞান মাথায় রাখার পরিবর্তে মানুষ সেটি আটকে রাখছে ঘরের সিন্দুকে।
ন্যাশনাল টুডে ডটকম বলছে, বিষয়টি নিয়ে মানুষ এতটাই উদাসীন যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যালয়গুলোকে পাঠ্যসূচিতে কাণ্ডজ্ঞান উৎসাহিত করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হয়েছে।
আধুনিক সময়ে এসে, যৌক্তিক ও নিরাপদ জীবনযাপনের স্বার্থে যে জ্ঞান আর বিবেচনা বোধ প্রয়োজন, তাকেই ‘কমন সেন্স’ বলা হচ্ছে। সন্দেহ নেই, কাণ্ডজ্ঞান খাটিয়ে চলতে পারলে আপনার পাশের জনই কেবল স্বস্তিতে থাকেন না, আপনিও নানা ঝুটঝামেলা থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিনেতা ও সমাজচিন্তক উইল রজারের জন্মদিন ৪ নভেম্বর। এ দিনটিকে ‘কাণ্ডজ্ঞান খাটানোর দিন’ হিসেবে বেছে নেয়ার কারণ হলো- এই অভিনেতা বলেছিলেন, ‘কমন সেন্স আর নট দ্যাট কমন’ বা ‘কাণ্ডজ্ঞান আর সহজে চোখে পড়ে না’।
তবে দিনটি প্রথম পালন শুরু করেন ক্যারিয়ার মেন্টর, লেখক, মোটিভেশনাল স্পিকার, ব্লগার বাড বিলানিক। কাণ্ডজ্ঞান খাটিয়ে কীভাবে সফল হওয়া যায়, সাফল্যের নানা কৌশল নিয়ে তিনি ১৯টি বই লিখেছেন। তার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রে কাণ্ডজ্ঞান খাটানোর দিনটি প্রথম উদযাপন করা হয় ২০১৫ সালের ৪ নভেম্বর।