বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৫০ বছরে সংকুচিত হয়েছে পদ্মা, কমেছে ইলিশ

  •    
  • ২৯ অক্টোবর, ২০২১ ১০:০৮

গবেষকদের মতে, নদীর গতি পরিবর্তনের সঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম-বেশি হওয়া ও পলি জমে যাওয়ার কারণে পদ্মায় এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মানবসৃষ্ট নানা কারণ বিশেষ করে অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং দখল-দূষণ পদ্মা নদীকে পরিবেশগতভাবে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে।

৫০ বছর ধরে স্থানে স্থানে সংকুচিত হয়েছে পদ্মা নদী। বেড়েছে নদীর ভাঙন। নদীর পরিবেশগত পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে ইলিশ উৎপাদনেও।

দেশের ৬ গবেষকের যৌথ গবেষণায় মিলেছে এই তথ্য।

আমেরিকান জার্নাল অব ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড অ্যানথ্রোপজেনিক ইন্টারফিয়ারেন্স ফর দ্য মরফোলজিক্যাল চেঞ্জেস অব দ্য পদ্মা রিভার ইন বাংলাদেশ’ নামের এই গবেষণা প্রতিবেদন।

এতে পদ্মার বৈশিষ্ট্যের ব্যাপক পরিবর্তনের বেশ কিছু কারণ শনাক্ত করেছেন গবেষকরা। তারা জানিয়েছেন, অতিবৃষ্টি, উষ্ণায়ন, পলির মাত্রা বৃদ্ধি ও দখল-দূষণে পদ্মা তার চিরচেনা রূপ হারিয়ে ফেলছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৬ জন গবেষক যৌথভাবে এই গবেষণাটি করেন।

এ দলের প্রধান গবেষক বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম। অন্যরা হলেন ফিশারিজ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাইজার আহমেদ সুমন, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, চাঁদপুরে অবস্থিত মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ইলিশ জোরদারকরণ প্রকল্পের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবুল বাশার, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান মিলন ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সিরাজুম মুনীর।

গবেষকদের মতে, নদীর গতি পরিবর্তনের সঙ্গে তাপমাত্রার পরিবর্তন, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম-বেশি হওয়া ও পলি জমে যাওয়ার কারণে পদ্মায় এখন আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। মানবসৃষ্ট নানা কারণ বিশেষ করে অবকাঠামোগত প্রকল্প এবং দখল-দূষণ পদ্মা নদীকে পরিবেশগতভাবে ধ্বংসের মুখে নিয়ে গেছে।

অধ্যাপক কাইজার আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, ২০১৮ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় তিন বছর ইলিশ উৎপাদনের অভয়াশ্রম পদ্মা নদীর বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। গবেষণাটি করতে গিয়ে আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণে ১৯৬৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরের তথ্যও পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে বাংলাদেশের ২১টি আবহাওয়া অফিস থেকে।

তিনি জানান, গবেষণায় দেখা গেছে যে ৫০ বছরে পদ্মা নদীর বৈশিষ্ট্যে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। ইলিশের উৎপাদন যে হারে বাড়ার কথা ছিল, সে হারে তো বাড়েনি, বরং কমেছে। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতেও দেখা গেছে, এ নদীর চ্যানেল অস্বাভাবিক হারে পরিবর্তিত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে জোয়ারের উচ্চতা থাকে বেশি। একই সঙ্গে উজান থেকে নিচের দিকে পানির প্রবাহও বেশি থাকে। সামনের দিনগুলোতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়লে বন্যার পানির তীব্রতা ও উচ্চ তাপমাত্রার পরিবর্তনের কারণে উজানের পানিপ্রবাহেও পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। একই সঙ্গে পলি জমা ও পাড় ক্ষয়ের কারণে বন্যার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

গবেষক দলের আরেক সদস্য ইয়াহিয়া মাহমুদ জানান, মাছের বংশ বিস্তারে তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মাছের ডিম ছাড়ার সময় তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে। এর মধ্যে সামান্যতম তারতম্য হলে তা মাছের বংশবিস্তারে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

তিনি জানান, দখল-দূষণে পদ্মা ধ্বংসের মুখে। এ নদীতে ভাঙনের মাত্রা আগের চেয়ে বেড়েছে, যা নদীতীরবর্তী জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। স্থানে স্থানে নদী সংকুচিত হয়ে পড়ায় মাছের পরিমাণ ক্রমেই কমেছে।

গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়ার পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ৫০ বছরে বৃষ্টিপাত ১৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বেড়েছে। বর্তমান সময়ে জুন-জুলাইয়ে বৃষ্টিপাত না হয়ে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে হচ্ছে। আগে এই মাসে কখনও বৃষ্টি হতো না।

‘চাপাইনওয়াবগঞ্জ থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত কখনও নদীর ডান পাশে আবার কখনো বাম পাশের পালির পরিমাণ কমছে-বাড়ছে। এজন্য নদীর বিভিন্ন অংশে নিয়মিত ভাঙন দেখা দেয়। নদীর হার্ডিঞ্জ সেতুর পর থেকে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে শাখা নদীর মতো হয়েছে। ১৯৮০ সালের দিকে এই অংশটুকু একত্রে থাকলেও এখন আর আগের অবস্থানে নেই। নদীর গতিপথ ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।’

অধ্যাপক আজহারুল আরও বলেন, ‘নদীর অন্যতম প্রধান মাছ ইলিশের আবাসস্থল ও মাছকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের জীবনযাত্রাও বিশ্লেষণ করা হয়েছে গবেষণায়। পদ্মা মূলত সর্পিল নদী, একেঁবেঁকে চলাই এর প্রধান কাজ। তবে আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং নদীর ক্ষয় ও পলি জমার কারণে এটি অনেকটা চুলের বিনুনির আকার ধারণ করেছে, অর্থাৎ অনেক শাখা নদী সৃষ্টি হয়েছে।

‘বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। ভৌগোলিক নির্দেশক অর্থাৎ জিআই পণ্য হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত ইলিশ। ইলিশ উৎপাদনেও বাংলাদেশ পৃথিবীতে প্রথম, কিন্তু এখন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এ উৎপাদন ধরে রাখা।’

আজহারুল জানান, যে হারে পদ্মা নদী পরিবর্তিত হচ্ছে তা চলতে থাকলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে ইলিশ উৎপাদনের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। এ কারণে পদ্মা ও ইলিশ উৎপাদনে অন্য নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে।

এ বিভাগের আরো খবর