ভিগান শব্দটিকে বাংলায় প্রকাশ করতে গিয়ে ভালোই বেগ পেতে হচ্ছে। ধরেন, শাকসবজি বাদে মাছ, মাংস কিছুই খান না আপনি। তার মানে সহজ, আপনি নিরামিষভোজী।
আপনি যখন মাছ-মাংসও বাদ দিলেন, আবার দুধ-ডিম না খাওয়ারও পণ করেছেন, শুধু তাই নয়, দুধ-ডিমের তৈরি কোনো খাবারই খাবেন না, তখনই আপনি নিরামিষভোজীদের চেয়েও একধাপ ওপরে। তখন আপনাকে ডাকা হবে ‘ভিগান’।
নিত্যদিনের জীবনে যারা এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলেছেন, আজকের দিনটি তাদের। কারণ প্রতিবছর ১ নভেম্বর পালিত হয় বিশ্ব ‘ভিগান দিবস’ হিসেবে।
ভিগানিজম চর্চাকারীরা বলছেন, এই খাদ্যাভাসের ভালো দিক হলো, আপনি নিজেকে রোগমুক্ত রাখতে পারবেন। নিরামিষ খাবার আপনার শরীরে জোগাবে বেশি পরিমাণ তন্তু বা আঁশ (ফাইবার) আর ন্যূনতম কোলেস্টেরল, যা সুস্থ রাখে মানবশরীরের হৃদযন্ত্রকে। রক্তের চাপ থাকবে নিয়ন্ত্রিত আর মুটিয়ে যাওয়ায় থাকবে না কোনো ভয়।
ভিগানরা মনে করেন, মানুষের এই চর্চার জন্য প্রাণীরা তাদের ধন্যবাদ বার্তা পাঠাতে না পারলেও ঠিকই ধন্যবাদ জানায়। আর প্রাণিপ্রেমীদের কাছে ভিগানরা হলেন পরম বন্ধু। প্রাণিজগৎ রক্ষায় তারা রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।
এদিন বিশ্বজুড়ে ভিগান সংগঠনগুলো সচেতনতা বাড়াতে গ্রহণ করে নানা পদক্ষেপ। যুক্তরাজ্যে সাধারণ মানুষের জন্য তারা শিক্ষামূলক কর্মসূচির পাশাপাশি আয়োজন করে কর্মশালার। ভিগানিজমকে প্রতিদিনের যাপনে যুক্ত করতে অন্তত ১ নভেম্বর নিরামিষভোজী হয়ে প্রাণিজ খাবার বাদ দিতে বিশ্ববাসীর কাছে আকুতি জানান তারা।
প্রাণিজ বাদ দিয়ে শুধু উদ্ভিজ খাবার গ্রহণের চিন্তা নিয়ে ১৯৪৪ সালের নভেম্বরে প্রতিষ্ঠিত হয় যুক্তরাজ্য ভিগান সোসাইটি। ৫০ বছর পর ১৯৯৪ সালে নিজেদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করে সংগঠনটি। সেদিন ১ নভেম্বরকে বিশ্ব ভিগান দিবস হিসেবে পালনের দাবি তোলেন সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট। সেই থেকে এই দিনটি বিশ্ব ভিগান দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে দেশে দেশে।
সংগঠনটি বলছে, দিনটি উদযাপনের প্রধান কারণ প্রাণীর জন্য ভালোবাসা। পশুজাত পণ্যের সংখ্যা কম মানে গ্রিন হাউস গ্যাসের উৎপাদনও কম, আর গোটা বিশ্বের জন্য মঙ্গল। সেই সঙ্গে প্রাণিজ পণ্য গ্রহণ না করা শরীরের জন্যও ভালো। ‘ইটস আ উইন-উইন-উইন’।
আনুমানিক ২ হাজার বছর ধরে মানবসমাজে এই চর্চার সন্ধান পেয়েছেন গবেষকরা। তবে ৫০০ বছর ধরে এই চর্চা গুরুত্ব পেয়েছে। প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে গ্রিক দার্শনিক ও গণিতবিদ পিথাগোরাস যখন ভিগানিজমকে নিজের জীবনের অংশ করে নিলেন, তার দেখাদেখি আরও অনেকে উজ্জীবিত হয়েছিলেন।
গৌতম বুদ্ধের অনুসারীদের অনেকে ভেগানিজম চর্চা করেন। কারণ, ‘প্রাণী হত্যা মহাপাপ’ বুদ্ধের মূল বাণীর একটি।
দিন দিন বাড়ছে ভিগানদের সংখ্যা। পরিবেশ বাঁচানোর আর জীববৈচিত্র্য রক্ষার চিন্তা যাদের ভাবিয়ে তুলছে, তারাই ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে ভিগানদের দলে। লাইফস্টাইলবিষয়ক ম্যাগাজিন ভিওইউ জানিয়েছে, বিশ্বে ভিগানদের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি। দিন দিন এই সংখ্যা বাড়ছে বলেও দাবি করেছে ম্যাগাজিনটি।
ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড-এর গবেষণা তুলে ধরে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, পৃথিবী নামের গ্রহের ওপর প্রভাব কমাতে হলে ভিগানিজম হলো ‘একমাত্র বৃহত্তম উপায়’।