বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে প্রায় দুই বছর ধরে করোনাভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণ দেখা যায়। বাংলাদেশ, ভারত, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ব্রাজিলের লাখ লাখ মানুষ এ ভাইরাসে প্রাণ হারান।
করোনা ঠেকাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, মডার্না, সিনোফার্মসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান করোনা প্রতিরোধী টিকা উৎপাদন করছে। মানুষও করোনামুক্ত হতে টিকা নিচ্ছেন।
তবে অনেকে নানা কারণে করোনার টিকা নিতে রাজি নন। করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ও টিকা নিতে বাধ্য করতে এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা নেয়ার সনদ বা পাস দেখানো বাধ্যতামূলক করেছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ইতালিও।
চলতি বছরের ৬ আগস্ট থেকে রেস্তোরাঁ বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যেতে হলে প্রবেশপথে নাগরিকদের ‘গ্রিস পাস’ দেখানোর নিয়ম করে ইতালি সরকার।
ওই গ্রিন পাসে টিকা নেয়া হয়েছে বা করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে, তার উল্লেখ থাকবে। গ্রিন পাসটি কাগজ বা ডিজিটাল ফরমেটে হতে পারে।
তবে কাগজ বা ডিজিটাল ফরমেটে টিকা নেয়ার প্রমাণ দেখাতে মন থেকে সায় পাচ্ছিলেন না ইতালির রেজিও কালাব্রিয়া শহরের ২২ বছরের শিক্ষার্থী আন্দ্রিয়া কোলোনেত্তা। টিকা নেয়ার প্রমাণ প্রশাসনকে ভিন্নভাবে দেখাতে চান তিনি। কী করা যায় ভাবতে ভাবতে একপর্যায়ে অভিনব চিন্তা মাথায় খেলা করে তার।
টিকা নেয়ার প্রমাণ হিসেবে টিকা সনদের কিউআর কোড নিজের বাহুতেই ট্যাটু করান কোলোনেত্তা।
কুইক রেসপন্স কোড বা সংক্ষেপে কিউআর কোড অনেকটা বার কোডের মতো কাজ করে। এর মাধ্যমে ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এক ডেটা সিস্টেম থেকে অন্য ডেটা সিস্টেমে স্থানান্তর করা যায়।
করোনা মহামারিকালে ভাইরাসের সংক্রমণ পর্যবেক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কিউআর কোড। মানুষের চলাচল এই কোডের মাধ্যমে শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
কোলোনেত্তা এমন এক ট্যাটু করাতে চাইছিলেন, যা একই সঙ্গে তাকে যেকোনো সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে সহায়তা করবে।
ইতালিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কোরিয়েরে দেলা কালিব্রিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, কোলোনেত্তার ট্যাটু করানোর ভিডিও টিকটকে বেশ জনপ্রিয় হয়। তার ভক্তরা মনোযোগ দিয়ে শুধু ট্যাটু করানোর ভিডিওই দেখেননি, একই সঙ্গে ট্যাটু আসলেই কাজ করে কি না, সেই পরীক্ষাও তারা আগ্রহের সঙ্গে দেখেন।
কোলোনেত্তার বাহুর ট্যাটু ডিজাইন করেন গ্যাব্রিয়েল পেলেরোন। তিনিই ভিডিওগুলো টিকটকে পোস্ট করেন।
ট্যাটুর কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হচ্ছে, এমন এক ভিডিওতে দেখা যায়, কোলোনেত্তার বাহুর ট্যাটুর ওপর একটি স্মার্টফোন ধরার সঙ্গে সঙ্গে কিউআর কোডের অপটিক্যাল স্ক্যানার তা চিনতে পারে।
আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, কিউআর কোডটি কাজ করে কি না, তা দেখতে কোলোনেত্তা ও তার বন্ধুরা ফাস্টফুডের দোকান ম্যাকডোনাল্ডসের এক শাখায় যান। দোকানটির প্রবেশপথে নিরাপত্তাকর্মী কোলোনেত্তার বাহুর কিউআর কোড সফলভাবে স্ক্যান করেন।
কোলোনেত্তা বলেন, ‘বাহুতে কিউআর কোড ট্যাটু করার চিন্তা নিশ্চিতভাবেই মৌলিক। আমি নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমার শরীরে অন্য ট্যাটুও রয়েছে। তা সত্ত্বেও কিউআর কোডের ট্যাটু দেখে আমার পরিবারের সদস্যরা আশ্চর্য হয়।
‘সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আমার বাবা ইন্টারনেট থেকে আমার কিউআর কোড ট্যাটু করার খবর পান। তিনি আমাকে অবশ্য কম আবেগপ্রবণ হওয়ার পরামর্শ দেন।’
কোলোনেত্তা জানান, করোনা টিকার দুটি ডোজই নিয়েছেন তিনি। কেউ কেউ তার এই ট্যাটুকে ব্যঙ্গ করলেও টিকটক ও ইনস্টাগ্রামে এ জন্য বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি।