এখন ভার্চুয়াল যুগ। আর এ যুগের সমার্থক যেন ‘আগে দর্শনদারি পরে গুণবিচারি’ হয়ে উঠেছে। আপনার সামনে যতই মজাদার খাদ্য থাকুক, হোক তা মাছ-মাংস, পোলাও, কোরমা, কোপ্তা, রসগোল্লা- দেখামাত্রই ঝাঁপিয়ে পড়ে গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করা যাবে না- এমনই যেন নিয়ম। খাবার আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার জন্য ছবি তুলতে হবে।
পেটের ক্ষুধাকে হার মানিয়ে দেয় চোখের ক্ষুধা। ছবি তোলা ও আপলোড দেয়ার উদ্দেশ্য হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাক্টিভ থাকার ইঁদুর দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া।
সম্প্রতি এক গবেষণায় মজার একটি বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানাচ্ছেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘন ঘন খাবারের ছবি পোস্ট করলে পোস্টদাতার ওজন বেড়ে যেতে পারে।
স্মার্টফোনের ক্যামেরা ফিচারে বিভিন্ন ফিল্টার থাকে। এ ছাড়া ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি আপলোড করার ক্ষেত্রেও নানা ফিল্টার অপশন পাওয়া যায়। এসব ব্যবহার করলে খাবারের ছবি তুলনামূলক বেশি সুন্দর আসে। এই ব্যাপারটি একজন মানুষের চোখের ক্ষুধা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। ওদিকে চোখের ক্ষুধার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে মনের ক্ষুধা। এর মধ্য দিয়ে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়।
ধরা যাক, এ যুগের একজন মানুষের সামনে সব পছন্দের খাবার রয়েছে। পেটে বেশ ক্ষুধাও আছে। কিন্তু আজকাল যা হয়, দেখা যায় সেই খাবারটি পরিবেশন করামাত্র না খেয়ে ওই মানুষটি আগে ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
পরবর্তী সময়ে সেই ছবিগুলোতে ফিল্টার দিয়ে এডিট করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতে গিয়ে অনেক বাড়তি সময় খরচ হয়। আর এই সময়ের ভেতর সেকেন্ড ক্রেভিং (দ্বিতীয়বারের মতো ক্ষুধা) শুরু হয়ে যায়। ফলে খাবার গ্রহণের পরিমাণও বেড়ে যায়। যার প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর। এভাবে চলতে চলতে কোন দিক দিয়ে ওজন বাড়তে থাকে, সে খেয়াল থাকে না।
এই যুক্তির স্বপক্ষে জর্জিয়া সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রায় ১৫০ জন শিক্ষার্থীর ওপর একটি পরীক্ষা চালান। দলটিকে প্রথমে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। প্রথম দলকে স্বাভাবিকভাবেই খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যদিকে অন্য দলটিকে বলা হয় আগে সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য ছবি তুলে সেগুলো আপলোড করতে এবং এরপর খাওয়া শুরু করতে।
দেখা যায়, যে দলটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড করে তাদের খাওয়ার পরিমাণ স্বাভাবিকভাবে খেয়ে উঠে যাওয়া দলটির তুলনায় বেশি ছিল।