বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

শিশুদের বোঝার চেষ্টা করুন

  • সানজিদা জামান মৌলি   
  • ২৩ অক্টোবর, ২০২১ ১৪:০১

একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, ওদের সমস্যা যতই ছোট মনে হোক না কেন, এখন যদি ওরা এই ছোট ছোট সমস্যাগুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার  করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে সিরিয়াস কোনো সমস্যাও শেয়ার করতে চাইবে না। মনে সংশয় কাজ করবে।

ধরুন খেলতে খেলতে হঠাৎ আপনার শিশুর সব থেকে পছন্দের খেলনাটা হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেল, এরপর শুরু হলো বাড়ি মাথায় তুলে কান্না। অথবা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাইরের অস্বাস্থ্যকর কোনো খাবার খাওয়ার জন্য শুরু করল জেদ, যা আপনি হাজার চেষ্টার পরও কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছেন না। একটু চিন্তা করে দেখুন তো আপনার প্রথম পদক্ষেপ কী হবে?

হয়তো বোঝাবেন একটা খেলনা ভেঙে যাওয়াতে এত কাঁদতে হয় না। এমন আরও অনেক খেলনা আছে যেগুলো নিয়ে সে খেলতে পারবে কিংবা রাস্তার খাবারগুলো স্বাস্থ্যকর নয়। বাসায় তাকে আরও মজাদার খাবার বানিয়ে দেয়া হবে।

বারবার বোঝানোর পরও যদি তার জেদ না কমে তাহলে হয়তো একটু জোড় গলায় তাকে থামতে বলবেন। তবুও যদি কাজ না হয় তাহলে হয়তো একপর্যায়ে আপনি নিজেই বিরক্ত হয়ে যাবেন। হাল ছেড়ে দেবেন। ভাবতে থাকবেন আপনি একজন ব্যর্থ অভিভাবক যে কি না নিজের বাচ্চার অহেতুক জেদটা পর্যন্ত সামলাতে পারে না। কিন্তু একটু ভেবে দেখেছেন, শিশুরা যখন জেদ করে অথবা খুব বেশি কষ্ট পায় তখন তার ভেতরে ঠিক কী কাজ করে এবং কেনইবা কোনো ধরনের কথা দিয়ে তাদের শান্ত করা যায় না?

বৈজ্ঞানিকভাবে যদি এর ব্যাখ্যাটা খুঁজে দেখা যায় তাহলে ব্যাপারটা পানির মতো পরিষ্কার। আসলে মানুষের মস্তিষ্কের তিনটা ভাগ বা পার্ট আছে।

১. প্রিমিটিভ পার্ট

২. লজিক্যাল পার্ট

৩. ইমোশনাল পার্ট

আমরা যখন খুব রেগে যাই বা খুব কষ্ট পাই, তখন আমাদের ব্রেইনের প্রিমিটিভ পার্টটা সচল হয়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের মস্তিষ্ক আর কিছু চিন্তা করতে চায় না। আমাদের চিন্তাশক্তি ঠিক তখন সচল হয় যখন আমাদের লজিক্যাল পার্ট সচল হয়। অর্থাৎ হুট করে রেগে গেলে, উত্তেজিত হয়ে গেলে কিংবা অত্যন্ত কষ্ট পেলে আমাদের চিন্তাশক্তি হ্রাস পায়।

প্রিমিটিভ পার্ট নিষ্ক্রিয় হওয়ার পর আমাদের লজিক্যাল পার্ট সচল হয়, সঙ্গে আমাদের চিন্তাশক্তিও ফেরত আসে। একইভাবে বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও তাই। শিশু যখন খুব বেশি জেদ করা শুরু করে, কাঁদতে থাকে তখন তার মস্তিষ্ক আমাদের সহজ কথাগুলোও গ্রহণ করতে পারে না। তখন সে কেবল তার ভাঙা খেলনার জন্য কষ্ট পেতে থাকে অথবা বারবার রাস্তার সেই অস্বাস্থ্যকর খাবারটাই খেতে চায়। আমাদের হাজার বলার পরও সে বুঝতে পারে না কেন তাকে জেদ করতে মানা করা হচ্ছে। তাহলে সেই ক্ষেত্রে আমরা কী করবো? বাচ্চা যা চাইবে তাই দিয়ে দেব?

না! আমরা তাকে কাছে টেনে নেব। জড়িয়ে ধরে তাকে বলব ‘আসলেই তো খাবারটা অনেক টেস্টি মনে হচ্ছে’ কিংবা ‘ছোটবেলায় আমার খেলনা ভেঙে গেলে আমিও এভাবেই কাঁদতাম’। এর মাধ্যমে আমরা ওকে বুঝালাম যে আমরা ওর কষ্ট, রাগ কিংবা জেদটা অনুভব করতে পারছি। এখন ও নির্দ্বিধায় ওর মনের কথাটা আমাদের জানাতে পারে। এতে করে সে আমাদের বিশ্বাস করবে, তার মনের কষ্ট, রাগ বা জেদটা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাইবে।

একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, ওদের সমস্যা যতই ছোট মনে হোক না কেন, এখন যদি ওরা এই ছোট ছোট সমস্যা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে সিরিয়াস কোনো সমস্যাও শেয়ার করতে চাইবে না। মনে সংশয় কাজ করবে। আমাদের বিশ্বাস করতে পারবে না।

সাধারণত মস্তিষ্কের লজিক্যাল পার্ট সচল হতে ৫ মিনিট কিংবা ১ ঘণ্টা, আবার কখনও কখনও ১ দিনও লাগতে পারে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন, খেয়াল রাখুন, জড়িয়ে ধরে ওর মনের কথাগুলো শুনুন। যখন মনে হবে ও আপনার কথাগুলো গ্রহণ করার মতো অবস্থায় আছে, আস্তে আস্তে একটা-দুইটা কথা দিয়ে শুরু করুন। যদি দেখেন সে বোঝার চেষ্টা করছে, তাহলে এই সুযোগে কেন রাস্তার খাবারটা আপনি ওকে দিতে চাইছেন না, সেটা বোঝান। দেখবেন ও আপনাকে বোঝার চেষ্টা করছে, ঠিক সেভাবেই যেভাবে কিছুক্ষণ আগে আপনি ওকে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। দেখবেন যতটা সময় নিয়ে আপনি ওকে বোঝার চেষ্টা করবেন ঠিক ততটাই ও আপনার ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠবে।

শুধু শিশুদের আবেগকে ছোট করে দেখার কারণেই পরবর্তী সময়ে তারা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে কিছু শেয়ার করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। এভাবেই আস্তে আস্তে তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে এবং আমরা এই দূরত্বকে নাম দিই ‘জেনারেশন গ্যাপ’!

কাজেই একটু সহানুভূতিশীলতার সঙ্গে ওদের আবেগকে বোঝার চেষ্টা করুন।

এ বিভাগের আরো খবর