বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সেই অচেনা প্রাণীটি খ্যাঁকশিয়াল

  •    
  • ৩ নভেম্বর, ২০২১ ১৫:৫৭

ঢাকা থেকে যাওয়া বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ কামরুদ্দীন রাশেদ বলেন, ‘সরেজমিনে আমরা অনেকটা জায়গাজুড়ে বিভিন্ন প্রাণীর পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছি। এসব এলাকায় ছোট ছোট শিয়াল ও খ্যাঁকশিয়ালের অবাধ বিচরণ আছে। রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা ছোট প্রকৃতির শিয়াল বা খ্যাঁকশিয়াল।’

গুজব নয়, গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে অচেনা প্রাণীর হামলার বিষয়টি সত্য। সেই প্রাণীটি খ্যাঁকশিয়াল বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ কামরুদ্দীন রাশেদ বুধবার বেলা ২টার দিকে নিউজবাংলাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর নিউজবাংলাকে জানান, তারা অভিযান চালিয়ে হামলা চালানোর মতো কোনো প্রাণী পাননি। বিষয়টি গুজব হতে পারে বলে ধারণা ছিল তার।

তবে মঙ্গল ও বুধবারের অভিযান শেষে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, প্রাণীটি খ্যাঁকশিয়াল।

ঢাকা থেকে যাওয়া বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ কামরুদ্দীন রাশেদ বলেন, ‘আমরা এসব এলাকায় সরেজমিন কাজ করেছি। নিহতের পরিবার ও আহতের সঙ্গে একান্তভাবে কথা বলেছি। তা ছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলাসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছি। পর্যবেক্ষণের সময় আমরা আক্রান্তদের ধরন, সময়, প্রাণীর আকার-আকৃতি, আচঁড়ের দাগ ও কামড়ের দাগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাজ করেছি।

‘সরেজমিনে আমরা অনেকটা জায়গাজুড়ে বিভিন্ন প্রাণীর পায়ের ছাপ সংগ্রহ করেছি। এসব এলাকায় ছোট ছোট শিয়াল ও খ্যাঁকশিয়ালের অবাধ বিচরণ আছে। এসব প্রাণীর আধিক্যও আছে। রাজশাহী বন বিভাগের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা ছোট প্রকৃতির শিয়াল বা খ্যাঁকশিয়াল।’

কামরুদ্দীন জানান, এসব এলাকার বেশির ভাগ শিয়ালকে স্বাভাবিক দেখা গেছে। তবে অল্পসংখ্যক শিয়াল জলাতঙ্ক ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এ ঘটনা ঘটছে।

এর আগে রাজশাহীর পরিদর্শক দলের প্রধান জাহাঙ্গীর কবীর বলেছেন, ‘দিনে ও রাতে দুই টাইমে এটা নিয়ে আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি। সঠিক তথ্যটি বের করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন ক্লু দিয়ে প্রাণীটি শনাক্তের চেষ্টা করছি।

‘এলাকায় শিয়ালের সংখ্যা, রাত্রীকালীন সেখানে অন্য প্রাণীর বিচরণ আছে কি না, র‍্যাবিস আক্রান্ত কোনো কুকুর আছে কি না, সেটার উপদ্রব কেমন; সেখানকার মানুষদের মানসিকতা কেমন, তারা যে আতঙ্কের কথা বলছেন, সে ক্ষেত্রে তাদের স্বস্তির বিষয়টিও ভাবতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামবাসীকে যেসব প্রতিরোধ কৌশল ও পরামর্শ দিচ্ছি, তারা তা অবলম্বন করেননি। পরামর্শকে গুরুত্ব দেননি। তারা অনেকটাই অসত্য তথ্যে বিশ্বাসী। এটাকে আমরা গুজব বলতে পারি।’

অচেনা প্রাণী নিয়ে মানুষের চিন্তাধারা, আতঙ্ক ও অন্য প্রাণী হত্যার বিষয়টি একটি ছোট্ট গল্পের মাধ্যমে তুলে ধরেন জাহাঙ্গীর কবীর। তিনি বলেন, ‘চিল পাখি কান ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। এটা শুনেই পাখি ধরতে গেলাম। এখানকার ঘটনাটিও কিছুটা এই গল্পের মতোই ঘটে চলেছে।’

তবে হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে অবাধে বন্য প্রাণী হত্যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যা এই এলাকাগুলোতে ঘটানো হচ্ছে। ডুমুরগাছায় মেছোবিড়াল হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এটা কখনোই কাম্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিযানের সময় সন্ধ্যার দিকে আমরা এক জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে আছি। এ সময় চিল্লাচিল্লি শুনে দৌড়ে সেখানে গেছি। তখন একজন বলেন, ‘সেই প্রাণীটা আমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে।’ এটা শুনে তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘সেই প্রাণী আপনি কীভাবে বুঝলেন?’ তখন তিনি বলছেন, ‘এই তো আমাকে ধাওয়া করছিল। দৌড়ে পালাইছি। আমাকে মেরেই ফেলত।’

এরপর আশপাশে খোঁজাসহ সেখানকার লোকদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেল, ‘লোকটি কিছু না দেখেই চিল্লাইছে। এ ধরনের মানসিক সমস্যার কারণে সেখানে আতঙ্ক বেড়েছে।’

পলাশবাড়ীর হরিনাথপুর, তালুকজামিরা, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি ও কেঁওয়াবাড়ি গ্রামে গত দেড় মাসে নানা সময় ওই প্রাণীটিকে দেখা গেছে বলে দাবি গ্রামবাসীর। এরই মধ্যে হামলায় একজন মারা গেছেন বলে তাদের দাবি। অন্তত ১০ জন জানিয়েছেন যে, তারা ওই প্রাণীর হামলার শিকার হয়েছেন।

অচেনা প্রাণীর আতঙ্কে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছিল শিয়াল। গত কয়েক দিনে গ্রামের লোকজন অন্তত ১০টি শিয়াল মেরেছে। শিয়াল মারতে গিয়ে রোববার দুপুরে একটি মেছোবিড়াল পিটিয়ে মেরেছে একদল যুবক। মৃতদেহ রশিতে বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে উল্লাসও করেছে তারা।

ওই প্রাণীর হামলার শিকার হয়ে যিনি মারা গেছেন বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন, তিনি হলেন হরিনাথপুর গ্রামের উত্তরপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ফেরদৌস সরকার রুকু।

তার মৃত্যুর বিষয়ে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ কামরুদ্দীন রাশেদ বলেন, ‘ইমাম সাহেবের বিভিন্ন চিকিৎসাপত্র ও তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে তার সুচিকিৎসা হয়নি। তা ছাড়া তার চিকিৎসায় অনেক বিলম্ব হয়েছে। অথবা চিকিৎসায় কিছু ভুলের কারণে তিনি মারা গেছেন।’

ঢাকা থেকে যাওয়া বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞ দলে আরও ছিলেন মাহবুব-ই-খোদা জুয়েল ও গাজী সাইফুল তারিক।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে অচেনা প্রাণীর আতঙ্কে পিটিয়ে মারা হয়েছে শিয়াল-মেছোবিড়াল

মাহবুব-এ-খোদা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এটি শিয়ালের প্রজনন সময়। এই সময় অনেক পশু-পাখির গায়ের রঙে কিছুটা পরিবর্তন ঘটে। যা এখানকার শিয়ালের ক্ষেত্রেও হয়েছে। এ জন্য লোকজন আগের দেখা শিয়াল আর এখনকার শিয়ালের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারছে না।’

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন নিউজবাংলাকে জানান, হতাহতের আর্থিক সহযোগিতার জন্য দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর