খুলনায় একটি হলুদ সাপ উদ্ধার করা হয়েছে, যাকে জলঢোঁড়া বলেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, অ্যালবিনো বা লুটিনোর প্রভাবে সাপটির রং পুরোপুরি হলুদ হয়েছে।
আলোর মিছিল নামের একটি পরিবেশবাদী সংগঠন গেল রোববার সাপটি উদ্ধার করে বন বিভাগে হস্তান্তর করেছে।
জলঢোঁড়ার ইংরেজি নাম চেকার্ড কিলব্যাক (Checkered Keelback)। এর বৈজ্ঞানিক নাম Fowlea piscator। এই সাপের গায়ের রং সাধারণত কালো হলুদ সংমিশ্রণের হয়ে থাকে। বাসাবাড়ি, পুকুর, ডোবায় এদের বেশি দেখা যায়। এরা ঝোপঝাড় ও খোলা তৃণভূমিতেও বিচরণ করে থাকে।
সাপটি বর্তমানে খুলনা বন্য প্রাণী রেসকিউ সেন্টারে আছে। সেখানে এটি দেখভাল করছেন বাংলাদেশ অ্যান্টিভেনম গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী গবেষক বোরহান বিশ্বাস রমন। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ব্যতিক্রমী সুন্দর জলঢোঁড়া সাপটির শরীরে কয়েকটি ইনজুরি আছে। শরীর থেকে অনেকগুলো টিকস্ (আঁটালি) ছাড়ানো হয়েছে এবং সাপটাকে কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এর আঁশ বিন্যাস ও মর্ফোমেট্রির মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি এটা জলঢোঁড়া এবং সেক্সিং টেস্ট করে দেখেছি এটা পুরুষ সাপ।’
জেনেটিক ডিজঅর্ডারের (জিনগত ত্রুটি) কারণে সাপটির রং এমন হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জেনোমিক গবেষণার জন্য স্যাম্পল সংগ্রহ করেছি। গবেষণা শেষে বলা সম্ভব হবে এটি অ্যালবিনো না লুটিনো।’
এই গবেষক জানান, প্রাণীদের মধ্যে অ্যালবিনোর প্রভাবে প্রচুর সাদা প্রাণী দেখা গেলেও লুটিনো (হলুদ রং প্রদর্শক) সাধারণ সাপের মধ্যে খুব কম দেখা যায়। হতে পারে অ্যালবিনোর প্রভাব আছে, আবার অ্যালবিনোর মাত্রা কমবেশি হওয়ার কারণে এমন হয়েছে। বিস্তারিত জানতে ডিএনএ টেস্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
লুটিনোর প্রভাবে রং বদলেছে এমন সাপ আগে দেশে পাওয়া যায়নি। এর রং যদি লুটিনোর কারণে বদলায় তবে এটি দেশে প্রথম।
সাপটিকে উদ্ধারকারী পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠন আলোর মিছিলের সভাপতি শেখ তারেক বলেন, ‘গত ৩১ তারিখ আমাদের কাছে খবর আসে খুলনার দীঘলিয়া উপজেলার লাখোহাটি গ্রামের দুই যুবক একটি বিরল প্রজাতির সাপ ধরেছে। দ্রুত উদ্ধার করতে না পারলে তারা মেরে ফেলবে বা পাচার করবে। আমরা সাপটি উদ্ধার করে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করি। বর্তমানে সাপটি চিকিৎসাধীন আছে। সুস্থ হলে বনে ছেড়ে দেয়া হবে।’
সাধারণত জলঢোঁড়া দেখতে এমন হয়। ছবি: সংগৃহীত
খুলনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো নিউজবাংলাকে জানান, অ্যালবিনো অথবা লুটিনোর প্রভাবে রং বদলে যাওয়া সাপের প্রকৃতিতে টিকে থাকা কঠিন। রঙের কারণে খুব সহজে মানুষ এবং শিকারি প্রাণীর নজরে পড়ে। তবে সাপটি সুস্থ হলে ছেড়ে দেয়া হবে।’