বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

অচেনা পশুর আতঙ্কে মারা হচ্ছে শিয়াল

  •    
  • ১ নভেম্বর, ২০২১ ১৯:৪৪

রাজশাহী বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, ‘প্রাণীটিকে খোঁজার চেষ্টা করেছি, কিন্তু সেটিকে দেখতে পাইনি। তাই এটি কোন প্রকৃতির প্রাণী সেটি ট্রেস করা সম্ভব হয়নি। আতঙ্কে পিটিয়ে অন্য প্রাণী হত্যা না করতে গ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর কয়েকটি গ্রামে অচেনা প্রাণীর হামলার আতঙ্কে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে শিয়াল। গত কয়েক দিনে গ্রামের লোকজন অন্তত ১০টি শিয়াল মেরেছেন। আবার শিয়াল মারতে গিয়ে রোববার দুপুরে একটি দেশীয় মেছোবিড়াল পিটিয়ে মেরেছেন একদল যুবক। মৃতদেহ রশিতে বেঁধে গাছে ঝুলিয়ে উল্লাসও করেছেন তারা।

গ্রামবাসীই এই তথ্য জানিয়েছেন নিউজবাংলাকে। এই প্রতিবেদকের কাছে তারাই হত্যা করা প্রাণীর ছবি দিয়েছেন। তারা বলছেন, অচেনা প্রাণীর হামলার আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না অনেকে। এরই মধ্যে হামলায় একজন মারা গেছেন বলে তাদের দাবি। অন্তত ১০ জন জানিয়েছেন যে তারা ওই প্রাণীর হামলার শিকার হয়েছেন। তবে প্রাণীটি কী তা কেউ নিশ্চিত নন।

তারা বলেছেন, প্রাণীটির গায়ের রং লাল, সাদা ও ধূসর। শরীরে এক ধরনের ডোরাকাটা দাগ আছে। সামনের দুই পা আকারে ছোট ও মুখমণ্ডল লম্বা। লেজ আকারে বড় ও মোটা।

পলাশবাড়ীর হরিনাথপুর, তালুকজামিরা, কিশামত কেঁওয়াবাড়ি ও কেঁওয়াবাড়ি গ্রামে গত দেড় মাসে নানা সময় ওই প্রাণীটিকে দেখা গেছে বলে দাবি গ্রামবাসীর।

আতঙ্কে এসব গ্রামের লোকজন অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন, তারা সুরক্ষার জন্য সঙ্গে লাঠি রাখছেন।

তবে স্থানীয়রা জানান, তারা এখন সতর্ক হয়েছেন বলে গত এক সপ্তাহে ওই প্রাণীটিকে কোথাও আর দেখা যায়নি।

ওই গ্রামগুলো শনিবার ও রোববার পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মাছুদার রহমান। রোববারে পরিদর্শনে ছিলেন রাজশাহী বন‌্য প্রাণী ‌ব‌্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কর্মকর্তারা।

তবে তারা কেউই প্রাণীটি শনাক্ত করতে পারেননি।

রাজশাহী বন‌্য প্রাণী ব‌্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর কবীর জানান, গ্রামের চারপাশে ধানক্ষেত ও জঙ্গল থাকায় অচেনা প্রাণীটিকে শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। রোববার দিনভর অভিযান চালিয়েও কোনো হিংস্র প্রাণী চোখে পড়েনি।

জঙ্গলের ভিতর-বাইরে থাকা কয়েকটি গর্ত ও সুড়ঙ্গে শিয়ালও পাওয়া যায়নি।

জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে হতাহতদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রাণীটিকে খোঁজার চেষ্টাও করেছি, কিন্তু সেটিকে দেখতে পাইনি। তাই এটি কোন প্রকৃতির প্রাণী সেটি ট্রেস করা সম্ভব হয়নি।’

আতঙ্কে পিটিয়ে অন্য প্রাণী হত্যা না করতে গ্রামবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশীয় আইন অনুযায়ী বন‌্য প্রাণী আটক বা হত‌্যা করা দণ্ডনীয় অপরাধ। একটি প্রাণীর কারণে অন‌্য প্রাণী হত‌্যা করা প্রাকৃতিক পরিবেশের জন‌্য মারাত্মক ক্ষতিও।’

তিনি জানান, হামলা এড়াতে আগুন জ্বালিয়ে রাখার এবং উচ্চ শব্দ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকতে ও প্রকৃতিকে সংরক্ষণ করতে গ্রামে হ‌্যান্ডবিল ও লিফলেট বিতরণ করেছে বন বিভাগ।

জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মাছুদার রহমান পরিদর্শন শেষে বলেন, ‘বন-জঙ্গল উজাড়ের কারণে আবাস ও খাদ্যাভাব দেখা দেয়ায় বন্য প্রাণী লোকালয়ে ঢুকতে পারে। জলাতঙ্ক রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণীগুলো হিংস্রতা ছড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

প্রায় দেড় মাস ধরে এই গ্রামগুলোতে অচেনা প্রাণীর হামলার বিষয়টি লোকমুখে জেলায় ছড়িয়ে পড়লেও স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ সেখানে যায়নি। এই খবর নিউজবাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন কর্মকর্তারা। তারা হামলার শিকার দাবি করা লোকজনের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসায় সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।

বন বিভাগের সদস্যরা স্থানীয় তালুকজামিরা উচ্চ বিদ‌্যালয় মাঠে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি সচেতনতামূলক ক‌্যাম্পেইনও করেন রোববার। পরে স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মুসল্লিদেরও আক্রমণ প্রতিরোধসহ বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ে নানা পরামর্শ দেন।

পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান নয়ন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বন বিভাগের কর্মীরা প্রাণীটি শনাক্তের জন্য মাঠে কাজ করছেন। আহতদের সরকারিভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। তাদের আর্থিক সহযোগিতার জন্য দপ্তরে আবেদন পাঠানো হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর