অনেক মা-বাবার অভিযোগ, সন্তান তাদের কথা শুনছে না। দিন দিন আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার হঠাৎ করেই সন্তানের জেদ প্রচণ্ড বেড়েছে কিংবা মা-বাবার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। এটি দুশ্চিন্তা করার মতোই ব্যাপার। কেননা এর ফলে শিশুরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। তবে এর সমাধান রয়েছে। অভিভাবকরা যদি একটু সাবধানে সেগুলো খেয়াল করেন, তাহলে এই সমস্যার মুখে পড়তে হবে না।
নিজের ভুল বুঝতে শিখুন
অনেক মা-বাবাই বুঝতে চান না যে তাদের দ্বারাও ভুল হতে পারে। তারা মনে করেন সন্তানই সব সময় ভুল করে। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কোনো মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে না। মা-বাবার উচিত তাদের ভুল বুঝতে শেখা এবং তা নিয়ে সন্তানের সঙ্গে কথা বলা।
আপনার ভুলের জন্য সন্তানের কাছে ক্ষমা চাইতে কার্পণ্য করবেন না। তাকে বোঝান ভুলটির জন্য আপনি অনুতপ্ত। এতে আপনার আর সন্তানের মধ্যে তৈরি হওয়া ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটে সম্পর্ক আরও সতেজ হয়ে উঠবে।
সবকিছু বয়স দিয়ে বিবেচনা করবেন না
অনেকে মনে করেন, বয়সে বড় বলেই তারা সব সময় সঠিক। এটি একেবারেই অনুচিত। সন্তানের মতামতকে গুরুত্ব দিতে শিখুন। সন্তানের ওপর সব সময় নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেবেন না। তার মতামতটাও শুনুন। যেকোনো মতামতে যুক্তিকে প্রাধান্য দিন। বয়সে ছোটো হলেও যে কেউ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এটি বুঝতে শিখুন। তাকে আলাদা সত্তার মানুষ হিসেবে মানতে শিখুন এবং তার পছন্দ-অপছন্দের গুরুত্ব দিন।
প্রশংসা করার অভ্যাস করুন
আপনার সন্তান যখন কোনো ভালো কাজ করবে তার প্রশংসা করুন। কাজটি করতে ভালোবাসলে তাকে উৎসাহিত করুন। পারলে কাজের জন্য পুরস্কৃত করুন। এর ফলে তার আত্মবিশ্বাস যেমন বাড়বে, তেমনি আপনার প্রতি শ্রদ্ধাও বাড়বে।
নিজের অবস্থান সম্পর্কে পরিষ্কার থাকার সুযোগ দিন
ছেলে-মেয়েরা বড় হতে হতে মিথ্যা বলা শিখবে, এটা স্বাভাবিক। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে মা-বাবার সঙ্গে দূরত্ব। সন্তান যখন আপনার সঙ্গে কোনো কিছু শেয়ার করতে সংকোচ বোধ করবে তখন মাঝেমধ্যে নিজের ভুলটি ঢাকতে সে মিথ্যা বলবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আগেই তাকে নিজের ভুল স্বীকার করতে শেখান। তার অবস্থান সম্পর্কে সব সময় পরিষ্কার থাকার সুযোগ দিন।
সঠিক-ভুল নিয়ে উগ্র হবেন না
সন্তান ভুল করলে তার ওপর ক্ষেপে যাওয়া অস্বাস্থ্যকর। সে কোনো ভুল করলে সময় নিন। তার সঙ্গে কথা বলুন। সে যা করেছে তা যে ভুল, সেটি বোঝাতে চেষ্টা করুন। এতে সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে এবং পরবর্তী সময়ে একই ভুল করার আগে বুঝতে পারবে যে এটি করা ঠিক নয়।
পর্যাপ্ত সময় দিন
ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে সন্তানের কাছ থেকে মা-বাবার আদর-স্নেহ কেড়ে নেবেন না। তাকে পর্যাপ্ত সময় দিন। খেয়াল রাখুন সে কী করছে, কাদের সঙ্গে মিশছে। আপনার সময়ের অভাবে সে খারাপ পথে চলে যেতে পারে।
সন্তানের বন্ধু হয়ে উঠুন
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। ছুটির দিনে একসঙ্গে বাইরে ঘুরতে যান। বাসায় নিজ হাতে রান্না করে খাওয়ান। মন দিয়ে তাদের কথা শুনুন। একসঙ্গে খেলাধুলা করুন। সন্তানকে আয়ত্তে আনতে হলে অবশ্যই তাদের বুঝতে হবে, বকাঝকা করে কঠোর হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। এতে হীতে বিপরীত হয়।